ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার, সর্বনিম্ন ৮,২৫ টাকা;###;মূল বেতন ১ জুলাই ’১৫ এবং ভাতা আগামী বছর ১ জুলাই থেকে;###;বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা ২%

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন ॥ ৮ম পে-স্কেল কার্যকর

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন ॥ ৮ম পে-স্কেল কার্যকর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল বেতন নির্ধারণ করে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেল অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন পে-স্কেলে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধানরাও মন্ত্রিপরিষদ সচিব/মুখ্য সচিবের সমান বেতন পাবেন। এমপিওভুক্ত বেসরকারী স্কুলের শিক্ষকরাও এ স্কেলের অন্তর্ভুক্ত হবেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটি তাদের বেতন নির্ধারণ করবে। কাক্সিক্ষত এ পে-স্কেল অনুমোদনের ফলে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রায় শতভাগ বাড়ল। ঘোষিত স্কেলের মূল বেতন ১ জুলাই থেকে এবং ভাতাগুলো আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এতে মূল বেতনের ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নির্দিষ্ট করে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেয়া হয়েছে। এতে আগের মতো ২০টি গ্রেড থাকছে, তবে বৈষম্য কমিয়ে আনতে এখন থেকে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কোন শ্রেণীবিভাগ থাকবে না। সবাই গ্রেড অনুযায়ী পরিচিত হবেন। নতুন পে-স্কেলে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাংলা নববর্ষ উৎসব ভাতা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারীরা এখন থেকে ৯০ শতাংশ হারে পেনশন পাবেন। নতুন বেতন বাবদ বছরে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৯০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরে ভাতাসহ বেতন পরিশোধ করতে সরকারের বছরে অতিরিক্ত খরচ হবে ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন এ বেতন স্কেল অনুমোদন করা হয়। এর আগে ২০০৯ সালে সর্বশেষ বেতন স্কেল দেয়া হয়েছিল। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, নতুন বেতন কাঠামোয় গ্রেড আগের মতো ২০টি থাকবে। এতে সর্বোচ্চ গ্রেডে বেতন হবে ৭৮ হাজার টাকা (নির্ধারিত)। সর্বনিম্ন বেতন হবে ৮ হাজার ২৫০ টাকা। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড অব্যাহত থাকবে না জানিয়ে সচিব বলেন, বেতন সবার জন্য বাড়ছে। কাজেই কিছু পদ বা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুবিধা দেয়ার চেয়ে সবাইকে সুবিধা দেয়াই যৌক্তিক। তবে মূল বেতনের ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। ২০তম থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ। পঞ্চম গ্রেডে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। তিন ও চার নম্বর গ্রেডে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ। গ্রেড দুই-এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর এক নম্বর গ্রেডে কোন প্রবৃদ্ধি হবে না। এ প্রসঙ্গে মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কারও মূল বেতন ১০ হাজার টাকা হলে, ৫ শতাংশ হারে এক বছরে তার প্রবৃদ্ধি হবে ৫০০ টাকা। প্রথম বছর শেষে ওই ব্যক্তির প্রবৃদ্ধিসহ বেতন দাঁড়াবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। যেহেতু চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে, তাই দ্বিতীয় বছরে ওই ১০ হাজার ৫০০ টাকার ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে। এভাবে প্রত্যেক বছরই বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। প্রতিবছরের ১ জুলাই সবার জন্য একই সঙ্গে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হবে। সচিব বলেন, পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগে টাইম স্কেল অনুযায়ী যে বেতন বাড়ত, নতুন পদ্ধতিতে তার চেয়ে বেশি বেতন বাড়বে। এছাড়া এখন থেকে সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে কোন শ্রেণীবিভাগ থাকবে না উল্লেখ করে সচিব বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এখন থেকে এটি বিলুপ্ত। প্রথম শ্রেণী বা তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণী বলে কিছু থাকবে না। সরকারী কর্মচারীরা এখন থেকে গ্রেড অনুযায়ী পরিচিত হবেন। তাদের