ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সব সিম নিবন্ধন করতে হবে না

রবিবার থেকে মোবাইল সিম পুনর্নিবন্ধন, চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

রবিবার থেকে মোবাইল সিম পুনর্নিবন্ধন, চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সব মোবাইল সিম নিবন্ধন করতে হবে না। যে সব মোবাইল সিম সঠিকভাবে নিবন্ধন হয়েছে, সেই সিম ভেরিফাই বা যাচাইয়ের সুযোগ রেখে আগামী রবিবার থেকে সিম পুনর্নিবন্ধন শুরু হচ্ছে। নিবন্ধন কাজ চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সমযের মধ্যে সঠিক প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন কাজ চললে সময় আরও বাড়ানো হতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে সব সিম নিবন্ধন বা যাচাই করে নেবে না তাদের সিম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হযেছে। বুধবার সকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার মন্ত্রণালয়ে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, যারা ইতোমধ্যে সঠিকভাবে সিম নিবন্ধন করেছেন, এ কার্যক্রমে তাদের সিম যাচাই করে নিতে হবে। যাচাই না করা হলে তাদের সিমও বন্ধ করে দেয়া হবে। যদি যাচাইয়ে সিম নিন্ধন সঠিকভাবে না হয় তাহলে সেই সিমও বন্ধ করে দেয়া হবে। অথবা তাকে অল্প দিনের সময় দেয়া হবে সিম নিবন্ধন করে নেয়ার। টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্রাহকরা কিভাবে সিম যাচাই বা পুনর্নিবন্ধন করবেন, সেই প্রক্রিয়া আগামী রবিবারের মধ্যে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হবে। তাছাড়া বিটিআরসিতে একটি হেলপ লাইন থাকবে। যেখানে ফোন করে গ্রাহকরা বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। দেশের স্বার্থে সব মোবাইল নিবন্ধন ও ভেরিফিকেশন বা যাচাই করে নিতে হবে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার জন্য সিম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হযেছে। সিম নিবন্ধন করার আগে মোবাইল আপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত রবিবারের মধ্যে প্রাহকদের জানানো হবে। তবে আমি সব সিম নিবন্ধন করার পক্ষে। যেসব সিম নিবন্ধন হয়েছে সেগুলো আবার নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মোবাইল অপারেটররা রিটেইলারদেরও জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার জন্য বাধ্য করা হবে। প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, সিম নিবন্ধনের বিষয়ে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। কোন অবৈধ সিম ব্যবহার হতে দেয়া হবে না। নিবন্ধন ছাড়া সিম ধরা পড়লে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিম নিবন্ধন নিয়ে বাইরে নানা কথা হচ্ছে। কেউ পক্ষে বলছেন আবার কেউ বিপক্ষে বলছেন। আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সিম নিবন্ধনের বিষয়টি ভালভাবেই নিয়েছেন। সিম কার্ড নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিই বেশি। কারণ কোন ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষই বিপদগ্রস্ত হন। তাই তাদের কথা মাথায় রেখে সিম নিবন্ধের কাজটি করা জরুরী। দু’ একদিনের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রকল্পের সঙ্গে একটি চুক্তি করা হবে। যাতে একজন গ্রাহক সিম কিনতে গেলে এনআইডির সঙ্গে পরিচয় মিলিয়ে নিতে পারেন। পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে সিম নিতে হবে। এর বাইরে কোন সিম বিক্রি হবে না। মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশ দেয়া হবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সিম নিবন্ধনের জন্য বিল বোর্ড লাগানোর জন্য। আমরা অচিরেই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসব। সেখানে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর যেসব সিম স্থগিত করা হবে তার একটা তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিয়ে দেয়া হবে। এক প্রশ্নে জবাবে মন্ত্রী বলেন, অনলাইনে সিম নিবন্ধন করা যাবে না। অনলাইনে আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার কোন ব্যবস্থা থাকবে না। নির্দিষ্ট স্থানে গিয়েই সিম নিবন্ধন করতে হবে। যাদের অলরেডি সিমকার্ড আছে তারা ভেরিফাই করে নেবেন এবং সেটাকেই আমরা রেজিস্ট্রেশনের মধ্যে নিয়ে নেব। আর নতুনগুলো যথানিয়মে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। পাশাপাশি যে রিটেইলার এবং ডিস্ট্রিবিউটর আছেন, তাদের সঠিক পরিসংখ্যান, নাম-ঠিকানা কোন কিছুই মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়নি। এ বিষয়টিও আপারেটরদের জানাতে হবে। