ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হায় সেরেনা...

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

হায় সেরেনা...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কাছাকাছি পৌঁছেও স্টেফি গ্রাফকে ছোঁয়া হলো না সেরেনা উইলিয়ামসের। জেতা হলো না ক্যালেন্ডার গ্র্যান্ডসøাম। আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনাকে থামিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন রবার্টা ভিঞ্চি। বছরের শেষ গ্রান্ডসøাম টুর্নামেন্টের লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে বড় অঘটনের জন্ম দিলেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নাম্বার তারকা। ইতালিয়ান টেনিস তারকা ভিঞ্চির কাছে হেরে ইউএস ওপেনের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিলেন তিনি। ইউএস ওপেন জিতে দারুণভাবেই গত মৌসুম শেষ করেছিলেন সেরেনা উইলিয়ামস। নতুন মৌসুমের শুরুটাও একইভাবে বছরের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে। এরপর নিজের ঝলক দেখিয়ে শুধুই এগিয়ে আসেন তিনি। ফ্রেঞ্চ ওপেনের পর উইম্বল্ডনেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। বছরের প্রথম তিন মেজর শিরোপা জিতে ক্যালেন্ডার গ্রান্ডসøাম জয়ের লক্ষ্য নিয়েই ইউএস ওপেনের হার্ডকোর্টে খেলতে নেমেছিলেন সেরেনা। শুরু থেকে খেলছিলেও দোর্দা-তাপে। কিন্তু সেই দৌড় থেমে গেল সেমিফাইনালেই। তাকে থামিয়ে দিলেন টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ৪৩ নাম্বারে থাকা রবার্টা ভিঞ্চি। ইতালিয়ান এই টেনিস তারকা শনিবার সেমিফাইনালের কঠিন লড়াইয়ে ২-৬, ৬-৪ এবং ৬-৪ গেমে পরাজিত করেন সেরেনা উইলিয়ামসকে। সেইসঙ্গে সেরেনার অনেক রেকর্ড ছুঁয়ার হাতছানিকেই চূর্ণবিচূর্ণ করে দেন তিনি। অনন্য ইতিহাস গড়ার খুব কাছে গিয়েও পরাজয়ের হতাশা নিয়ে কোর্ট ছাড়তে হলো সেরেনা উইলিয়ামসকে। ম্যাচ শেষে তাই হতাশাই ঝড়ল টেনিসের কৃষ্ণকলির কণ্ঠে। এ বিষয়ে মার্কিন টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস বলেন, ‘ভিঞ্চি তার ক্যারিয়ারের সেরাটা দিয়ে খেলেই আমাকে হারিয়েছে। এই পরাজয়টা আমার কাছে বেশ হতাশার যার ব্যাখ্যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। কারণ এই আসরের শিরোপা জিততে পারলেই বছরের চার গ্রান্ডসøাম জেতা হতো। তারপরও, আমি বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছি।’ ১৯৯৮ সালে শেষ কোন প্রমীলা খেলোয়াড় হিসেবে একই বছরের সবকটি মেজর শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়েছিলেন স্টেফি গ্রাফ। আর এবার সেই কীর্তির কাছে পৌঁছেও শেষ পর্যন্ত স্বপ্নভঙ্গ। টেনিস বিশ্বের সেরা সেরা তারকাদের ভিড়ে কোন গ্র্যান্ডসøাম জেতাটাই এখন দুঃসাধ্য বিষয়। আর বছরের তিনটিতেই চ্যাম্পিয়ন সেরেনা শেষটিরও সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু অসামান্য সেই কীর্তি না গড়তে পারার হতাশা যে তাকে সারা জীবনই আঘাত করবে তা অনুমিতই। সেটা স্বীকার করেছেন সেরেনার কোচ প্যাট্রিক মোরাতোগলো। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টের চাপটা অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ছিল। তাছাড়া সেমিফাইনালের ম্যাচটি অন্য ম্যাচগুলোর চেয়ে কম নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিল। তার ক্যারিয়ারের শেষে আমরা তাকে সর্বকালের সেরা চ্যাম্পিয়ন বলব কিন্তু এটা ঠিকই মনে থাকবে যে সে ক্যালেন্ডার সøাম জিততে পারেনি।’ সেরেনা উইলিয়ামস পারেননি। কিন্তু ইতিহাস ঠিকই গড়েছেন ভিঞ্চির ইতালি। এদিন যে ভিঞ্চির সঙ্গে ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেছেন তার স্বদেশী ফ্লাভিয়া পেনেত্তাও। নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন ইউএস ওপেনের নারীদের এককে ফাইনালে উঠা দুই ইতালিয়ান টেনিস কন্যা। দিনের প্রথম সেমিফাইনালে রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটে পেনেত্তা। এদিন তিনি ৬-১ এবং ৬-৩ গেমে রীতিমতো উড়িয়েই দেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় বাছাই সিমোনা হ্যালেপকে। আর ম্যাচ জিতে উচ্ছ্বসিত র‌্যাঙ্কিংয়ের ২৬ নাম্বারে থাকা পেনেত্তা, ‘এটা বিস্ময়কর। আমি এই টুর্নামেন্টের শুরু থেকে কখনই এমনটি হবে ভাবিনি। জানি না আসলে কিভাবে এই চাপ সামলিয়ে নিজেকে এই পর্যন্ত নিয়ে আসলাম। টেনিসের উন্মুক্ত যুগে তৃতীয় ইতালিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলেন পেনেত্তা। ফ্লাভিয়া পেনেত্তা বছরের শেষ গ্র্যান্ডসøাম লড়াইয়ে মুখোমুখি হবেন স্বদেশী রবার্টা ভিঞ্চির। ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠা ভিঞ্চির তো আনন্দের সীমা নেই। সেরেনাকে হারানোর পর তিনি বলেন, ‘আমার জন্য এটা অবিশ্বাস্য মুহূর্ত। এটা ঠিক স্বপ্নের মতোই। আমি ফাইনালে। সেরেনাকে হারালাম আমি। বিস্ময়কর মুহূর্তই বলতে পারেন। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত।’ সেরেনাকে নিয়ে টুর্নামেন্টের শুরুর আগে থেকেই স্বপ্ন দেখছিলেন আমেরিকান সমর্থকরা। তা বুঝতে বাকি ছিল না ভিঞ্চির। তাই তো ম্যাচ শেষে তাদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করলেন ইতালিয়ান টেনিসের বিস্ময় কন্যা, ‘আমেরিকান মানুষগুলোর জন্য খারাপ লাগছে। সেরেনার কাছেও ক্ষমা চাচ্ছি-গ্র্যান্ডসøাম এবং সবকিছুর জন্যই। আসলে আজকের দিনটা ছিল শুধুই আমার।’ টেনিস ইতিহাসে এটাই প্রথম অল ইতালিয়ান ফাইনাল। এর আগে ২০১০ সালে ফ্রান্সেসকা শিয়াভোনি প্রথম ইতালিয়ান হিসেবে গ্র্যান্ডসøাম জিতেছিলেন। এবার যেই চ্যাম্পিয়ন হোক-তিনি হবেন ইতালির দ্বিতীয় প্রমীলা খেলোয়াড়। আর এই ফাইনাল নিয়েই মজেছে ইতালিয়ানরা। এমনকি খোদ দেশটির প্রধানমন্ত্রীও। সব ধরনের কার্যক্রম রেখেই নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে বিমান ধরেন তিনি। লক্ষ্য একটাই অল ইতালিয়ান ফাইনাল গ্যালারিতে বসে দেখা।
×