ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তিন

বিদেশী কূটনীতিকদের পাশে রাখতে চায় সরকার

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বিদেশী কূটনীতিকদের পাশে রাখতে চায় সরকার

তৌহিদুর রহমান ॥ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে বিদেশী কূটনীতিকদের পাশে রাখতে চায় সরকার। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরাণার্থী আসার পর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে দেশে-বিদেশে এ সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আর সেই ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। সে অনুযায়ী গত ১০ আগস্ট ঢাকায় বিদেশী কূটনীতিকদের রোহিঙ্গা শুমারির বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে সরকার থেকে যে শুমারির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটা ইতোমধ্যেই ঢাকার বিদেশী কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরকারের অবস্থানও বিদেশীদের সামনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ঢাকার বিদেশী কূটনীতিকদের বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে স্বচ্ছ থাকতে চায় সরকার। তাই তাদের বিষয়ে যে কোন পদক্ষেপই বিদেশী কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়। সে অনুযায়ী সর্বশেষ রোহিঙ্গা শুমারির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে তাদের অবহিত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি তুলে ধরেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে বিদেশী কূটনীতিকদের সফরের সময়ও বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসা হচ্ছে। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি করেছেও মিয়ানমার। তাই মিয়ানমারকেই এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তরিকভাবে আগ্রহী ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া আরও অনেক দেশের পক্ষ থেকেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন সময়ে এসব দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়ে থাকে। রোহিঙ্গাদের বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। আবার কোন কোন দেশ রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগও করে চলেছে। সে কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিদেশীদের সহায়তা চেয়ে আসছে সরকার। গত সপ্তাহে ওআইসি মহাসচিব আইয়াদ আল আমিন মাদানি ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান। আর রোহিঙ্গা ফেরতের বিষয়ে কোন ভূমিকা না নেয়ার জন্য সে দেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী অংসান সূচীরও তীব্র সমালোচনা করেন মাদানি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মিয়ানমার বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা জুডিথ ক্যাফকিন গত বছর ঢাকা সফরের সময় রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তুলে ধরে সরকার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে খুব স্পষ্ট করে ওই মার্কিন উপদেষ্টাকে জানিয়ে দেয়া হয়, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসন চায় সরকার। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাও চাওয়া হয়। এদিকে গত বছর মিয়ানমারে বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় সাড়ে তিন দশক ধরে ঝুলে থাকা রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি মিয়ানমারের নিকট তুলে ধরা হয়। সে সময় মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আশ্বাস দেয়। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি, স্পীকার ও মিয়ানমারের ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি দলের চেয়ারম্যান অং সান সুকির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনা করেন। সে সময় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি আশ্বাসও দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি এবং তাদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনকে তাগিদ দিয়ে আসছেন। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের আচরণের কড়া সমালোচনাও করেছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে কয়েকবার মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের প্রতি চাপ অব্যাহত রেখেছে। এদিকে বর্তমানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জোর করে বাঙালী হিসেবে স্বীকার করতে বাধ্য করা হচ্ছে। যারা স্বীকার করছেন না, তাদের আটক ও নির্যাতন করা হচ্ছে।
×