ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জর্দানের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক কৌশল ॥ মামুনুল

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জর্দানের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক কৌশল ॥ মামুনুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অসি-ভূমে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক ম্যাচ খেলে পার্থ থেকে শুক্রবার রাতে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ফিরে কোন বিশ্রাম বা অবকাশ কাটানোর সময় পায়নি তারা। শনিবার বিকেলেই বুট-জার্সি পরে বল নিয়ে জোর অনুশীলনে নেমে পড়তে হয়েছে ‘বেঙ্গল টাইগার্স’দের। কারণ একটাইÑ আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ঘরের মাটিতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিফা ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ‘বি’ গ্রুপের হোম ম্যাচে প্রতিপক্ষ জর্দানের বিপক্ষে খেলতে হবে তাদের। তাই কোন আরাম-আয়েশ বা বিলাসিতা নয়, শুধুই পরিশ্রম আর কঠোর অনুশীলন, যেটা শনিবার বিকেল শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব মাঠে দলের ডাচ্ ও হেড কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের অধীনে করে মামুনুলরা। অল্প কদিন (৩ সেপ্টেম্বর) অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রবল শক্তিশালী দলের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিয়ে এসেছে ডি ক্রুইফের শিষ্যরা। দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তিটা পুরোপুরি দূর হয়নি এখনও। মাত্র পাঁচদিনের ব্যবধানেই আবারও মাঠে নামতে হচ্ছে সোহেল-এনামুলদের। তবে পার্থক্য হলো এবার ম্যাচটা হচ্ছে ঘরের মাটিতে। কিন্তু প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে শক্তিমত্তায় খুব একটা পিছিয়ে নেই। জর্দানের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ৯১, আর বাংলাদেশের ১৭৩। হতে পারে প্রতিপক্ষ কঠিন। তবে তাতে বিচলিত নন বাংলাদেশের অধিনায়ক-মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম, ‘কোন সন্দেহ নেই, অনেক শক্তিশালী দল জর্দান। আমাদের থেকে তারা অনেক শক্তির নিরিখে অনেক এগিয়ে। তারপরও বলব তারা অস্ট্রেলিয়ার মতো নয়। আমাদের নিজেদের মাঠ। সমর্থক আর চেনা পরিবেশ। আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েই লড়াই করব। আশা করছি ভাল কিছুই করতে পারব। অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের অভিজ্ঞতাও এই ম্যাচে অনেক কাজে আসবে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রক্ষণাত্মক খেলেছি ঠিক। তবে নিজেদের মাঠে জর্দানের বিপক্ষে অবশ্যই আমরা আক্রমণাত্মক খেলব।’জর্দানের পর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ এ্যাওয়ে ম্যাচে কিরগিজস্তানের মুখোমুখি হবে ১৩ অক্টোবর। এরপর ১২ নবেম্বর তাজিকিস্তান (এ্যাওয়ে ম্যাচ), ১৭ নবেম্বর অস্ট্রেলিয়া (হোম ম্যাচ)। বাছাইপর্বে বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে জর্দানের (এ্যাওয়ে) বিপক্ষে। আগামী বছর ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ রয়েছে গ্রুপ ‘বি’তে। বাংলাদেশের গ্রুপে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান এবং জর্দান। দুই ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জর্দান। তাদের সংগ্রহ চার পয়েন্ট। তাদের থেকে এক ম্যাচ বেশি খেলে চার পয়েন্ট পেয়ে তৃতীয় স্থানে কিরগিজস্তান। দুই ম্যাচ খেলে ১ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে তাজিকিস্তান। তাদের থেকে এক ম্যাচ বেশি খেলে সমান পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে রয়েছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, এর আগে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে তিন ম্যাচ খেলেছে লাল-সবুজরা। এর দুইটি ঘরের মাটিতে। গত জুনে হোম ম্যাচে কিরগিজস্তানের সঙ্গে ৩-১ গোলে হারে বাংলাদেশ দল। পরেরটিও হোম ম্যাচ। তাজিকিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচে চমৎকার খেললেও ১-১ গোলে ড্র করে তারা। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে এশিয়া অঞ্চলের ‘বি’ গ্রুপের খেলায় গত ৩ সেপ্টেম্বর স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ৫-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। বিজয়ী দল ম্যাচের প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল ৪-০ গোলে। এশিয়ার পরাক্রম, এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ফুটবল দলের (ফিফা র‌্যাঙ্কিং ৬১) বিপক্ষে ঐতিহাসিক দ্বৈরথে অবতীর্ণ হলে ২০০৩ সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল যে হারবেই, এ নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল না। তারপরও ফুটবলে যে কোন কিছুই সম্ভবÑ এ তত্ত্বে ভরসা করে অনেকেই আশা করেছিলেন যদি রক্ষণাত্মক খেলে কমপক্ষে ড্র করতে পারে বাংলাদেশ! রক্ষণাত্মক খেলে ঠিকই, কিন্তু খায় পাঁচ গোল। ইন্টারনেটের কল্যাণে যারা খেলাটি দেখেন, তারা স্বীকার করেছেন, প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধেই বেশি ভাল খেলে বাংলাদেশ। কেননা এই অর্ধে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করে। হারলেও এ ম্যাচে কিছু ইতিবাচক প্রাপ্তিও আছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। যেমন : গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলের অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন, কোন কার্ড না খাওয়া এবং দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ ডিফেন্ডারদের দারুণ সফলতা। ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াই ছিল পরিষ্কার ফেবারিট। বাংলাদেশের হারানোর কিছুই ছিল না। আগেই অনুমেয় ছিল, ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলবে মামুনুলরা। খেলেছেও তাই। অনেক ফুটবলপ্রেমীই ফেসবুকে এ ম্যাচের পর মন্তব্য করেছেন, এ হারে দুঃখের কিছু নেই। কেননা আশির দশকে বাংলাদেশ ৯-০ গোলে হেরেছে ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে। সে তুলনায় এশিয়া চ্যাম্পিয়ন এবং চার বারের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫-০ গোলে হারাটা কিছুই নয়। ম্যাচটা ছিল একতরফা। এমন দলের বিপক্ষে তো আর সচরাচর আমাদের দেশের ছেলেরা খেলে না। প্রথমার্ধে তাদের বুঝে উঠতে উঠতেই ২৯ মিনিটের মধ্যে গোল হজম করে ফেলে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে তারা বেশ গোছানো ফুটবলই খেলে। মাত্র একটি গোল হজম করে। সবচেয়ে বড় কথাÑ এ ম্যাচটা খেলার ফলে এখন মামুনুলরা নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে একটা ভাল ধারণা পেয়েছেন। ফুটবলপ্রেমীরা আশা করছেন অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের অভিজ্ঞতা মামুনুলরা ভালমতোই কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন জর্দানের বিপক্ষে ম্যাচে।
×