ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবিতে স্মারক বক্তৃতায় হাসান আজিজুল হক

তাজউদ্দীন আহমদকে আমরা কিছুই দিতে পারিনি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

তাজউদ্দীন আহমদকে  আমরা কিছুই  দিতে পারিনি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ তিনি শুধু আমাদের দিয়েই গেছেন, আমরা তাঁকে কিছুই দিতে পারিনি। যে মানুষটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম একটি দেশ আমাদের হাতে তুলে দিলেন, কৃতঘœতাই তাঁর প্রাপ্য হলো। ইতিহাসে নানা রকম চোরা গর্ত থাকে। ইতিহাসের সেই চোরা গর্তে তিনি নিপতিত হয়েছেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা। ব্যক্তি জীবিত থাকেন তার কর্মের মধ্য দিয়ে। প্রাণের ক্ষয় আছে, দেহের মৃত্যু আছে কিন্তু আদর্শ অমর। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে। রবিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত ‘তাজউদ্দীন আহমদের সমাজ ও রাষ্ট্রভাবনা : পরিপ্রেক্ষিত বর্তমান বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতায় বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শেষে তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা, শান্তি স্বর্ণপদক ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ কর হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে পদক, বৃত্তি ও পুরস্কার তুলে দেন। কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এতে স্বাগত ভাষণ দেন ‘তাজউদ্দীন আহমদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ডে’র দাতা তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাহিদ উল আরেফিন চৌধুরী। স্মারক বক্তা অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক আরও বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর স্বাধীন সত্তাকে ক্ষুণœ হতে দেননি। এভাবে যারা ইতিহাসকে নির্মাণ করতে পারেন, তারা নিজেরাই ইতিহাস হয়ে যান। তাঁর স্বল্পকালের অপরিমেয় কর্মকা-ই ইতিহাসে তাঁর হয়ে কথা বলবে। আমরা বর্তমানে যে বাংলাদেশে বাস করছি, তিনি এমন বাংলাদেশ চাননি। আমরা তাঁর আঁকা অভীস্ট বাংলাদেশ দেশের প্রথম সংবিধানে দেখতে পাই। দেশ আজ তাঁর স্বপ্নের পথে তো হাঁটছেই না বরং উল্টে হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বাংলাদেশের নতুন সংবিধানের কথা উল্লেখ করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন তিনি। উপাচার্য প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদের আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে নিজেদের সৎ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদ পিতার বিভিন্ন ইতিবাচক কাজ ও স্মৃতিচারণ করেন। দেশের শান্তি ও সংঘর্ষ শিক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, দেশে শান্তি ও সংঘর্ষ শিক্ষার পরিধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যখন আমরা আমাদের চিন্তা-চেতনা ও মননশীলতার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে একটা সমাধানের প্রয়াস ঘটাব তখনই আমরা আরও এগিয়ে যাব। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ছাত্রী তনিমা মেগডালিনা কোরাইয়া ‘তাজউদ্দীন আহমদ শান্তি স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। একই বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী নাসরিন জেবিনকে ‘তাজউদ্দীন আহমদ বৃত্তি’ প্রদান করা হয়। এছাড়া মোঃ শফিকুল ইসলাম (নৃবিজ্ঞান), নুসরাত তাসনিম (আইন), মোঃ আবু নাঈম (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট), ফয়সাল আহমেদ সৌরভ (শান্তি ও সংঘর্ষ) এবং ইব্রাহিম খলিল মুহিম (আইন) ‘তাজউদ্দীন আহমদ ট্রাস্ট ফান্ড পুরস্কার’ লাভ করেন।
×