ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পণ্য সরবরাহে ঘাটতি নিয়ে চট্টগ্রামে আত্মসাত মামলা

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পণ্য সরবরাহে ঘাটতি নিয়ে চট্টগ্রামে আত্মসাত মামলা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ঢাকার ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আমদানিকৃত পণ্য সীতাকু-স্থ ইউরো কারখানায় পৌঁছানোর সময় প্রায় সাড়ে ৫৩ মেট্রিকটন পণ্য ঘাটতির অভিযোগে সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট ও পরিবহন সংস্থার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কমার্শিয়াল ম্যানেজারসহ সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট ও পরিবহন সংস্থার কর্মচারী ও চালককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পণ্য সরবরাহের দু’মাস পর প্রায় ২৫ লাখ টাকা মূল্যের এসব পণ্য আত্মসাতের অভিযোগ আনা হলেও পরিবহন মালিক ও শ্রমিকের ডেলিভারি চালান ও কারখানায় প্রাপ্তির স্বাক্ষর অনুযায়ী সঠিক রয়েছে হয়রানিমূলক বলে অভিযুক্তরা দাবি করছেন। এদিকে, ঘাটতি পণ্য বিষয়ে তদন্তের পর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাক্ষরিত রিপোর্টে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকের এ বিষয়ে সম্পৃক্ততা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বন্দর থেকে সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট বাদল এ্যান্ড কোম্পানির ডেলিভারি চালান অনুযায়ী মেসার্স আরিফা পরিবহন সংস্থা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সীতাকু- এলাকাস্থ কারখানায় পণ্য পৌঁছে দেয়ার প্রমাণপত্র থাকার পরও কেন এ ধরনের মামলা দায়ের প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়াও পরিবহন সংস্থার ডেলিভারি চালানের শর্ত অনুযায়ী পরিবহনকালে পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে চালক কিংবা পরিবহন মালিক পক্ষ ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ আছে। কিন্তু পণ্য আনলোডিংয়ের সময় কোন ধরনের অভিযোগ না করে দু’মাস পর এ ধরনের অভিযোগ কতটা যৌক্তিক? এদিকে, সিএ্যান্ডএফ এজেন্টের ১১টি ডেলিভারি চালানমূলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক পণ্য পরিবহনের ১১টি ডেলিভারি চালানে ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ইউরো ফিডস লিমিটেড পণ্য বুঝে পাওয়ার স্বাক্ষর দিয়েছে। এমনকি এরপরও ওই পরিবহন মালিকের মাধ্যমে কারখানায় আরও তিনটি চালানে পণ্য পৌঁছে দেয়া হলেও ঘাটতি পণ্যের কোন অভিযোগ তোলা হয়নি। কিন্তু প্রায় ২ মাস পর গত ১৫ আগস্ট ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের শাখা প্রতিষ্ঠান ইউরো ফিডস লিমিটেডের কমার্শিয়াল অফিসার সাইফ উদ্দিন মিন্টু সীতাকু- থানায় প্রায় সাড়ে ৫৩ মেট্রিকটন পণ্য ঘাটতির অভিযোগ এনে একটি এজাহার দায়ের করেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মামলার বিবাদী পক্ষের কৌঁসুলি মোঃ লিটন জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, পণ্য সরবরাহের ডেলিভারি চালানে প্রাপ্তি স্বীকারের স্বাক্ষর প্রদানের দু’মাস পর ঘাটতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষ থেকে পরিবহন মালিকদের এ ঘটনায় কোন সংশ্লিষ্টতা নেই মর্মে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার পরও হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে আমার মক্কেলদের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম আদালত সূত্রে জানা গেছে, সীতাকু- থানায় দায়ের করা মামলার এজাহার অনুযায়ী ইউরো ফিডস লিমিটেডের কমার্শিয়াল অফিসার সাইফ উদ্দিন মিন্টুর দায়ের করা এজাহারে উল্লেখ করেছেন, এলসির মাধ্যমে ৯টি কন্টেনারে ব্রাজিল থেকে ২৫০ দশমিক ১৭ মেট্রিকটন ‘সয়বিন মিল’ চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা হয়। এসব পণ্য ডেলিভারি নেয়ার জন্য উত্তর পতেঙ্গাস্থ ভারটেক্স অব ডক কন্টেনার ডিপোতে প্রেরণ করা হয়। ডিপো থেকেই ওই সব পণ্য প্রতিষ্ঠানের কমার্শিয়াল ম্যানেজার সাবের আহমদের তত্ত্বাবধানে সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট বাদল এ্যান্ড কোং ট্রান্সপোর্ট এজেন্ট আরিফা পরিবহন সংস্থার মাধ্যমে সীতাকু-ের বাড়বকু-ের মাহমুদাবাদ এলাকার ইউরো ফিডস লিমিটেড (ইয়ন গ্রুপ) কারখানায় আনা হয়। কিন্তু কারখানায় ট্রাক স্কেল করার পর ৫৩ দশমিক ৩৫৫ মেট্রিকটন পণ্য কম পাওয়া যায়। এ বিষয়ে রফতানিকারক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান ‘কনকর্ডিয়া এ্যাগ্রিট্রেডিং পিটিই লিমিটেডকে পণ্যের ঘাটতি বিষয়ে অবগত করা হয়। সে অনুযায়ী সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানটি তাদের ফ্যাক্টরি স্কেল, লোডিং পোর্ট স্কেল এবং ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট স্কেল রিপোর্ট অনুযায়ী জানিয়েছে, এ ধরনের কোন ঘাটতি সেখানে ছিল না। ভারটেক্স ডিপোতে ট্রাক স্কেল থাকার পরও অভিযুক্ত কমার্শিয়াল ম্যানেজার সাবের আহমদ, সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট বাদল এ্যান্ড কোং, আরিফা পরিবহন সংস্থার কর্মচারী আবুল হাসনাত চৌধুরী ও কর্মচারী সঞ্জয় দাস রহস্যজনকভাবে ট্রাকগুলো স্কেলিং করেনি। বরং গত ২২ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ১১টি ট্রাকের মাধ্যমে সীতাকু- কারখানায় পণ্য ডেলিভারি দেয়। এর মধ্যে ৮টি ট্রাক তিন থেকে চার ঘণ্টা সময়ের পথ ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ব্যয় করায় ২৫ লাখ টাকা ঘাটতি পণ্যের বিষয়টি পরিকল্পিত চুরি উল্লেকপূর্বক এজাহার দায়ের করেছেন। তবে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের বিলম্ব দেখিয়ে মামলা দায়ের বিলম্বের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে ওই এজাহারে। অপরদিকে, সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট বাদল এ্যান্ড কোম্পানির পক্ষ থেকে ইয়ন এ্যানিমেল হেলথ প্রোডাক্টস লিমিটেডের আমদানিকৃত মালের মধ্যে আরিফা পরিবহনের মাধ্যমে গত ২২ জুন ৩৫০ ব্যাগ, ৩৪২ব্যাগ, ৩৪০ ব্যাগ, ৩৫০ ব্যাগ, ৪০০ ব্যাগ, ৩৫০ ব্যাগ ও ৩৪০ ব্যাগ এবং ২৩ জুন ২৬৫ ব্যাগ, ৩৯১ ব্যাগ, ৩৪০ ব্যাগ ও ৩৪০ ব্যাগ পণ্য কারখানায় পৌঁছে দেয়ার এবং প্রাপ্তি স্বীকারের স্বাক্ষর রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি এসব পণ্য সিঙ্গাপুর থেকে চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল রফতানির পর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে ২ জুন। সীতাকু- কারখানায় ক্লিয়ারিং এজেন্ট বাদল এ্যান্ড কোম্পানির ডেলিভারি চালানমূলে পরিবহন সংস্থা আরিফা পরিবহন চালানমূলে পণ্য প্রাপ্তির স্বাক্ষর প্রদান করা হয়েছে গত ২২ ও ২৩ জুন। কিন্তু এজাহারে ২৪ জুন পর্যন্ত ওই কারখানায় পণ্য পৌঁছানোর মিথ্যা তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও কারখানায় সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট ও পরিবহন সংস্থার পক্ষ থেকে পণ্য বুঝে নেয়ার প্রায় দুইমাস পর পণ্য ঘাটতির অভিযোগ এনে আত্মসাত বা চুরির মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই পরিবহন সংস্থা এ আমদানিকারকের আরও তিনটি চালান কারখানায় পৌঁছে দিলেও পূর্বের সরবরাহকৃত মালের বিষয়ে কোন অভিযোগ করেনি। এ ব্যাপারে ইয়ন গ্রুপের কমার্শিয়াল অফিসার সাইফ উদ্দিন মিন্টু জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আমাদের কারখানায় পণ্য ওজন করে নেয়া হয়নি। প্যাকেটজাত করা হয়েছে সিএ্যান্ডএফ এজেন্টের তত্ত্বাবধানে। পণ্য বুঝে নেয়া ও স্বাক্ষর প্রদান প্রসঙ্গে বলেছেন, যে কোন কারখানাই পণ্য বুঝে নিয়ে ডেলিভারির চালানে স্বাক্ষর করা হয়।
×