ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত

সরকারী ওয়েবসাইটের বেহাল দশা, হালনাগাদ তথ্য নেই

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সরকারী ওয়েবসাইটের বেহাল দশা, হালনাগাদ তথ্য নেই

ফিরোজ মান্না ॥ সরকারী ওয়েবসাইটগুলোর বেহালদশা। কোন কোন দফতরের ওয়েবসাইট এক বছরেও আপগ্রেড হয়নি। আবার কিছু দফতরের ওয়েবসাইট আপগ্রেড করা হলেও তা হালনাগাদও নেই। হাতে গোনা কয়েকটি দফতরের ওয়েবসাইট হালনাগাদ রয়েছে। বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যয় করে জনসেবার জন্য এসব ওযেবসাইট নামেই রয়েছে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন দফতরের ওয়েবসাইট ঘেঁটে এমন অবস্থাই দেখা গেছে। সরকারী ওয়েবসাইট সচল রাখার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগ্রহের অভাব আর অনীহা থাকায় জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও দফতরসমূহের জন্য ২৫ হাজার সরকারী ওয়েবসাইট তৈরি করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ওয়েবসাইটগুলোর বেশিরভাগ আপগ্রেড করা হয় না। কিছু মন্ত্রণালয় ও দফতরের ওয়েবসাইট আপগ্রেড করা হয়। তবে সেগুলোও দু-তিন দিন পর পর আপগ্রেড হচ্ছে। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে এসব ওয়েবসাইট তৈরি করা হয় গত বছর। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ওয়েবসাইটগুলোর উদ্বোধন করেছিলেন। অদক্ষতা আর অনীহার কারণে ওয়েবসাইটগুলো আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে। জনগণ এসব ওয়েবসাইট থেকে হালনাগাদ কোন তথ্য পাচ্ছেন না। অথচ জনস্বার্থে ওয়েবসাইটগুলো তৈরি করা হয়েছিল। এটুআই সূত্র জানিয়েছে, ৬১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, ৩৪৫ অধিদফতর, ৭ বিভাগ, ৬৪ জেলা, ৪৮৮ উপজেলা, ৪ হাজার ৫৫০ ইউনিয়নের জন্য ২৫ হাজার ওয়েবসাইট তৈরি করে সংশ্লিষ্টদের দেয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটগুলো আপগ্রেড করার জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, অধিদফতর, উপজেলাসহ ইউনিয়ন পর্যন্ত একজন করে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। তারা অনেক সময় ইচ্ছা করেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদফতরের তথ্য হালনাগাদ করেন না। কাজটা করতে তাদের অনেক অলসতা। আবার এ কাজে রয়েছে অনীহাও। সরকারের সফলতার তথ্য তুলে ধরতে অনেকেই আবার আগ্রহ দেখান না। কারণ সরকারের ভেতরে এমন কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢুকে আছেন যারা সরকারের ভাল চান না। অনেক টাকা ব্যয় করে ওয়েবসাইটগুলো তৈরি করেও কোন ফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। সরকারের সফলতা, বিভিন্ন দফতরের হালনাগাদ তথ্য মানুষ জানতে পারছেন না। প্রতিটি ওয়েবসাইটে গড়ে ৪০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। মোট টাকার হিসাবে দেখা যাবে তিন কোটি টাকা লেগে গেছে। এত টাকা ব্যয় করে ওয়েবসাইট তৈরি করেও জনগণের কোন লাভ হচ্ছে না। এটুআইয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দেশের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকারের কর্মসূচী সুকৌশলে এভাবে নষ্ট করা হচ্ছে। অনেক মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, উপজেলার কর্মকর্তারাও এ বিষয়টি খেয়াল করেন না। ইউনিয়ন পরিষদ দূরের কথা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর বেশিরভাগই এর কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। যদি বিষয়গুলো মনিটর বা দেখাশোনা করার জন্য একটি দফতর তৈরি করা হতো তাহলে এসব ওয়েবসাইটের কার্যক্রমগুলো ভালভাবে চলতে পারত। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ও কাজটি করতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও বেসিসের সহযোগিতায় এক বছরের বেশি সময় আগে এই পোর্টালগুলো তৈরি করা হয়। এজন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর একটি গেজেট প্রকাশ করে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এই ওয়েবপোর্টালের তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লেগেছে আড়াই বছর। সরকার প্রদত্ত সব ধরনের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেই আমাদের এই ওয়েবপোর্টাল বা ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। জনসেবার জন্য জন্যপ্রশাসন। এমন এক ধারণা থেকেই ওয়েবসাইট গুলো করা হয়। একই সঙ্গে প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম-দুর্নীতি রোধেও ওয়েবসাইটগুলো ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রকল্প একসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) আওতায় তৈরি হয়েছে এই ওয়েবসাইটগুলো। দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পুরাকীর্তি, ঐতিহাসিক স্থানগুলোর চার লাখের বেশি ছবি সংযোজন করা হয়েছে ওয়েবসাইটগুলোতে।
×