ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মৈত্রী সড়কের পথে

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মৈত্রী সড়কের পথে

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ দরজাগুলো খুলে যাচ্ছে একে একে। মৈত্রীর বন্ধন তৈরি ও সুদৃঢ় করে তোলার সুবর্ণ মুহূর্ত এসে দাঁড়িয়েছে সামনে। এখনই সময় পায়ের চিহ্ন ধরে বয়ে যাওয়া পথের নিশানা মজবুত করার। যোগাযোগের ক্ষেত্রগুলোকে সম্প্রসারিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ হয়ে পড়েছে তাই জরুরী। প্রতিবেশীর রুদ্ধদ্বার সটান খুলে যাক, আসা-যাওয়ার পথ হোক সুগম- এমন স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ণের এসে গেছে দিন। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, সীমান্তবর্তী এলাকায় সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং পর্যটনশিল্পে উন্নয়ন ঘটাতে সবাই মনস্থির করেছেন। হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার দিন এখন সামনে। উদার আকাশ, বিস্তীর্ণ প্রান্তরে বসবাসরত মানুষেরা পারস্পরিক সৌহার্দ্য, মৈত্রী আর ভ্রাতৃত্ববোধে আপ্লুত হোকÑ এটা সবারই কাম্য। হিংসা, বিদ্বেষ, সহিংসতা পরিহার করে অহিংস চেতনাকে সমুন্নত রেখে পথচলার দিন এসে গেছে বুঝি। দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী পার হয়ে গেলেও সাধারণ প্রতিবেশীদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাত, চিন্তা-চেতনা ও মতের আদান-প্রদান হয়নি তেমন অথচ সুপ্রতিবেশী মানেই সুসম্পর্কের দুয়ার খোলা রাখা। সুখে-দুঃখে আপনজন হয়ে ওঠার ক্ষেত্রই তৈরি হয়নি অথচ বাংলাদেশ চায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব প্রান্তে পৌঁছে যেতে। আসা-যাওয়ার পথের কাঁটাগুলো দূরীভূত করে সমমর্যাদায়, পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে গড়ে তুলতে সুসম্পর্ক। মিয়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে গভীর সম্পর্কের সেতু গড়ে তুলতে হবে। পারাপারের দিগন্তগুলো আরও সম্প্রসারিত করে তাতে সকলের জন্য সমতাভিত্তিক মৈত্রীর বন্ধনকে সুদৃঢ় করে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের ইচ্ছাটা এখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আর তাই বাংলাদেশ চায় মিয়ানমারের সঙ্গে মৈত্রী সড়ক তৈরি হোক। এর মধ্য দিয়ে খুলে যাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার, বিশেষ করে চীন ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের দরজাগুলো। বাংলাদেশ চায় প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সম্পর্কোন্নয়ন, দু’দেশের মধ্যে নীরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা, চীন ও থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন। এসব দেশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে তাই সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক। বালুখালী-ঘুমদুম সীমান্ত সড়কটি নির্মাণের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সম্পর্কোন্নয়ন জোরদার করা হবে। ট্রান্স এশিয়ান সড়ক নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বান্দরবানের রাইক্ষংছড়ি পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে। ২০১৭ সালের মধ্যে কাজটি শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমদুম পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও অর্থায়নের অভাবে কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের এপ্রিলে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনও করেন। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করাই যায়নি। রেল যোগাযোগ স্থাপন আপাতত থমকে থাকা অবস্থায় একই রুটে এবার সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ চায় এই অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন না ঘটলে বাণিজ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হওয়া সহজসাধ্য হবে না। রাজনৈতিক দিক থেকে মিয়ানমারকে সামরিকায়ন হতে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে সংযোগের সুফল মিলবে না। উভয় দেশের মৈত্রীর পথে প্রতিবন্ধক মূলত রোহিঙ্গা সমস্যা, যার সমাধান হলে দু’দেশের মধ্যে বসন্ত বাতাস বয়ে যাবে। দুটি দেশ হবে আরও সমৃদ্ধ।
×