ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিবি পরিচয়ে অপহরণ চক্রের সাত সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ডিবি পরিচয়ে অপহরণ চক্রের সাত সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণকারী চক্রের ৭ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা। এ সময় নারীসহ অপহৃত দুইজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতরা হলো- জসিম (৩৫), শহিদুল ইসলাম বুলবুল (৪৫), সোহাগ হাওলাদার (২৩), সোহাগ মিয়া (২৯), মনির মাতুব্বর (২৫), সানাউল বেপারী (৪২) এবং নিপা বেগম (২৮)। শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। অপহরণকারী ৭ সদস্যের মধ্যে একজন নারীও রয়েছে। এ চক্রটি ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ করে। এ চক্রের কয়েক সদস্য মুক্তিপণ নিতে রাতে এয়ারপোর্ট এলাকার ফুটওভার ব্রিজের কাছে আসে। গোপনে খবর পেয়ে র‌্যব-১ এর একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ওই চক্রের কয়েক সদস্যকে আটক করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মতে অভিযান চালিয়ে ২ অপহৃতসহ চক্রের অন্য সদস্যদের আটক করা হয়। র‌্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, আটকদের কাছ থেকে একটি হাইচ মাইক্রোবাস, ৫০ হাজার টাকা, ১টি লোকালগান, ৬টি মোবাইল সেট, চুরি করা ১টি স্বর্ণের আংটি, ১টি হাতকড়া জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও অপহরণের কাজে ব্যবহৃত পাগলা মলমও জব্দ করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে। জানা যায়, ডিবি পরিচয়ে এ সংঘবদ্ধ চক্রটি একজন মধ্য বয়সী মহিলা ও তার ভাইকে অপহরণ করে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তারা মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতেও বলে। এ অভিযোগ পেয়ে র‌্যাবের একটি দল অপরাধীদের আটকসহ অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে তদন্তে নামে। এ সময়ে র‌্যাবকে না জানিয়েই অপহৃত ব্যক্তির পরিবার টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। কিন্তু অপরাধীদের ধরতে র‌্যাব তৎপর থাকে। এক পর্যায়ে প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই দলটিকে অনুসরণ করা হয়। অবশেষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুক্রবার র‌্যাব সদস্যরা মাইক্রোবাসসহ অপরাধীদের ঘিরে ফেলে। এ সময় অপহরণকারীদের আটক করা হয়। এ কাজে ব্যবহ্নত মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো চ-১৫-৩০৪২) তল্লাশি করে আসামি নিপা বেগমের ভ্যানিটি ব্যাগ হতে পঞ্চাশ হাজার টাকাসহ ১টি হাতকড়া, মোবাইলের সিম, মোবাইল ফোনের সেট, পাগলা মলম, লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার ও ডিবি লেখা লেমিনেটিং করা কাগজ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ১টি দেশী অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তারা এর আগেও একইভাবে আরও কয়েকজনকে অপহরণের পরে নির্মম নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয়। এদের দলনেতা জসিম যার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ইয়াবা, জালনোট, গাড়ি চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য ৮-১০টি মামলা রয়েছে। কিন্তু এসব মামলায় জামিনে বের হয়ে বর্তমানে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ ও ছিনতাই করা শুরু করে। এসব অপরাধের টাকা দিয়ে জসিম মাতুয়াইলে তার শ্বশুরালায়ে বাড়ি নির্মাণ করছে। এর আগে জসিম ডিবির সোর্স হিসেবে ৬/৭ বছর কাজ করেছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এরপর সে নিজেই ডিবির সহকারী কমিশনার পরিচয়ে অপারেশন টিম তৈরি করে মাইক্রোবাসে সাধারণ যাত্রীদের তুলে নির্যাতনের মাধ্যমে বিকাশ এবং অপহ্নত ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত। জিজ্ঞাসাবাদে জসিম আরও জানায়, রাজধানীতে ডিবি পরিচয়ে এ রকম আরও কয়েকটি অপহরণকারী গ্রুপ সক্রিয়। এ দলের অন্যতম বৈশিষ্ট মহিলা সদস্য নিপা, যাকে মহিলা যাত্রীবেশে মাইক্রোবাসে রেখে সাধারণ যাত্রীদের বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে গাড়িতে তুলে জিম্মি করা হতো।
×