ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার স্বীকৃতি

জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ পুরস্কার পেলেন শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ পুরস্কার পেলেন শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সুদূরপ্রসারী উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘের ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছর ‘পলিসি লিডারশিপ’ ক্যাটাগরিতে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক এ সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নিউইয়র্কে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এ সম্মানজনক পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বীকৃতিস্বরূপ আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশা করা হচ্ছে, ওই ক্যাটাগরিতেও বাংলাদেশ পুরস্কৃত হবে। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচীর নির্বাহী পরিচালক অচিম স্টেইনার এ খবর জানিয়ে বলেছেন, বেশ কয়েকটি উদ্ভাবনীমূলক নীতিগত পদক্ষেপ এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাকে বাংলাদেশ তার উন্নয়নের মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। আর সে কারণেই এ পুরস্কার। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেনও এ পুরস্কার অর্জনের কথা নিশ্চিত করেছেন। আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অর্জন আগে থেকেই জাতিসংঘে প্রশংসিত। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দফতরে বাংলাদেশের অর্জনগুলো আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দিকগুলো তুলে ধরে রিপোর্ট জমা দেয়া হয়। তারই ভিত্তিতে নেতৃত্বের ক্যাটাগরিতে এ চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কারণে গুরুত্বপূর্ণ আইটিইউ পুরস্কারটিও পেতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরস্কারের কথা জানিয়ে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচীর (ইউএনইপি) একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশগতভাবে ‘নাজুক অবস্থায় থাকা’ বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ‘সামগ্রিক পদক্ষেপের স্বীকৃতি’ হচ্ছে এ পুরস্কার। পরিবেশ নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর চারটি ক্যাটাগরিতে ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার দিয়ে আসছে ইউএনইপি। চলতি বছর শেখ হাসিনা ছাড়াও ‘ইনসপিরেশন এ্যান্ড এ্যাকশন’ ক্যাটাগরিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বন্যপ্রাণী রক্ষাকর্মীদের দল ব্ল্যাক মামবা এপিইউ, ‘সায়েন্স এ্যান্ড ইনোভেশন’ ক্যাটাগরিতে ন্যাশনাল জিউগ্রাফিক সোসাইটি এবং ‘এন্টারপ্রেনারিয়াল ভিশন’ ক্যাটাগরিতে ব্রাজিলের প্রসাধনী প্রস্তুতকারক কোম্পানি নেটুরা এ পুরস্কার পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের ফেসবুকে দেয়া ইউএনইপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের অন্যতম স্বল্পোন্নত দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিনিয়োগ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ।’ ইউএনইপির নির্বাহী পরিচালক অচিম স্টেইনারকে উদ্ধৃত করে এতে বলা হয়, বেশ কয়েকটি উদ্ভাবনমূলক নীতিগত পদক্ষেপ এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ তার উন্নয়নের মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। জলবায়ু অভিযোজন কর্মসূচীর অগ্রগামী বাস্তবায়নকারী এবং অভিযোজন নীতির পক্ষের বলিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে শেখ হাসিনা অন্যদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। এদিকে চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ পুরস্কারের সাইটেশনে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্রাটিজি এ্যান্ড এ্যাকশন প্লান-২০০৯’ এর উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম উন্নয়নশীল দেশ; যেখানে এ ধরনের সমম্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে নিজস্ব তহবিল ব্যবহারে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে। ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এ তহবিলে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনকে দেশে জাতীয় অগ্রাধিকার ইস্যু এবং একই সঙ্গে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে জোরালো ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নেতৃত্ব এবং দূরদৃষ্টি দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সেপ্টেম্বরের শেষভাগে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলÑএসডিসি) এবং ডিসেম্বরে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনের অংশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কর্মসূচী গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ওয়াটকিনসের মতে, বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করতে পেরেছে। দেশটি ইতোমধ্যেই এর ক্ষতিকর প্রভাবের কুফল ভোগ করছে এবং প্রায়শই সবচেয়ে দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সেই বিরূপ প্রভাবের প্রধান শিকার। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ১৯৯০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বার্ষিক জিডিপির এক দশমিক আট শতাংশ হারিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাকে দেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারের তালিকায় স্থান দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য উদাত্ত আহ্বান হচ্ছে এখনই পদক্ষেপ নিন। জলবায়ু পরিবর্তন ভবিষ্যতের কোন সমস্যা নয়, বর্তমান সমস্যা। আর এখনই মোকাবেলা করতে হবে, এই প্রত্যয় নিয়েই কাজ করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ ॥ চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ বার্ষিক সম্মাননা। পরিবেশ বিষয়ে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এ সম্মাননা দেয়া হয়। পলিসি, বিজ্ঞান, ব্যবসা ও সুশীল সমাজ এ ৪টি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেয়া হয়। পূর্ববর্তী পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের নেতানেত্রীসহ মাঠপর্যায়ের কর্মীরা রয়েছেন যাদের নেতৃত্ব এবং কর্মকা- একটি টেকসই বিশ্ব সৃষ্টির এবং সবার জন্য মর্যাদাসম্পন্ন জীবনের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য কাজ করেছে। ৪টি ক্যাটাগরিতে এ পর্যন্ত ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের স্বীকৃতি এই পুরস্কার -ড. হাছান ॥ জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থে ভূষিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশের পরিম-ল ছাড়িয়ে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় শেখ হাসিনা তার সাহসী পদক্ষেপের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, জাতির এমন অর্জনে দেশের অনেক রাজনৈতিক দল শেখ হাসিনা এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকারকে অভিনন্দন জানাতে কার্পণ্য করে। আমি আশা করব, এবার তারা এ ধরনের হীনম্মন্যতা থেকে বেরিয়ে আসবে। সংগঠনের সভাপতি এম এ জলিলের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেনÑ মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আশরাফুন্নেছা মোশাররফ, ইতিহাসবিদ সিরাজউদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, কৃষক লীগ নেতা এমএ করিম, অরুণ সরকার রানা প্রমুখ।
×