ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল

বিকেলের পর রোগী ভর্তি করা হয় না

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বিকেলের পর রোগী ভর্তি করা হয় না

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ার জনগুরুত্বপূর্ণ আড়াইশ’ শয্যার সরকারী মোহাম্মদ আলী হাসপাতপালে গত ১৭ বছর ধরে অর্থোপেডিক, কাার্ডিয়াক বিভাগ নেই। অন্তঃবিভাগীয় (ইন্টারনাল) মেডিক্যাল অফিসারও শূন্য। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসারের (ইএমও) কয়েকটি পদ শূন্য থাকায় জরুরী চিকিৎসার বিঘœ ঘটছে। ইএমও মেডিক্যাল অফিসার না থাকায় বিকেলের পর সাধারণত রোগী ভর্তি করা যায় না। রেফার করা হয়। অনেক পদ শূন্য থাকায় কখনও বাগান পরিচর্যার মালিকে দিয়ে আউটডোর রোগীর টিকিট বিক্রি করানো হয়। কখনও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী দিয়ে ওষুধ বিতরণের কাজ চলে। সীমিত সাধ্য নিয়ে এক অচলায়তনের মধ্যেও জেলার একমাত্র জেনারেল হাসপাতালটি পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের সুনাম এবং অনেকটা দালালমুক্ত থাকায় সাধারণ মানুষ এই হাসপাতালে পরিষেবা নিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। প্রতিদিন বহির্বিভাগেই ১২শ’ থেকে ১৪শ’ রোগী সেবা নিতে আসে। ভিড় সামলাতে যারপর নেই হিমিশিম খেতে হয় ডাক্তার ও প্রশাসনকে। ১৯৯৮ সালে একশ’ শয্যার এই হাসপাতালকে আড়াইশ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়। লোকবল পূর্বে যা ছিল তাই আছে। যত শয্যা বেড়েছে সেই অনুপাতে চিকিৎসকসহ অন্য পদে লোক বাড়নো হয়নি। এই হাসপাতালে যে কিভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে তার কিছু উদাহারণ- অর্থোপেডিক বা হাড়হাড্ডিজনিত কোন রোগী এলে তার চিকিৎসা দেয়া যায় না। কোন কারণে জরুরী ভিত্তিতে কোন রোগী এলে কোন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অর্থোপেডিক সার্জনকে বিশেষ ব্যবস্থায় ডেকে এনে পরিষেবা দিতে হয়। সার্জারির প্রয়োজন হলে অপারেশন থিয়েটারে সার্জনকে সহযোগিতা করার অর্থোপেডিক সহকারী মেলে না। এভাবে যতদিন তিনি সেবা দেন ততদিন আগত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অর্থোপেডিক সেবা বন্ধ থাকে। চলে গেলে হাসপাতালের পূর্বাবস্থা। একই অবস্থা কার্ডিয়াক রোগীর ক্ষেত্রে। দিনে দিনে হৃদরোগ আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে অথচ বড় এই হাসপাতালে কার্ডিয়াক কনসালটেন্ট নেই। শৈল্য (সার্জারি) বিভাগে মাত্র ২ জন এ্যানাসথেসিস্ট (অচেতন করার ডাক্তার) দিয়ে অপারেশন থিয়েটার চলছে। রুটিন অপারেশনে অনেক সময় এনাসথেসিস্ট না পাওয়ায় মেজর অপারেশন পিছিয়ে দিতে হয়। উল্লেখ্য এই হাসপতালে সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের রোগী ভর্তিও থাকে বেশি। কারণ বড় অপারেশনও হয় এই হাসপাতালে। হাসপাতালে আড়াইশ’ শয্যার উপযোগী লোকবল চেয়ে উর্ধতনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ফাইল নড়েনি। অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। এই বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার সামির হোসেন মিশু জানালেন, সীমিত সাধ্য নিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা চলমান রাখা হয়েছে। লোকবল বাড়ালে এ সব ত্রুটি দূর হবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। বিকেলের পর রোগী ভর্তি না করার পিছনে কারণ দেখিয়ে বলেন, হয়তো এমন জটিল রোগী এলেন সেই মুহূর্তে লোকবল সঙ্কটে জরুরী ভিত্তিতে ওই বিভাগের চিকিৎসক মিলল না। তখন বাধ্য হয়ে রেফার করতে হয়। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসারকে (ইএমও) পালাক্রমে ডিউটি করতে হয়। কখনও মাত্র ২ জন ইএমও দিয়ে চালাতে হয় দিনের পর দিন। এ অবস্থায় জরুরী সেবার বিঘœ ঘটে। হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট, জুনিয়র কনসালটেন্ট, মেডিক্যাল অফিসার আরএমওসহ অন্যান্য বিভাগ যেমন প্রশাসন উপসেবা নার্স ওয়ার্ড মাস্টার মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান ফার্মাসিস্ট হিসাব বিভাগ ইত্যাদি মিলিয়ে পূর্বের অর্গানোগ্রাম বহাল আছে। সামান্য যা বেড়েছে তা সিন্ধুতে বিন্দু। দেশে তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন হয়েছে, এই হাসপাতালে সাধারণকে তথ্য প্রদানের কোন তথ্য অফিসার নেই। হাসপাতালের একটি এ্যাম্বুলেন্স ২ হাজার ৪ সালে এসেছে। গত প্রায় এক যুগে প্রোপার সার্ভিসিং বা রিপ্লেসমেন্ট না হওয়ায় রোগী বহনের জন্য কোন রকমে খুব কম দূরত্বের শহর এলাকার মধ্যে চলাচল করতে পারে। তাও সংশয়, পথে না জানি এ্যাম্বুলেন্সই রোগী হয়ে যায়।
×