ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারপন্থী আইনজীবীদের সারাদিনের দাবির ফলে সন্ধ্যায় ভোট গণনা শুরু

৪০ বছরের রীতি ভেঙ্গে বিএনপির দাবি মেনে নেন এ্যাটর্নি জেনারেল

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

৪০ বছরের রীতি ভেঙ্গে বিএনপির দাবি মেনে নেন এ্যাটর্নি জেনারেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক ভোট গণনা। সারা দেশের ৭৭ কেন্দ্র থেকে পাওয়া ভোট গণনা শেষ হলেই ঘোষণা করা হবে বার কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক ফল। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে বার কাউন্সিল ভবনে ভোট গণনা শুরু হয়ে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চলছিল। এর আগে দুপুর দুটায় ভোট গণনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবী প্যানেলের দাবির মুখে তা স্থগিত করেন বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বার কাউন্সিলের চিরাচরিত নিয়ম ভেঙ্গে ব্যালট পেপার গণনার দাবি তুলেছিল বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা। এর ফলে প্রথম দফায় রবিবার এবং পরে বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার জন্য দিন ঠিক করেন এ্যাটর্নি জেনারেল। তবে সরকার সমর্থক আইনজীবী প্যানেলের জোরালো দাবির মুখে বুধবারই চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্র থেকে পাওয়া টেবুলেশন সিটের মাধ্যমে ভোট গণনা শুরু করেন বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে দুপুরে বার কাউন্সিল ভবনে উপস্থিত হন দুই পক্ষে প্রার্থীরাই। দুপুর আড়াইটায় কাউন্সিলের সভাকক্ষে ভোট গণনার উদ্দেশে বসেন তারা। এর পর বিএনপি-জামায়াত সমর্থক প্যানেলের প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন টেবুলেশন সিট গণনার পরিবর্তে ব্যালট পেপার গণনার দাবি জানিয়ে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বার কাউন্সিল আইনের ১৫ (২) ধারার কথা উল্লেখ করেন; যেখানে ব্যালট পেপার গণনার বিধান রয়েছে। তবে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে পাঠানো টেবুলেশন সিট গণনার মাধ্যমেই বার কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। পরে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যেহেতু নির্বাচনটা সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ করণে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সুপ্রীমকোর্টেই ভোট গণনা কোন্ প্রক্রিয়ায় হবে সে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে। পরে তিনি রবিবার পর্যন্ত ভোট গণনা স্থগিত করেন। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান সরকার সমর্থক প্যানেলের প্রার্থীরা। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর পর বিএনপি-জামায়াত সমর্থক প্যানেলের সদস্যরা সভাকক্ষ থেকে উঠে চলে যায়। পরে সরকার সমর্থক আইনজীবী প্যানেলের (সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ) প্রার্থীরা বুধবারই ভোট গণনা শুরু করতে এ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জোরালো দাবি জানান। এ সময় বার কাউন্সিলের বর্তমান সদস্য ব্যারিস্টার তানিয়া আমির বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে তথা বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে বার কাউন্সিলের নির্বাচনে টেবুলেশন সিট গণনা করার একটা নিয়ম চলে আসছে। এমনকি বার কাউন্সিলে বর্তমানে যে কমিটি (খন্দকার মাহবুব হোসেন যেখানে ভাইস-চেয়ারম্যন) রয়েছে তারাও টেবুলেশন সিট গণনার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, তাহলে কেন শেখ হাসিনার সরকারে এসে এ্যাটর্নি জেনারেল চিরাচরিত এই নিয়ম ভাঙবেন। পরে ব্যারিস্টার এম আমির-উল-ইসলাম আসেন বার কাউন্সিলে। তিনিও চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী বার কাউন্সিলের নির্বাচনের ভোট গণনার জন্য জোরালো দাবি তোলেন এবং বুধবারই ভোট গণনার জন্য জোর দেন। এ সময় সরকার সমর্থক আরেক প্রার্থী এ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদারও প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ভোট গণনার জন্য দাবি তোলেন। এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, আব্দুল মতিন খসরু, কেএম সাইফুদ্দিন, মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে সরকার সমর্থক আইনজীবী প্যানেলের জোরালো দাবির মুখে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ভোট গণনা শুরুর ঘোষণা দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বার কাউন্সিলের সচিব (জেলা ও দায়রা জজ) আ ক ম জহুরুল আলম। উল্লেখ্য, গত বুধবার অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলের সমর্থক আইনজীবীদের মোর্চা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যানেল) প্রর্থীরা সংস্থার ১৪ আসনের মধ্যে ১০টি পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। কয়েকটি সূত্রের দেয়া অনানুষ্ঠানিক ফল পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে সাধারণ সাত আসনের মধ্যে ৪টিতে এবং সাতটি গ্রুপ আসনের মধ্যে ৬টিতেই জয়লাভ করে সরকার সমর্থকরা।
×