ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি

নাগরিক জীবন গ্যাস ও বিদ্যুত ছাড়া অচল। গৃহস্থালি, শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ সব ক্ষেত্রেই গ্যাস ও বিদ্যুত অপরিহার্য। এই অপরিহার্য সেবা পেতে এখন অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে দেশের মানুষকে। কারণ এবার একসঙ্গে বাড়ানো হয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। বলা যায় অপ্রত্যাশিতভাবেই গ্রাহক পর্যায়ে এই দাম বাড়ানো হলো। গণশুনানির প্রায় ছয় মাস পর মূল্য বৃদ্ধির এ ঘোষণা দেয়া হয়। এবার বিদ্যুতের দাম ২ দশমিক ৯৭ ও গ্যাসের দাম ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়িয়েছে বিইআরসি। সর্বশেষ দাম বাড়ানোর সময় বিইআরসির বক্তব্য ছিল এরপর দাম কমানো হবে। এটি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বিষয়ক প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। অন্যদিকে গ্যাস শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবেÑ এমন অজুহাত দিয়ে এর দাম বাড়ানো হলেও নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার বা আমদানিতে সেভাবে নজর দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুত ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে দেশের উৎপাদন, বিনিয়োগসহ সার্বিক অর্থনীতির ওপর। প্রতিবারই ভর্তুকি কমানোর কথা বলেছে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিদ্যুতের দাম বাড়লেও পিডিবি ও বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিগুলোর ভর্তুকি কমেনি। প্রশ্ন হলো, ভর্তুকি না কমিয়ে ভোক্তা-গ্রাহকদের ওপর বার বার চাপ দেয়ার যুক্তি কী? ভর্তুকি কমাতে উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর দেয়া দরকার। এই ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রগুলো সচল এবং নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র চালুর ব্যবস্থা করা দরকার। বিদ্যুত ও গ্যাস উৎপাদন, বিতরণ কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। সিস্টেম লসও কমিয়ে আনা হয়নি। দেখা যাচ্ছে, গ্রাহক স্বার্থরক্ষার জন্য তৈরি করা প্রতিষ্ঠানই আজ যেন জনগণের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেকের নিচে নেমেছে। এতে বিদ্যুত উৎপাদনে খরচ কমার কথা। তেলের দাম কমলে কারখানাগুলোর বিদ্যুত উৎপাদনের খরচ কমে আসত। অথচ বিদ্যুতের দাম না কমিয়ে বাড়ানো হয়েছে। আর এই দুর্মূল্যের বাজারে চলতি মাস থেকেই অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে মানুষকে। বাড়তি খরচের তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। নিয়ম অনুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে গণশুনানি করাতে হয়। এবারও গণশুনানি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই গণশুনানির তোয়াক্কা করেনি। বরং বিইআরসি আগে থেকে নেয়া সিদ্ধান্তেই অটল থেকেছে। অনেকে বলছেন, গণশুনানি এখন লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। গ্যাস, বিদ্যুত, পানিসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে যোগান দেয়া প্রতিটি সেবা ও সামগ্রীর দাম বাড়ানো-কমানোর ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার আগে জনগণের ভাল-মন্দের দিকটি ভাবা দরকার। মূল্য বৃদ্ধি কতটা যৌক্তিক তা বিবেচনা করা জরুরী। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে পরিবারের খরচ প্রত্যক্ষভাবে বাড়বে। বিশেষ করে ভাড়াটিয়াদের। কারণ রাষ্ট্রীয় যোগান দেয়া প্রতিটি সেবার বিল এখন পরিশোধ করতে হয় ভাড়াটিয়াদের। বাড়বে পণ্য ও গণপরিবহনে ব্যয়। তেমনি প্রভাব পড়বে ক্ষুদ্র শিল্প খাতেও। শিল্পের ব্যয় বাড়বে। মোট কথা, বিদ্যুত-জ্বালানির দাম বাড়লে সবকিছুর দামের ওপর এর প্রভাব পড়ে। আর শেষ পর্যন্ত তা বহন করতে হয় ভোক্তা সাধারণকে। তাই গ্রাহকদের স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে এই মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
×