জন্য এটি হবে মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্ট। সত্যায়িত করার ক্ষমতার বিষয়টি উল্লেখ করে সচিব বলেন, বিষয়সহ শ্রেণী অনুযায়ী যেসব কাজ, সেগুলোতে পরিবর্তন আনা হবে। প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার জায়গায় গ্রেডভিত্তিক সত্যায়িতকরণের ক্ষমতা থাকবে। এছাড়া ক্যাডার বা নন-ক্যাডারদের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য নতুন পে-স্কেল কার্যকর হবে উল্লেখ করে তা পর্যালোচনার কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, কমিটির মাধ্যমে এর পর্যালোচনা হবে। তবে এমপিওভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন স্কেলে বেতন পাবেন, পাশাপাশি এর পর্যালোচনাও চলবে। এই পে-স্কেলের বাস্তবায়ন ১ জুলাই ২০১৫ থেকে ধরা হবে; অর্থ বিভাগে এখন এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এদিকে ঘোষিত পে-স্কেল অনুযায়ী সর্বোচ্চ গ্রেড প্রথম গ্রেডের বেতন হবে ৭৮ হাজার টাকা (নির্ধারিত)। ২য় গ্রেড ৬৬ হাজার টাকা থেকে শুরু হবে। এছাড়া ৩য় গ্রেড ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা, ৪র্থ ৫০ হাজার টাকা, ৫ম ৪৩ হাজার টাকা, ৬ষ্ঠ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, ৭ম ২৯ হাজার টাকা, ৮ম ২৩ হাজার টাকা, ৯ম ২২ হাজার টাকা, ১০ম ১৬ হাজার টাকা, ১১তম ১২ হাজার ৫০০ টাকা, ১২তম ১১ হাজার ৩০০ টাকা, ১৩তম ১১ হাজার টাকা, ১৪তম ১০ হাজার ২০০ টাকা, ১৫তম ৯ হাজার ৭০০ টাকা, ১৬তম ৯ হাজার ৩০০ টাকা, ১৭তম ৯ হাজার টাকা, ১৮তম ৮ হাজার ৮০০ টাকা, ১৯তম ৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং ২০তম বা সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে শুরু হবে। এ বেতন স্কেলের বাইরে সিনিয়র সচিব ও সশস্ত্র বাহিনীর সমমর্যাদার চাকরিজীবীর বেতন হবে ৮২,০০০ টাকা (নির্ধারিত) এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও সশস্ত্রবাহিনীর সমমর্যাদার চাকরিজীবীর বেতন হবে ৮৬,০০০ টাকা (নির্ধারিত)। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানের বেতন সেনাবাহিনী প্রধানের সমান হবে। সশস্ত্রবাহিনীতে সর্বশেষ পদ হলো সৈনিক, কিন্তু তারা সর্বনিম্ন গ্রেডে বেতন পান না। তারা তাদের নির্ধারিত স্কেল অনুযায়ী বেতন পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এখন প্রচলিত কাঠামোতেই বেতন পাবেন। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিপরিষদ কমিটি রয়েছে, তারা এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জানাবে। প্রতিবেদন পরে কেবিনেটে এলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়া এ মুহূর্তে স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের প্রয়োজন নেই বলেও জানান সচিব। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবসরের সময়সীমার বিষয়টি আগে যা ছিল এখনও তাই রয়েছে বলেও জানান সচিব। তবে বিজ্ঞানীরাও নতুন স্কেলে বেতন পাবেন উল্লেখ করে সচিব বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান যদি বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয় বা পরিচালনা করে, তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হবে, যার কোন সীমা নেই। বৈশাখী বোনাস ॥ সরকারী কর্মচারীদের জন্য ৮ম বেতন কাঠামো অনুমোদনের পাশাপাশি নববর্ষে বাড়তি একটি বোনাস ঘোষণা করেছে সরকার। সর্বনিম্ন মূল বেতন ৮২৫০, সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার। প্রতিবছর বৈশাখ উপলক্ষে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই ভাতা পাবেন। এর পরিমাণ হবে তাদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলা নববর্ষের ভাতা যোগ হয়েছে। ধর্মভিত্তিক উৎসব ভাতা আছে, কিন্তু সব ধর্মের মানুষ একই সময় একই ভাতা পাচ্ছেÑ এটা ছিল না। এতদিন মূল বেতনের সমান হারে বছরে কেবল দুটি উৎসব ভাতা দেয়া হতো সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। মুসলমানরা দুই ঈদে, হিন্দুরা পুজোয় এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় উৎসবে ওই ভাতা পান। ফলে দেশীয় শিল্প বিকাশ ও গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হবে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত বেতন কমিশন গত বছরের ২১ ডিসেম্বর যে প্রতিবেদন দিয়েছিল তাতে ১৬টি গ্রেডে বেতনকাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছিল। বিশেষ ভাতা নির্ধারিত হারে প্রদান করা হবে।
×