ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শকুনের প্রায় সব প্রজাতি এখন বিলুপ্তির পথে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শকুনের প্রায়  সব প্রজাতি এখন  বিলুপ্তির  পথে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গবাদিপশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার শকুন বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। আবাসস্থল, খাদ্য সঙ্কট ও শকুনের জন্য ঘোষিত নিরাপদ এলাকার বড়গাছ নিধনের ফলে আশঙ্কাজনক হারে কমছে শকুনের সংখ্যা। গত শতকের সত্তরের দশক থেকে এ পর্যন্ত শকুন হ্রাসের পরিমাণ ৯৮ শতাংশ। স্বাধীনতা পূর্বে ৫০ হাজার শকুন থাকলেও বর্তমানে সবমিলিয়ে এ সংখ্যা ৩০০ এর নিচে। প্রাণীর মৃতদেহ খেয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় শকুনের ভূমিকা অপরিসীম হলেও এর প্রায় সব প্রজাতি এখন বিলুপ্তির পথে। কমেছে বাংলা শকুনের সংখ্যাও, কোনক্রমেই এ সংখ্যা ৩০০ এর বেশি হবে না। আর দেশে সবমিলিয়ে সরুঠুঁটি শকুনের সংখ্যা ১০ টিরও কম! তাই শকুন রক্ষার্থে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। শকুনের বাসযোগ্য এলাকা নিরাপদ রাখতে হবে। যেহেতু বড়গাছ নিধনের ফলে বাসা বাঁধার প্রতিকূলতাও শকুন কমে যাওয়ার কারণ, তাই বড়গাছ নিধন বন্ধ করতে হবে। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বন অধিদফতরের উদ্যোগে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘মরণঘাতী ওষুধ ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন মুক্ত শকুনের আবাসস্থল নিশ্চিত করুন।’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ নুরুল করিম বলেন, প্রাণীর মৃতদেহ শকুনের খাদ্য। শকুনের জন্য যা ক্ষতিকারক তা বন্ধ করতে হবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্যের কথা চিন্তা করে শকুন রক্ষার্থে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, গবাদিপশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ফলে ওই পশুর মৃতদেহ খেয়ে শকুন মারা যায়, এটা অবশ্য মানুষের জন্যও ক্ষতিকারক। ঈদের সময় সীমান্ত দিয়ে বহু গবাদিপশু আসবে। ওই সব পশুর ক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োগ যেন মাত্রার মধ্যে হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শকুনকে প্রকৃতির স্যানিটারি বলা হয়। দেশে বাঘ মারলেই শাস্তি হয় না। শকুনের জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যও শাস্তি হয় না। শকুন রক্ষার্থে আবাসস্থল নিরাপদ রাখতে হবে। বন বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ কার্যকর করতে হবে। আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আগে সারাদেশেই শকুন ছিল। এখন শুধু নিরাপদ অঞ্চলগুলোতে কিছু শকুন রয়েছে। তবে শকুনের জন্য ঘোষিত নিরাপদ অঞ্চলেও শকুনেরা নিরাপদে নেই। খুলনার সুন্দরবন ও সিলেটের কিছু অঞ্চল শকুনের জন্য নিরাপদ। সে এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মনে রাখতে হবে বণ্যপ্রাণীকে কৃত্রিম খাবার দিয়ে সংরক্ষণ করা যায় না। এরা প্রকৃতির ওপরই নির্ভরশীল। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ শকুন রক্ষার্থে অনেক আগেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমাদেরও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বন সংরক্ষক ড. তপন কুমার দে বলেন, সরকার ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০১০ সাল থেকে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক মনিটরিং ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করার ফলে সরকারের সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক। প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ ইউনুছ আলীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায়, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক রুহুল আমিন, উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আকবর হোসেন এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার।
×