ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাবিতে হামলার ঘটনায় বিভিন্ন মহলের নিন্দা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শাবিতে হামলার ঘটনায় বিভিন্ন মহলের নিন্দা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবিলম্বে অপসারণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক-সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠেছে। একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করে ভবিষ্যতে এরকম জঘন্য ঘটনা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন রাজনীতিবীদ, শিক্ষাবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, পেশাজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা। সোমবার পৃথক পৃথক বিবৃতিসহ সমাবেশ থেকে এসব দাবি ওঠে। জাপা ॥ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছলার ঘটনায় জাতীয় পাটির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক যুক্ত বিবৃতিতে পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বলেছেন, সম্মানিত শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। শিক্ষকদের উপর জঘন্য হামলা চালিয়ে শিক্ষাঙ্গনকেই কলঙ্কিত করা হয়েছে। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার উপযুক্ত বিচার না হলে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে। তাই অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃটান্তমূলক শাস্তির বিধান করতে হবে। বি চৌধুরী ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের দ্বারা দৈহিকভাবে আক্রমণ করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন। সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন বি চৌধুরী বিবৃতিতে বলেন, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ছাত্ররা শিক্ষকদের দৈহিকভাবে আক্রমণ করেছে, এই ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ঘটনার পরপরই গণমাধ্যমে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জাফর ইকবালের গলায় দড়ি দেয়ার উক্তি উদ্ধৃত করে বি চৌধুরী বলেন, ড. জাফর ইকবাল নয়, গলায় দড়ি দেবেন সেইসব রাজনৈতিক নেতারা, যারা নিজের শিক্ষক এবং মাতৃসম মহিলা শিক্ষকদের দৈহিকভাবে আক্রমণ করার জন্য নিজ দলের ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়েছেন। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বা একাধিক বিচারপতির সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা প্রতিরোধে অবিলম্বে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সুরঞ্জিত ॥ ছাত্রদের নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে শিক্ষকদের উপর লেলিয়ে দেয়ার অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে থাকার কোন নৈতিক ভিত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সোমবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত এক আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজের স্বার্থে ছাত্রদের ব্যবহার করে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকার কোন নৈতিক ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, এর আগেও মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান করেছিল। এখনও শিক্ষামন্ত্রীর উচিত ত্বরিতগতিতে সিলেট গিয়ে সমস্যার সমাধান করা। তিনি বলেন, শিক্ষকদের ঘটনায় ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে পড়ায় আমরা বিব্রত। আমি মনে করি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অবশ্য এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দাবি করেছে, এ ঘটনায় সংগঠনের কোন নেতাকর্মী জড়িত নয়। নির্মূল কমিটি ॥ আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগ নামধারী গু-াদের হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সোমবার সংগঠনের সভাপতি বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, সহ সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, ভাস্কর ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী, চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আখতার ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াসমিন হকসহ আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় সন্ত্রাসী, গু-াদের নজিরবিহীন হামলার সংবাদ আমাদের অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ আমরা গত ছয় বছর ধরে ক্রমাগত বলছি-ছাত্রলীগের ভেতর সুপরিকল্পিতভাবে শিবিরের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের ভাবমূর্তি ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে আকুল আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে অধ্যাপক ইয়াসমিনসহ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর জঘন্য হামলার জন্য দায়ী ছাত্রলীগের নামধারী গু-াদের সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য। একইসঙ্গে এহেন গু-ামির প্রশ্রয়দাতা শাবির বিতর্কিত উপাচার্যকে অবিলম্বে অপসারণের জন্য। পেশাজীবীদের নিন্দা ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ। সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী পেশাজীবীদের সংগঠন এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমাজ উদ্দীন আহমদ বলেন, সিলেটে শিক্ষকদের উপর যে হামলার ঘটনা ঘটল, যারা ঘটিয়েছে এদের আমি ছাত্র বলতে চাই না। তারা ছাত্রনামধারী সন্ত্রাসী। এদের ধরা উচিত ছিল। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি তীব্র ঘৃণা বোধ করছি। “জয় বাংলা সেøাগান দিয়ে তারা শিক্ষকের গায়ে হাত তুলল, অথচ সরকারী দলের রিলেভেন্ট কোন জায়গা থেকে এখন পর্যন্ত কোন নিন্দা পেলাম না। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এমাজ উদ্দীন আহমদ বলেন, আপনারা সাধারণ জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন পান। আপনাদের দায়িত্ব সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শিক্ষকদের উপর যখন হামলা হলো তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? আলোচনায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী ওই ঘটনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতি খেদ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, কালকে সিলেটে এত বড় একটা ঘটনা ঘটল, অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিশ্চুপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তরফ থেকে কোন প্রতিবাদ উঠল না। ছাত্রলীগ এই অবস্থায় কিভাবে গেল? এজন্য দায়ী ঢাবি উপাচার্য। ছাত্র সংসদ নির্বাচন কত বছর ধরে বন্ধ? যদি ছাত্রসংসদ নির্বাচন হতো তাহলে হয়ত আজ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটত না।
×