ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক লাখ ৬০ হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে ইউরোপ

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

এক লাখ ৬০ হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে ইউরোপ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ইউরোপ অভিমুখী শরণার্থীর ঢল সামলাতে একটি নতুন পরিকল্পনা পেশ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সদস্য দেশগুলোকে এই প্রস্তাব মেনে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বুধবার কমিশন প্রধান জঁ ক্লদ জুনকার জার্মানির স্ট্রসবার্গ শহরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এই সাহসী প্রস্তাব পেশ করেন। প্রকাশিত কমিশনের ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চলমান শরণার্থী সঙ্কট মেটাতে ইউরোপের দেশগুলোকে বাধ্যতামূলক কোটায় ১ লাখ ৬০ হাজার শরণার্থী নিতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপের যেসব দেশের সীমান্তে বেশিসংখ্যক শরণার্থী অবস্থান করছে সেসব দেশের সীমান্ত কড়াকড়ি শিথিল করতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বর্তমানে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কটে রয়েছে ইউরোপ। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউরোপের যে সব দেশ শরণার্থী নিতে অস্বীকৃতি জানাবে তাদের অর্থ জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। এ সময় শরণার্থীদের জন্য ২শ’ কোটি ডলারের ফান্ডেরও প্রস্তাব দেয়া হয়। জার্মানি এবং ফ্রান্স ইউরোপীয় কমিশনের এই বাধ্যতামূলক কোটা প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ এই বাধ্যতামূলক কোটা ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছে। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক মন্ত্রীদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। খবর, বিবিসি, এএফপি, আলজাজিরা ও ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। প্রস্তাব অনুসারে জার্মানি এবং ফ্রান্সকে বেশিসংখ্যক শরণার্থী নিতে হবে। এ সময় গ্রীস, ইতালি এবং হাঙ্গেরির সমালোচনা করেন জুনকার। এসব দেশের সীমান্তে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শরণার্থী বর্তমানে তাঁবু গেড়ে অবস্থান করছে। শরণার্থী গ্রহণকে মানবতা এবং মর্যাদাকর বলে আখ্যা দেন জুনকার। তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আইএসের বিরুদ্ধে লড়ছি। তাহলে আমরা কেন শরনণার্থী গ্রহণে পিছপা হচ্ছি। চলমান শরণার্থী সমস্যা নিরসনের সময় এখনই। আমাদের এই সমস্যা নিরসনে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন অভিবাসীদের নিয়ে দ্বিধা বা ভয়ের সময় নয়। বক্তব্যের শুরুতেই জুনকার বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন ভাল পরিস্থিতিতে নেই, ইউনিয়নের ভেতর ইউরোপের অনুপস্থিতি রয়েছে। আর ইউনিয়নের ভেতর নেই ইউনিয়ন বা ঐক্য। ওই প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে গত মে মাসে প্রত্যেক দেশের ৪০ হাজার শরণার্থী নেয়ার যে প্রস্তাবনা ছিল, প্রতিটি দেশ তার অতিরিক্ত আরও ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী গ্রহণ করবে। যদিও তখন দেশগুলো মাত্র ৩২ হাজার শরণার্থী গ্রহণে সম্মত হয়। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় এখন ইতালি, গ্রীসে আর হাঙ্গেরিতে থাকা শরণার্থীদের অন্তত ৬০ শতাংশ জার্মানি, ফ্রান্স আর স্পেন গ্রহণ করবে। এছাড়া বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, জনসংখ্যা, বেকারত্ব হার আর বর্তমান শরণার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় দেশগুলোর কোটা নির্ধারণ করা হবে। প্রস্তাবনা অনুসারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় একটি অভিন্ন আর শক্তিশালী শরণার্থী আশ্রয় নীতি তৈরি করা হবে। এছাড়া ‘তথাকথিত’ ডাবলিন সিস্টেম, যে নীতিতে শরণার্থীদের তাদের প্রথমে আসা দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদন করতে হয় সেই নীতি পুনর্বিবেচনারও প্রস্তাব করেছেন তিনি। তবে চেক রিপাবলিক, পোল্যান্ড ও সেøাভাক রিপাবলিক এই বাধ্যতামূলক কোটা প্রস্তাবের রুমানিয়া কঠোর সমালোচনা করেছে। বুধবার চেক রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রী বহুসøাভ সোভোৎকা বলেন, চলমান শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলায় কোটা ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই। ওদিকে জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল জুনকারের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এই প্রস্তাবে সকল সদস্য দেশগুলোকে মানতে হবে। জার্মানির পাশাপাশি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও জুনকারের ওই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন। ওদিকে অস্ট্রেলিয়া সিরিয়া ও ইরাক থেকে অতিরিক্ত ১২ হাজার শরণার্থী নেবে। বুধবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী টনি এ্যাবোট একথা জানান। ক্যানবেরায় এ্যাবোট সাংবাদিকদের বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া সিরিয়া ও ইরাক যুদ্ধে সর্বস্ব হারানো আরও অতিরিক্ত ১২ হাজার শরণার্থীকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করবে।’ তিনি জানান, যেসব জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হয়ে জর্দান, লেবানন ও তুরস্কে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে সেই সব নারী ও শিশুর নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। অপরদিকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বর্তমানে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টায় আছে অন্তত সাড়ে আট লাখ মানুষ। চলতি বছর এবং আগামী বছর এসব মানুষ ইউরোপে আশ্রয় পেতে ইচ্ছুক বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, অভিবাসী প্রত্যাশীদের এ বাড়তি চাপ সামাল দিতে হলে ইউরোপের সব দেশকে সমন্বিতভাবে শরণার্থী নীতিমালা নিতে হবে। ইউএনএইচসিআর বলেছে, বেশিরভাগ শরণার্থীই হবে সিরীয়। বছরের পর বছর ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের কারণে বাধ্য হয়েই দেশ ছাড়ছে সিরিয়ার নাগরিকরা। সংস্থাটির অনুমান, এবছর অন্তত চার লাখ নতুন শরণার্থী আন্তর্জাতিক আশ্রয় লাভের উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ভিড়বে। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা সাড়ে চার লাখের বেশি হয়ে যেতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার যেসব দেশ থেকে শরণার্থীরা আসছে, সেসব দেশকে আর্থিকভাবে এবং মানব পাচার প্রতিরোধে সহযোগিতা দেয়ার কথাও প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এই কোটা ব্যবস্থাকে জার্মান চ্যান্সেলর দেখছেন সঙ্কট উত্তরণের ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপ’ হিসেবে। তিনি বলেছেন, আশ্রয় পাওয়ার অধিকার যাদের আছে, তাদের ক্ষেত্রে আরও খোলামেলা একটি ব্যবস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নিতে হবে।
×