ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ

ঢালাওভাবে ঋণ পুনঃতফসিল নয়

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ঢালাওভাবে ঋণ পুনঃতফসিল নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢালাওভাবে শর্তসাপেক্ষে ঋণ হিসাব পুনঃতফসিল না করতে কার্যরত ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান। বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যাংকার্স সভার স্বাগত বক্তব্যে গবর্নর এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে এ ধরনের শর্ত সাপেক্ষে ঋণ পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালার আলোকে খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল করতে হবে। সভায় দেশে কার্যরত সরকারী-বেসরকারী ব্যাংগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নররা উপস্থিত ছিলেন। গবর্নর বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে এখন অর্থনীতি সচল রয়েছে। তাই বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ বন্ধ করার উপযুক্ত সময় এখনই। যদিও বিগত সময়ে বিশেষ বিবেচনায় ৬০০-৭০০ প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃতফসিলে অনাপত্তি প্রদান করেছি। এ ছাড়াও নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে গ্রাহকের ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন বিবেচনা করতে সভায় উপস্থিত ব্যাংকারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে আমদানি ঋণপত্র খোলা এবং নিষ্পত্তির পরিমাণ ছিল ৪৩ দশমিক ১ ও ৩৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এ সময় তিনি ব্যাংক ঋণের সুদহার আরও কমানোর পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজ ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ তথ্য যাচাইয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনকে এককালীন নিবন্ধন চার্জ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা, প্রতিটি তথ্য প্রতিবার যাচাইয়ের জন্য দুই টাকা হারে চার্জ প্রদান করলে এবং প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহকের তখ্য যাচাই করার প্রয়োজন হলে ব্যাংকগুলোকে বড় অংকের চার্জ পরিশোধ করতে হবে। উল্লিখিত চার্জ কমানোর ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের চার্জ সংক্রান্ত প্রবিধানমালার ১১ ধারায় সংশোধনী আনতে হবে। তাই আপনারা সরাসরি অথবা এবিবির মাধ্যমে উক্ত চার্জ কমানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশ করতে পারেন। ঝুঁকিমুক্ত আয়-মুনাফা বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়ে গবর্নর আরও বলেন, আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যথাযথ ঋণ নিয়মাচার মেনে গুণমানের ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক ও মনোযোগী হতে হবে। এছাড়াও গ্রামেগঞ্জের স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল কেনার জন্য কনজ্যুমার ফাইন্যান্সিং এবং অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের সরকার প্রদত্ত সম্মানী ভাতার বিপরীতে বাড়ি তৈরির জন্য হাউস ফাইন্যান্স এর আওতায় স্বল্প সুদে-সহজ শর্তে ঋণ প্রোডাক্ট চালু করার আহ্বান জানান গবর্নর। এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে আপনাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ-মার্জিন অনুপাত শিথিল করার বিষয়টি বিবেচনা করবে। গবর্নর নতুন ঋণ প্রস্তাব মূল্যায়ন, ঋণ মঞ্জুরি, ঋণ বর্ধিতকরণসহ নবায়ন ও ঋণ হিসাব ব্যবস্থাপনায় অনুসরণীয় নিয়মাচার পালনে সতর্ক নজরদারির মধ্যে রাখার নির্দেশ দেন। মঞ্জুরিকৃত ঋণ একবারে বা এক চেকেই বিতরণ না করে পার্ট-বাই-পার্ট বিতরণের ব্যবস্থা করার কথাও বলেন। বিতরণকৃত ঋণের সদ্ব্যবহার যাচাই করে ঋণের পরবর্তী কিস্তি বিতরণ করবেন। যে কোন শাখার গুরুতর অনিয়মের জন্য প্রথমে আপনাকেই জবাবদিহি করতে হবে। লোকসানী শাখাগুলোকে লাভজনক শাখায় পরিণত করতে না পারলে ব্যর্থতা আপনাদের ওপরই বর্তাবে। শক্তিশালী ও টেকসই ব্যাংকিং খাত গড়ে তুলতে সুনির্দিষ্ট দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে আপনারা সক্রিয় ও সচেষ্ট থাকবে আপনারা দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও দূরদর্শিতা প্রয়োগ করবেন। গবর্নর বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিএসআরের টাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মতো একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, উন্নত মানসম্পন্ন ও অত্যাধুনিক হাসপাতাল স্থাপন করার প্রয়োজন। যেখানে আর্থিক খাতের কর্মী এবং তাদের পৌষ্যরা অপেক্ষাকৃত কম বা ন্যূনতম খরচে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সুবিধা পাবেন।
×