ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার ছাত্র ও ছাত্রলীগের তিন নেতা বহিষ্কার

শাবিতে শিক্ষকদের র‌্যালি সমাবেশ, ভিসিকে সরিয়ে নেয়ার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শাবিতে শিক্ষকদের র‌্যালি সমাবেশ, ভিসিকে সরিয়ে নেয়ার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষকরা দু’দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো কালোব্যাজ ধারণ করে র‌্যালি শেষে সমাবেশে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অন্যদিকে হামলায় জড়িত থাকার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চার শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও তিন ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে শিক্ষকরা কালোব্যাজ ধারণ, মৌনমিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচী পালন শেষে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি, কালোব্যাজ ধারণ, র‌্যালি ও সমাবেশ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন ও কালোব্যাজ ধারণ এবং ওই দিন সমাবেশ করে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফারুক উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম, অধ্যাপক মস্তাবুর রহমান, অধ্যাপক হাসানুজ্জামান শ্যামল, মিরাজুল ইসলাম, আনোয়ারুল ইসলাম, মুহিবুল আলম প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা সরকারের কাছে দ্রুত ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। শিক্ষক নেতা ফারুক উদ্দিন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ছাত্রসংগঠনকে যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এ রকম ন্যক্কারজনক কাজে লেলিয়ে দিয়েছে আগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। এই দুর্নীতিবাজ ভিসিকে বিশ^বিদ্যালয়ের স্বার্থে এখান থেকে সরিয়ে নেন। অধ্যাপক হাসানুজ্জামান শ্যামল বলেন, এই বিশ^বিদ্যালয়কে আমরা তিলে তিলে এতদূর এনেছি। আর এই ভিসি বিশ^বিদ্যালয়কে সবার সামনে ভ্রান্তভাবে তুলে ধরার চেষ্টায় আছেন। আমাদের নিজেদের হাতে গড়া এই বিশ^বিদ্যালয়ের সম্মানকে আমরা কোনভাবেই একটা ভ্রান্ত ভিসির হাতে তুলে দিতে পারি না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দের আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম বলেন, ভিসি নাকি গত রবিবারের ঘটনা মিডিয়ার মাধ্যমে তার পরের দিন জেনেছেন। ৩০ আগস্ট শিক্ষকদের হামলা করার সময় যারা ওনার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের নিয়ে তিনি একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। উনি আমাদের এই ডিজিটাল বিশ^বিদ্যালয়টিকে এনালগের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা সত্যাগ্রহ আন্দোলন করছি। পরীক্ষা আমাদের কর্মসূচীর আওতামুক্ত। এ সময় অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করেন। সমাবেশ শেষে মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, আগস্ট মাসটা এমনই আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। এই আগস্ট মাসে শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা এর চেয়ে কষ্টদায়ক কিছু হতে পারে না। ভিসি অভিযোগ করছে শিক্ষকরা নাকি তাকে আক্রান্ত করেছে। এই বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ রকম না। যে শে^তপত্র প্রকাশ করা হয়েছে সেটার প্রতিটা লাইন ধরে এগিয়ে যাক তারপর দেখা যাবে অভিযোগ সত্য কিনা। শিক্ষক সমিতির নিন্দা ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নিন্দা জানিয়েছে শাবি শিক্ষক সমিতি। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কবীর হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে সুষ্ঠ তদন্তসাপেক্ষে শিক্ষকদের ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। এ ছাড়া গত চার মাসে বিশ^বিদ্যালয়ে যে সমস্ত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত এবং যথাযথ করলে বিশ^বিদ্যালয়ে স্থিতিশীলতা ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এদিকে, শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনার শাবি প্রশাসন চার শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কৃতরা হলো- আরিফুল ইসলাম, ধনীরাম রাজ, জাহিদ হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন। এরা ছাত্রলীগের কর্মী বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, হামলায় জড়িত থাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সাইদ আকন্দ, সহ-সভাপতি অঞ্জন রায়, ১ম যুগ্ম সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজকে সাময়িক বহিষ্কার করে। এ তিনজনই হামলা পরবর্তী শাবি ছাত্রলীগ কর্তৃক গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন। গত রবিবার বিকেলে শাবিপ্রবি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছিলেন। তবে শাবির আন্দোলনকারী শিক্ষকদের নেতা ফারুক উদ্দিন জানান, আবু সাইদ আকন্দ, অঞ্জন রায় ও সাজিদুল ইসলাম সবুজ রবিবার সকালে শিক্ষকদের ওপর হামলায় সরাসরি অংশ নেয়। প্রসঙ্গত, গত রবিবার ভিসির অপসারণ দাবিতে মহান মুক্তিযুদ্ধেও চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের শিক্ষকরা প্রশাসনিক ভবন-২ এর সমানে অবস্থান কর্মসূচী পালন করতে গেলে ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা করে ব্যানার কেড়ে নেয়। এ ঘটনায় অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকসহ ১০জন শিক্ষক আহত হন। শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শাবিসহ সারাদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে।
×