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস বলেন, বিষয়টি হাইলি কারিগরি। অপারেটরসহ বিটিআরসির অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। তাই এটা করা একটা মহা কর্মযজ্ঞ। এই কর্মযজ্ঞ সঠিকভাবে পরিচালনা করাও কঠিন। তাই যেসব সিম নিবন্ধন করা আছে সেগুলোকে ভেরিফিকেশন বা যাচাই করা যেতে পারে। সেটা কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর যেসব সিম নিবন্ধন নেই তাদের নিবন্ধন করতেই হবে। তবে সব কিছু করার আগে আরও অনেক কাজ আমাদের করে নিতে হবে। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের সিম নিবন্ধন করতে কয়েক মাস সময় লেগে যাবে। আবার অনেকর এনআইডি বা পাসপোর্ট নেই অথচ তারা সিম কিনবে সেক্ষেত্রে কি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে সেটাও ভাবার বিষয় রয়েছে। তবে আগামী রবিবার থেকে সিম নিন্ধন কাজ শুরু হচ্ছে। এটা পর্যায়ক্রমে একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। আগে কাজটা শুরু হোক। বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস এর আগে সাংবাদিকদের বলেন, যারা সঠিকভাবে সিমকার্ড নিবন্ধন করেছেন তাদের পুনর্নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। এ নিয়ে অস্পষ্টতার পর মঙ্গলবার বিটিআরসিকে চিঠি দেয় টেলিযোগাযোগ বিভাগ। সিমকার্ড ভেরিফিকেশন ও পুনর্নিবন্ধনের বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, এনআইডির সঙ্গে চুক্তি হলে অনলাইনে নিবন্ধন করা যাবে। অনলাইনে করার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিটিআরসি জানিয়েছে, ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর থেকে মোবাইল ফোন অপারেটররা প্রি-একটিভ সিম বিক্রি করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিটিআরসি। কেউ নিবন্ধনহীন সিম ব্যবহার করলে প্রতিটি সিমের জন্য অপারেটরকে ৫০ ডলার করে জরিমানা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওই সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিটিআরসি। অনেক অপারেটরের সিম নিবন্ধন সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে অনিবন্ধিত সিম বিক্রির দায় অপারেটরা খুচরো বিক্রেতাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে আসছে। দেশে বর্তমানে বিভিন্ন অপারেটরের মোট গ্রাহক রয়েছে ১২ কোটি ৮৭ লাখ। এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ২০১২ সালের বিধি অনুযায়ী অপারেটরদের দেয়া বিটিআরসির ফান্ডে ৭শ’ ২৫ কোটি টাকা জমা রয়েছে। এই টাকা কোন কোন খাতে খরচ করা হবে তার জন্য একটি কমিটি রযেছে। এই কমিটির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। মোবাইল কানেক্টিভিটি নেই বা যে গ্রামে কমপিউটার যায়নি সেই সব পিছিয়ে পড়া গ্রামে আমরা কমপিউটার গ্রাম বা কমপিউটার হাট নামে প্রকল্প নিতে পারি। যাতে ওই সব এলাকার মানুষ তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানে শিক্ষিত হতে পারে। অথবা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা জনবহুল এলাকায় ওয়াইফাই জোন করে দেয়া যেতে পারে। এখান থেকে তরুণ উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা দেয়া হতে পারে। এসব চিন্তা আমাদের মাথায় রয়েছে। তবে এ বিষয়ে বৈঠক হওয়ার পরই সিদ্ধান্তগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। কারণ ৭শ’ ২৫ কোটি টাকা অলস ফেলে রেখে কোন লাভ হচ্ছে না। নেটওয়ার্ক উন্নয়নেও এই টাকা ব্যয় করা যেতে পারে বলে মন্ত্রী মনে করেন।
×