ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কর্তৃপক্ষের অস্পষ্ট অবস্থানে অসন্তোষ বাড়ছে

অনার্সে ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অনার্সে ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা

বিভাষ বাড়ৈ ॥ কোন পদ্ধতিতে হবে অনার্স ভর্তি? ভর্তি পরীক্ষা, নাকি এসএসসি ও এইচএসসির ফলের ভিত্তিতে? শিক্ষা জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না সারাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারী বেসরকারী কলেজগুলোতে ভর্তিচ্ছু লাখ লাখ শিক্ষার্থী। আগামী ১ অক্টোবর থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও জানানো হয়নি কোন পদ্ধতিতে ভর্তি হবে শিক্ষার্থীরা। জুন মাসে এক অনুষ্ঠানে উপাচার্য ভর্তি পরীক্ষা উঠিয়ে দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসির ফলের ভিত্তিতে ভর্তির কথা জানালেও এ নিয়ে এখন আর কেউ কথা বলছেন না। অনিশ্চয়তায় পড়ে ইতোমধ্যেই ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষের অষ্পষ্ট অবস্থানে অসন্তোষ বাড়ছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার কিছু না বললেও জানা গেছে, চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না তারা। কয়েক দফা বৈঠক হলেও এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে আছেন কর্তাব্যক্তিরা। একাধিক কর্মকর্তা বৈঠকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদের কাছে শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তার কথা তুলে ধরলেও তিনি বলেছেন, ভর্তি বিজ্ঞপ্তির সময় বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে। উপাচার্যের এমন নির্দেশের পর এখন আর কেউ গণমাধ্যমের কাছেও পরিষ্কার করতে রাজি হচ্ছেন নাÑ আসলে ভর্তির বিষয় কী করা হবে? চলতি বছর এসএসসির ফলের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিকের ভর্তি প্রক্রিয়ায় গিয়ে যে কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে সে কারণেও ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করার বিপক্ষে অনেক কর্মকর্তা। অনেক শিক্ষাবিদও এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছেন। জানা গেছে, সারাদেশের অনার্স পর্যায়ের কলেজগুলোতে সব সময় ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রক্রিয়াটি শেষ করা হয়। অনলাইনে আবেদন করে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে এ নিয়ে বিড়ম্বনাও কমেছে। কিন্তু এবার জুন মাসে হঠাৎ করেই উপাচার্য সিনেট অধিবেশনে জানান, এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এসময় তিনি ভর্তি কার্যক্রম এগিয়ে আনা এবং ১ ডিসেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান। বিষয়টি নিয়ে এক মাস ধরে পরীক্ষার্থীদের দিক থেকে আপত্তি উঠলেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হওয়ায় বড় ধরনের কর্মসূচী দেননি তারা। এরই মধ্যে সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির বৈঠকের পর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষের কাছে ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার দাবি জানানো হলেও এ বিষয়ে কোন তথ্যই দেয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, আগামী ১ অক্টোবর থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা হবে নাকি অন্য কিছু হবে কিছুই জানানো হয়নি। কয়েক দিন ধরে এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা হলেও কোন সাড়া নেই কর্তৃপক্ষের। তাদের একটিই উত্তর, পরে জানানো হবে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অবস্থানকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচী শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছে। প্রকাশ করেছে খোলা চিঠি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদসহ কলেজগুলোর অধ্যক্ষরাও। মেডিক্যাল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জিপিএ ভিত্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছু হটেছেÑ এ বিষয়টিও তারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বর্তমান জিপিএ ভিত্তিতে মেধা মূল্যায়ন নিয়ে বির্তক রয়েছে। সেখানে উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে যদি এই বির্তকিত পদ্ধতিকে মেধা মূল্যায়নের মাপকাঠি ধরা হয় তবে তা বির্তকিত থেকে যাবে। আর কিভাবে হবে তাও যদি অষ্পষ্ট রাখা হয় তাতে অস্থিরতা বাড়তে পারে। শিক্ষাবিদরা ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের চিন্তারও সমালোচনা করেছেন। এ পদ্ধতি চালু করার সময় এখনও আসেনি। পাবলিক পরীক্ষায় গণহারে পাস করছে ঠিকই কিন্তু মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হঠাৎ করে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করলে অনেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই বলছে, এবার একাদশ শ্রেণীতে জিপিএ ভিত্তিতে ভর্তিতে যে বিড়ম্বনায় পড়েছিল শিক্ষার্থীরা তাতে সকলের কাছে এ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন আছে। আর এটি যেহেতু উচ্চশিক্ষার ভর্তি সেখানে অবশ্যই মেধার ভিত্তিকে সঠিক মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে; অন্যথায় আন্দোলন। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা একটি খোলা চিঠিও পাঠিয়েছে উপাচার্যের কাছে। সেখানে তারা বলেছে, যে জিপিএ নিয়ে এখনও বিতর্ক কাটেনি, সে পদ্ধতিতে ভর্তি করানো হলে পুরো প্রক্রিয়াই প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে। কারণ মেধা ও যোগ্যতা যাচাই ছাড়াই কেবল এসএসসি ও এইচএসসি একাডেমিক সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে করার সময় এখনও আসেনি। শিক্ষার্থীরা আরও বলেছে, শুধু জিপিএ’র ভিত্তিতে ভর্তি করলে মেধার সঠিক মূল্যায়ন কখনই সম্ভব হবে না। কারণ আমরা যারা গ্রামের বা মফস্বলের ছাত্রছাত্রী তারা নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে শহরের ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় অনেকাংশেই পিছিয়ে পড়ি। এর মধ্যে অন্যতম কারণ ভালমানের কলেজ ও শিক্ষকের অভাব ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা। এদিকে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করছেন না কর্তৃপক্ষ। ভর্তির দায়িত্বে থাকা অন্যতম কর্মকর্তা ও ডিন অধ্যাপক মোবাশ্বেরা খানম জনকণ্ঠকে বলেন, এখনই এটা বলা যাচ্ছে না। কিন্তু ভর্তির সময় বলা হলেও কিভাবে ভর্তি হবে তা তো কেউ জানতে পারছে না। এ বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, শীঘ্রই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে। অপর ডিন অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, হ্যাঁ, মানুষ জানতে চায় তবে আমার মনে হয় এখনও ফাইনাল কিছু সিদ্ধান্ত হয়নি। হলে জানানো হবে। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর এ বিষয়ে জানান, কোন পদ্ধতিতে হবে তা বিজ্ঞপ্তির সময়ই বলা হবে। তবে যেহেতু কিছু এখনও বলা হয়নি, তাই ধরে নিতে হবে আগের ঘোষণাই এখনও বহাল আছে।
×