ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাইবার চৌর্যবৃত্তির বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন

চীনাদের ওপর শীঘ্রই নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

চীনাদের ওপর শীঘ্রই নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্র চীনাদের সাইবার চৌর্যবৃত্তিকে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে। চীনারা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যসংক্রান্ত মূল্যবান তথ্য হ্যাক করার ফলে চীনের যেসব কোম্পানি ও ব্যক্তি লাভবান হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, তাদের ওপর নজিরবিহীন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। রবিবার ওয়াশিংটন পোস্ট এ কথা জানায়। খবর ইয়াহু নিউজের। পত্রিকাটিতে বলা হয়, ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কিনা, সেই সম্পর্কে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত খুব শীঘ্রই সম্ভবত আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দফা তথ্য-উপাত্ত চুরির পেছনে চীনা হ্যাকারদের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ বোধ বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুই অর্থনীতির দেশের সম্পর্কে এক বিরক্তিকর বিষয় হয়ে রয়েছে। অথচ চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এটিই হবে সেদেশে তার প্রথম সফর। ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এক সরকারী সংস্থার কম্পিউটারে বড় ধরনের হ্যাকিং চালানোর ঘটনায় চীনকেই সবচেয়ে বেশি সন্দেহ করা হচ্ছে। এতে অন্তত ৪২ লাখ বর্তমান ও সাবেক সরকারী কর্মীর ব্যক্তিগত রেকর্ডপত্র হ্যাকারদের জানা হয়ে যায়। মার্কিন সরকারী কর্মকর্তা ও সাইবার বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনা হ্যাকাররা বিশাল ডাটাবেজ গড়ে তুলতে উচ্চ প্রযুক্তির কৌশলকে কাজে লাগাচ্ছে। এ ডাটাবেজকে গুপ্তচর সংগ্রহের মতো বা অন্যান্য নেটওয়ার্কের সুরক্ষিত ডাটা খুঁজে বের করার মতো প্রচলিত গুপ্তচরবৃত্তির জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ রিপোর্ট সম্পর্কে কোন তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেননি। পররাষ্ট্র দফতর কোন মন্তব্য জানানোর অনুরোধে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেয়নি। প্রশাসনের এক উর্ধতন কর্মকর্তা অনুসন্ধানের এক জবাবে বলেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সাইবার হ্যাকারদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা নিয়ে চলতি বছরের প্রথমদিকে এক নির্বাহী আদেশে সই করেন। তখন ওবামা বলেন, প্রশাসন এরূপ তৎপরতায় জড়িতদের মোকাবেলায় এক ব্যাপক কৌশল অনুসরণ করছে। কর্মকর্তা বলেন, ওই কৌশলের মধ্যে রয়েছে কূটনৈতিক আলোচনা, বাণিজ্য নীতিকে কাজে লাগানো, আইন প্রয়োগ করা এবং নির্দিষ্ট গুরুতর, অশুভ সাইবার তৎপরতায় লিপ্ত হয়Ñ এমন ব্যক্তিদের কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। তিনি বলেন, আমরা আমাদের পছন্দমতো উপায়ে ও সময়ে এসব হুমকির মোকাবেলা করতে আমাদের সব বিকল্প পথ মূল্যায়ন করে দেখছি। এক প্রশাসন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, নিষেধাজ্ঞা আরোপের এ সম্ভাবনা প্রশাসন অর্থনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি রোধ করার পদক্ষেপ নেয়া শুরু করছে বলে বেজিংয়ের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছে। এটি চীনকে বলছে, যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। শি’র সফরের এত কাছাকাছি সময়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা থেকে বোঝা যায় যে, মার্কিন কর্মকর্তারা অব্যাহত সাইবার চৌর্যবৃত্তির কারণে খুবই হতাশ হয়ে পড়েছেন। চীনাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ প্রেসিডেন্ট ওবামার এপ্রিলে সই করা ওই আদেশের প্রথম ব্যবহারই হবে। এর মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক সাইবার হামলা বা সাইবার জগতে বাণিজ্যিক গুপ্তচরবৃত্তিতে লিপ্ত হয় এমন বিদেশী ব্যক্তি বা কোম্পানিগুলোর আর্থিক সম্পদ ও সম্পত্তি আটক করা এবং তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন নিষিদ্ধ করা যাবে। চীনই একমাত্র দেশ নয়, যা এর অর্থনীতির সহায়তাকল্পে বাণিজ্য সম্পর্কিত গোপন তথ্যের জন্য মার্কিন কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলো হ্যাক করে থাকে। কিন্তু চীনই সবচেয়ে সক্রিয় বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। মাত্র গত মাসে এফবিআই জানায় যে, অর্থনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনাগুলো গত বছর শতকরা ৫৩ ভাগ বৃদ্ধি পায় এবং সেজন্য চীনই প্রধানত দায়ী।
×