ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইব্রাহিম নোমান

মঙ্গলে বসতি পরিত্যক্ত আগ্নেয়গিরি ও পর্বতে প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মঙ্গলে বসতি পরিত্যক্ত আগ্নেয়গিরি ও পর্বতে প্রস্তুতি

নভোচারীরা ঘুরে আসছেন মহাকাশ থেকে, রোভার পাঠানো হয়েছে ধূমকেতুতে। এমনকি মহাকাশ যান দ্রুত গতিতে ছুটে গেছে প্লুটোর পাশ দিয়ে। কিন্তু চাঁদ ছাড়া এই মহাকাশের আর কোথাও কোন গ্রহে কখনও কোন মানুষ অবতরণ করেনি। এখন বিজ্ঞানীরা তাকিয়ে আছেন মঙ্গল গ্রহের দিকে। চন্দ্র বিজয়ের মতো হয়ত ভবিষ্যতে মঙ্গলের বুকে পদচিহ্ন আঁকতে যাচ্ছি আমরা। এর অংশ হিসেবে খুব শীঘ্রই এই রেড প্ল্যানেটে পাঠানো হবে মানুষের একটি দল। এ জন্য প্রস্তুতিও চলছে। পৃথিবীর জনবিরল ও দুর্গম একটি জায়গায় থাকতে হবে এক বছর।দূর গ্রহটিতে অবস্থানের অনুভূতি কেমন হবে, সেই অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্যই নাসার এই আয়োজন। জায়গাটি হচ্ছে হাওয়াই এর পরিত্যক্ত একটি আগ্নেয়গিরি। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা- নাসার ৬ সদস্যের একটি দল এখন বসবাস করছে সেখানে। তাদের থাকার জন্য খাটানো হয়েছে ছোট্ট একটি তাঁবু। ঘর থেকে বের হলে নভোচারীদের পোশাক পরেই তাদের বাইরে যেতে হবে। এ পরীক্ষায় যাঁরা অংশ নিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে একজন ফরাসি মহাকাশ-জীববিজ্ঞানী, একজন জার্মান পদার্থবিদ এবং চার মার্কিন (একজন স্থপতি, একজন পাইলট, একজন চিকিৎসক/সাংবাদিক এবং একজন মৃত্তিকাবিজ্ঞানী)। বিচ্ছিন্নতার পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী দলটিতে তিনজন নারীও রয়েছেন। ঘরের ভেতরে সবার জন্য রয়েছে ঘুমানোর ব্যবস্থা ও কাজ করার ডেস্ক। খাবার হিসেবে তাঁরা পাবেন গুড়ো পনির ও টিনজাত টুনা মাছ। তবে জীবিত কোন প্রাণী বা উদ্ভিদ ওই ঘরের ভেতরে থাকবে না। বিশুদ্ধ বাতাস, তাজা খাবার বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ছাড়াই তাঁদের ওই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হবে। মাত্র ৩৬ ফুট ব্যাস ও ২০ ফুট উচ্চতার ঘরটির বাইরে গেলে তাঁরা স্পেসস্যুট (নভোচারীর পোশাক) ব্যবহার করবেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীরা সর্বোচ্চ ছয় মাস থাকেন। নাসা ইতিমধ্যে চার মাস ও আট মাস দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার পরীক্ষা চালিয়েছে। সেই হিসেবে এবারের পরীক্ষাটি হবে দীর্ঘতম। সীমিত জায়গার মধ্যে দীর্ঘ অবস্থানে নভোচারীদের কী কী সমস্যা হতে পারে, সেগুলো নির্ণয় এবং সমাধানের কৌশল বের করতেই নাসা এই উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান স্পেস ফোরামের উদ্যগেও চলছে মঙ্গল গ্রহ অভিযানের প্রস্তুতি। কোন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর চলচ্চিত্রের দৃশ্য বলেই মনে হবে একে। মঙ্গলের বুকে দুই নভোচারীর এ অভিযান এখন কাল্পনিক গল্প বলে মনে হলেও ভবিষ্যতে হয়ত এমন কিছুই অপেক্ষা করছে মানুষের মহাকাশ জয়ের ইতিহাসে। আর এ স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেই অস্ট্রেলিয়ান আল্পস পর্বতে এক বিশেষ মহড়া চালায় মহাকাশ বিজ্ঞানী আর গবেষকরা। প্রায় ৫০ কেজি ওজনের স্পেসস্যুট গায়ে চাপিয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ফুট ওপরে দুই নভোচারীর এ মহড়া মঙ্গল গ্রহ অভিযানের প্রাথমিক প্রস্তুতি। লাল গ্রহ মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে মিল থাকায় এ মহড়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ান আল্পস পার্বত্য অঞ্চলকে বেছে নেন তারা। অস্ট্রেলিয়ান স্পেস ফোরাম প্রধান গার্নট গ্রেইমার বলেন, ‘মঙ্গল গ্রহে যে ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, নভোচারীদের সেগুলোরই মহড়া চালিয়ে দেখা হয়েছে এখানে। মাধ্যাকর্ষণ বা বাতাসের চাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে। তবে অন্যান্য পরীক্ষা যেমন স্পেস স্যুট এবং এর ওজনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। কন্ট্রোল রুম অর্থাৎ পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের সময় পার্থক্যÑ এই বিষয়গুলো পরীক্ষা করছি আমরা।’ অজানা গ্রহের প্রতিকূল পরিবেশে অভ্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি যে কোন ধরনের পরিস্থিতি সামলে নিতে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালানো হয় নভোচারীদের ওপর। মহড়াটি চালানো হয় অস্ট্রেলিয়ান স্পেস ফোরামের উদ্যোগে। সেখানেই স্থাপিত একটি অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম থেকে পরিচালিত হয় এ মহড়া। মহাকাশ গবেষক নিনগো ইলোরজা বলেন, ‘মঙ্গল গ্রহের অজানা পরিবেশে একজন নভোচারী নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে। এ সময় স্পেস স্যুটটা যেন অন্তত ঠিকমতো কাজ করে, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এগুলোই যাচাই করে দেখছি আমরা।’ সংস্থাটির গবেষকদের আশা, আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে মঙ্গল অভিযানে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে তারা। ব্যয়বহুল এ অভিযানে নামার আগে আরও বেশ কয়েকবার এ ধরনের মহড়া চালাবে বলে জানায় অস্ট্রেলিয়ান স্পেস ফোরাম। সূত্র : নাসা, বিবিসি [email protected]
×