ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিকবিরোধী সরকারী নীতির প্রতিবাদে ১৫ কোটি শ্রমিক কর্মচারীর বন্্ধ পালন

ভারতে জনজীবন বিপর্যস্ত

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ভারতে জনজীবন বিপর্যস্ত

ভারতে শ্রম আইনের পরিবর্তনের প্রতিবাদে এবং সরকারী খাতের উদ্যোগগুলোর বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রতিহত করতে বুধবার কোটি কোটি কর্মী ২৪ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘট (বন্্ধ) পালন করলে অধিকাংশ শহরে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ১০টি ট্রেড ইউনিয়ন এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। খবর হিন্দুস্তান টাইমস ও জিনিউজের। ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ১৫ কোটিরও বেশি কর্মী ধর্মঘটে যোগ দেয়। তাদের মধ্যে ব্যাংকিং ম্যানুফ্যাকচারিং, নির্মাণ ও কয়লাখনি খাতের কর্মীরাও ছিলেন। বিজেপি সমর্থিত ভারতীয় মজদুর সংঘ এবং ন্যাশনাল ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস এ আন্দোলনে অংশ নেয়নি। ধর্মঘটের ফলে দেশজুড়ে পরিবহন ও ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ভোরেই বাস স্টপগুলোতে অফিসযাত্রী ও স্কুলশিশুদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। ট্যাক্সি ও রিক্সা রাস্তায় না নামায় যাত্রীরা বিমানবন্দরে আটকা পড়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিকবিরোধী নীতির প্রতিবাদে লাখ লাখ ব্যাংক ও বীমাকর্মী ধর্মঘটে যোগ দেয়ায় আর্থিক সেবা ব্যাহত হয়। অল ইন্ডিয়া ব্যাংক এমপ্লয়ীজ এ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি সিএইচ ভেঙ্কটচলম আইএএনএসকে বলেন, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বেসরকারী খাতের পুরনো ব্যাংক, সমবায় ব্যাংক এবং আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংকগুলো ওই ধর্মঘটে যোগ দেয়। কলকাতায় উপশহরগুলোতে ট্রেন চলাচলের ওপর ধর্মঘটের আংশিক প্রভাব পড়ে। অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট, মার্কেট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসন বহুসংখ্যক সরকারী বাস চালানোর ব্যবস্থা নেয়, তবে বেসরকারী বাস ও ট্যাক্সি চলাচলের ওপর ধর্মঘটের আংশিক প্রভাব পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে কোন কোন জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। রাজধানী শহরে পুলিশ ধর্মঘটী শ্রমিকদের বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধস্তাধস্তি হয়। মুর্শিদাবাদে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা সিপিআই (এম) কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে একপক্ষের হাতে অপরপক্ষের সম্পত্তি বিনষ্ট হয়। বিহারে কংগ্রেস ও বামপন্থী দলগুলোর ট্রেড ইউনিয়নভুক্ত শ্রমিকরা জাতীয় ও রাজ্য মহাসড়কগুলোতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এবং কোন কোন স্থানে যাত্রীবাহী ও দূরপাল্লার ট্রেনগুলো থামিয়ে দেয়। বিহারের রাজধানী পাটনা ও অন্যত্র যানবাহন চলাচল ধর্মঘটের কারণে গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়। পাটনা ও অন্যান্য জেলাতে অটোরিক্সা ও বাস চলাচল বন্ধ থাকে। পুলিশের এক কর্মকর্তা এ কথা জানান। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও চ-িগড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বাস চলাচল ব্যাহত হয়, কিন্তু ধর্মঘট সরকারী খাতের অধিকাংশ ব্যাংকের ওপর খুব একটা প্রভাব ফেরতে পারেনি। কেরলে সরকারী ও বেসরকারী বাস, ট্যাক্সি ও অটোরিক্সা রাস্তায় দেখা যায়নি। মাত্র কিছুসংখ্যক গাড়ি ও মোটরসাইকেল রাস্তায় চোখে পড়ে। রাজ্যে দোকানপাট, হোটেল ও এমনকি চায়ের ছোট ছোট দোকানও বন্ধ থাকে। বাম-শাসিত ত্রিপুরায় রাস্তায় যানবাহন চলেনি, ব্যাংক, স্কুল ও কলেজ বন্ধ থাকে এবং সরকারী দফতরগুলোতে উপস্থিতির হার ছিল খুবই স্বল্প। কর্নাটকে জোরপূর্বক ধর্মঘট চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও রাস্তায় ট্যাক্সি ও অটো চলাচল বন্ধ থাকে। ছাত্রদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে স্কুল-কলেজগুলো ছুটি ঘোষণা করা হয়। ধর্মঘটের সবচেয়ে কম প্রভাব পড়ে তামিলনাড়ুতে। সেখানে স্কুল ও কলেজ যথারীতি খোলা থাকে এবং সিটি বাস ও অটোরিক্সা রাস্তায় চলাচল করে। ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ১২ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ, বেকারত্ব রোধ, মৌলিক শ্রম আইন কঠোরভাবে বলবত করা, সব শ্রমিককে সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা এবং ন্যূনতম মজুরি মাসিক ১৫ হাজার রুপী ধার্য করা। তারা শ্রমিকদের জন্য পেনশনের পরিমাণ বৃদ্ধি, সরকারী খাতের উদ্যোগগুলো থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার বন্ধ করা, বাইরের ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানো বন্ধ করা এবং বোনাস ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর থেকে স্পিলিং প্রত্যাহার দাবি করছে।
×