ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আলোকচিত্রে প্রজাপতি

ডানায় ডানায় রঙের উৎসব, শিল্পীর আঁকা নিপুণ শিল্পকর্ম

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ডানায় ডানায় রঙের উৎসব, শিল্পীর আঁকা নিপুণ শিল্পকর্ম

মোরসালিন মিজান পতঙ্গই বটে প্রজাপতি। কঠিন করে বললে- আর্থ্রোপোডা শ্রেণীর লেপিডপ্টেরা বর্গের পতঙ্গ। তবে আশ্চর্য সুন্দর! এত সুন্দর যে, আর সব পতঙ্গ থেকে একে অনায়াসে আলাদা করা যায়। রঙিন প্রজাপতি দেখে, ছেলে নেই বুড়ো নেই, মুগ্ধ সবাই। সেই মুগ্ধতার কিছুটা এখন প্রকাশিত হচ্ছে জাতীয় জাদুঘরে। প্রধান মিলনায়তনের সামনের অংশটি প্রজাপতির ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সৌখিন আলোকচিত্রীদের তোলা এসব ছবি নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাটারফ্লাই বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন। প্রতিটি ছবিতে প্রজাপতি। বর্ণাঢ্য রঙে-ঢঙে ধরা দিয়েছে। দেখে মন সত্যি ভাল হয়ে যায়। সৌন্দর্য তুলে ধরার পাশাপাশি প্রজাপতির প্রতি আরও যতœবান হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আয়োজকরা। প্রদর্শনীতে ১০৬ জনের তোলা ১৩৪টি আলোকচিত্র; দেয়ালের পুরোটাজুড়ে সাজানো। অনভিজ্ঞ ক্যামেরায় তোলা ছবি। তাতে কী? প্রজাপতির নিজস্ব সৌন্দর্য যা, তাতেই বর্ণাঢ্য হয়ে ওঠেছে। যেন রঙের উৎসব চলছে। প্রজাপতির প্রাণবন্ত ওড়াওড়ি। দেখে দর্শনার্থীদের মনও কেমন ওড়ো ওড়ো হয়ে যায়। এক ফ্রেম থেকে অন্য ফ্রেমের দিকে ছুটে যান তাঁরা। কাছে গিয়ে দেখেন। প্রদর্শনীর অধিকাংশ প্রজাপতি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। একটি প্রজাপতির ছবির সামনে কিছু সময় দাঁড়াতে হলো। নামÑ বার্ড উইং। বার্ড উইং কেন? ছবির বর্ণনায় সে উত্তর খুঁজে পাওয়া গেল। আয়োজকরা সেখানে উল্লেখ করেছেন, এই প্রজাপতির ডানা দেশের অন্য যে কোন প্রজাপতির ডানার চেয়ে বড়। অনেকটা পাখির ডানার মতো দেখতে। এ কারণেই নাম বার্ড উইং। এটি আকারের দিক থেকে দেশের সবচেয় বড় প্রজাপতি বলেও জানা গেল। কাছাকাছি দূরত্বেই ছিল ক্ষুদ্রটি। নামÑ প্যাগমি স্ক্র্যাব হোপার। কক্সবাজার থেকে ছবিটি তুলেছে ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া বেলাল উদ্দিন। বেশ সুন্দর একটি ছবি। প্রজাপতিটিও মুগ্ধ হয়ে দেখার মতো। প্রয়াত আলোকচিত্রী মুনির আহমেদ খানের ছবিতে বেশ কয়েকটি দুর্লভ প্রজাপতির সন্ধান পাওয়া যায়। একটির নাম ‘ইয়োলো ফ্ল্যাট’। বাংলাদেশে এই ক্লিক একটি-ই আছে বলে জানা যায়। কিছু প্রজাপতির ডানা দেখতে দেশের মানচিত্র বা ম্যাপের মতো। নাম তাই কমন ম্যাপলেট। এই প্রজাতির দুটি ছবি তুলেছেন মুনির আহমেদ খান। একই আলোকচিত্রী সাতছড়ি থেকে তুলেছিলেন ‘জেব্রা ব্লু’ নামের আরেকটি প্রজাপতির ছবি। এটিও দেখার মতো। খলিল হায়দারের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে ‘ক্রিমসন রোজ’। মূলত সুন্দরবনে থাকে। কখনও-সখনও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা যায়। ছবিটি তাই কৌতূহল নিয়ে দেখছেন দর্শনার্থীরা। কিছু প্রজাপতিকে ঠিক প্রজাপতি বলে মনে হয় না। পোকার মতো দেখতে। এরা খুব দ্রুত ওড়তে পারে। তাই ‘স্কিপার’ হিসেবে পরিচিত। এই প্রজাতির একটির নাম ‘স্ট্রেইট সুইফট’। ডিপ ফরেস্টে দেখা যায় ‘স্মল গ্রিন আউলেট’ নামের প্রজাপতিটিকে। গায়ে বেশ শক্তি। একেও খুঁজে পাওয়া যায় প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া প্রজাপতিদের নামেও বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। এই যেমনÑ পেইন্টেড লেডি, কমান্ডার, কমন ওয়ান্ডারার, রাজা ও নওয়াব। ডানার রং, আকার, আচরণ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণে নিয়ে প্রজাপতিগুলোর নামকরণ করা হয়েছে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় প্রজাপতির বর্ণিল রং। প্রায় একই রকম দেখতে সব প্রজাপতির ডানা। অথচ রঙের দিক থেকে আলাদা। একই প্রজাপতির ডানার নিচের অংশ এক রঙের। বাহিরের অংশে আরেক রং। দেখে মনে হয় নিপূণ শিল্পকর্ম। দক্ষ হাতে কোন জগৎবিখ্যাত শিল্পী এঁকে দিয়েছেন যেন। বিশ্বাস হয় না? তাহলে প্রদর্শনীটি একবার ঘুরে দেখে আসুন। চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত।
×