ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোপন মদদ

আরএসও ক্যাডারদের ॥ নিষ্ক্রিয় করা যায়নি

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আরএসও ক্যাডারদের ॥ নিষ্ক্রিয় করা যায়নি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ দেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি টহল দলের ওপর আরাকানের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গ্রুপের গুলিবর্ষণের পর বিজিবির পক্ষে তৎক্ষণাৎ সমুচিত জবাব এবং পরক্ষণে কাল বিলম্ব না করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করায় দেশের সৈনিকদের ভূয়সী প্রশংসা করছে সর্বস্তরের জনগণ। সেনাবাহিনী ও বিজিবির সাহসী অভিযানে আরাকানের সংঘবদ্ধ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পিছু হটে পালিয়ে গেছে। সম্প্রতি বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে ঘাঁটি গাড়তে দেয়া হবে না। সচেতন মহল জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবি জওয়ানরা দেশ ও বর্ডার রক্ষায় যে আন্তরিক, মিয়ানমার অভ্যন্তরে গহীন জঙ্গলে ঘাঁটি করে অবস্থানকারী আরাকানের ওই সব সশস্ত্র গ্রুপ নিশ্চয়ই বুঝতে পেরে পিছু হটেছে। বান্দরবানের থানচির বড়মদকে গুলি ছোড়ার পর সেনা-বিজিবির কম্বিং অপারেশনে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে যেমন বাধ্য হয়েছে, তেমনি কক্সবাজার ও বান্দরবানে ঘাপটি মেরে থাকা আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ক্যাডারদের বিরুদ্ধেও অপারেশন চালানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তারা (আরএসও) বিশেষ মহলের ইন্ধনে কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে ধর্মের দোহাই দিয়ে গোপনে সশস্ত্র জঙ্গী প্রশিক্ষণ দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের। এদের মদদে বেপরোয়া হয়ে উঠছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আরএসও ক্যাডাররা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কতিপয় জোট নেতার মদদে শক্তি সঞ্চারকারী আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সংগঠন আরএসও ক্যাডারদের এ পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় করা যায়নি। কট্টরপন্থী মৌলবাদী গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে ও নাশকতায় এসব জঙ্গীকে মদদ দিচ্ছে জামায়াত-বিএনপি। কক্সবাজারে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কিছু আইনজীবী জামিনে মুক্তসহ জঙ্গীদের গোপনে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সব আইনজীবী সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ নাশকতা কাজে আরএসও জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যদের ব্যবহার করে থাকে বলে জানা গেছে। কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী দল ইতোপূর্বে আরএসও শীর্ষনেতা রোহিঙ্গা জঙ্গী মৌলভী আবু ছালেহ, হাফেজ ছলাহুল ইসলাম ও মৌলভী আয়াছসহ আরএসওর বহু ক্যাডারকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠালেও ব্যাপক তদ্বির এবং পুলিশের খামখেয়ালিতে পাঠানো রিপোর্টে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেছে এরা। ওই বিশেষ মহলের সহায়তায় জঙ্গীরা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় সরকারের অনুমতি না নিয়ে একের পর এক গড়ে তুলছে মসজিদ-মাদ্রাসার নামে রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণের জঙ্গী আস্তানা। অজপাড়া গাঁয়ে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা দেয়ার জন্য মাদ্রাসা-মক্তবের প্রয়োজন বলে দাবি করে জঙ্গীরা ধর্মান্ধ কিছু ব্যক্তিকে বশে এনে নির্মাণ করছে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা। আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী ও প্রবাসী ধনাঢ্য মিয়ানমার নাগরিকদের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের সাহায্যের কথা বলে মোটা অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করে তা জঙ্গীপনার পেছনে ব্যয় করছে আরএসও ক্যাডাররা। অভিজ্ঞমহল মনে করছেন, মিয়ানমারের বিদ্রোহী জঙ্গীগোষ্ঠী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) নিষ্ক্রিয় করা প্রয়োজন। এদিকে সরকার জঙ্গী দমনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। অভিযোগ রয়েছে, টাকার লোভে জঙ্গীদের সহযোগিতাকারীর হাতেগোনা কয়েকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার এবং জামায়াত-বিএনপির কতিপয় আইনজীবীর কারণে প্রশাসন আরাকানী জঙ্গী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন ক্যাডারদের (আরএসও) নিষ্ক্রিয় করতে পারছে না। ওই সব বিচ্ছিন্নতাবাদী সদস্যদের দমন করা না হলে দেশের অভ্যন্তরে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।
×