ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপচিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অপচিকিৎসা

দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী প্রতিদিন নানাভাবে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। রাজধানীসহ সারাদেশের অলিগলিতে এ চিকিৎসার নামে বহু চিকিৎসাকেন্দ্রও গড়ে উঠেছে। পোস্টার, লিফলেট ও বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলে অরুচিকর বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত এক ধরনের প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে কিছু প্রতিষ্ঠান। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এসব ভুয়া চিকিৎসককে গ্রেফতার বা শাস্তি দিলেও কিছুদিন পর আবার সদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে অপচিকিৎসা। জাদুটোনার বিষয়গুলো কোনভাবে বিজ্ঞানসম্মত নয়। অথচ এসব অপচিকিৎসা চলছে অহরহ এবং দেশের সর্বত্র। গাছ-গাছড়ার ভেষজ চিকিৎসা থেকে শুরু করে আকুপাংচার, হাইড্রোথেরাপি, এ্যারোমাথেরাপি ইত্যাদি ব্যতিক্রমী চিকিৎসা বিভিন্ন দেশে চালু আছে। হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক কিংবা ইউনানী পদ্ধতিতে চিকিৎসার জন্য অনেক দেশে সরকারীভাবে হাসপাতালও রয়েছে। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য রোগীকে সুস্থ করা, তা সম্ভব না হলে উপসর্গগুলো কমানো; কিন্তু কোনভাবেই ক্ষতি করা নয়। অথচ আমাদের দেশে একটি অসাধু চক্র বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ভেষজ চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকাÑ যা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। যে পদ্ধতিতেই চিকিৎসা দেয়া হোক না কেন, তার পেছনে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকা দরকার। জীবন রক্ষার নামে যে চিকিৎসা তা নিয়ে মনগড়া যা খুশি তা করার সুযোগ নেই। এসব অপচিকিৎসায় বেশি প্রতারিত হচ্ছেন স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ। কথিত প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে কাজ করে। হাতিয়ে নেয় তাদের সহায়সম্বল। বিভিন্ন জটিল রোগের নাম করে ইউনানী, হারবাল, কবিরাজি, তদবির, দাওয়াখানা ইত্যাদি নানা স্টাইলে চিকিৎসার নামে চলছে চরম প্রতারণা। এক্ষেত্রে তারা চটকদার বিজ্ঞাপনকে কাজে লাগাচ্ছে। কোন কোন স্থানে তারা বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কৌশলে ছবি তুলে পরে ওই ছবি বড় করে অফিসে ঝুলিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতে। যে কোন রোগের চিকিৎসা শতভাগ গ্যারান্টি সহকারে করে থাকে। এদের অনেকেরই চিকিৎসা দেয়ার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই। অথচ তারা সব কঠিন ও জটিল রোগের চিকিৎসা করে আসছে। এ ধরনের ভুয়া চিকিৎসকদের কেউ কেউ ওষুধ প্রশাসনের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে হাত করে নিয়ে নিয়েছেন ড্রাগ লাইসেন্সও। এসব ওষুধের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়, যা মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে ঝাড়ফুঁক-এর নামে শুধু অর্থেরই অপচয় হচ্ছে না, মানুষের জীবনহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে মেতে ওঠা এসব চক্র দেশের বিভিন্ন স্থানে যে অপচিকিৎসার জাল ছড়িয়েছে তা বন্ধ করা জরুরী।
×