ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়া

রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে আমিই যে গুম হব না তার গ্যারান্টি কোথায়

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩১ আগস্ট ২০১৫

রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে আমিই যে গুম হব না তার গ্যারান্টি   কোথায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুম, খুন ও সন্ত্রাস চলছে বলে অভিযোগ করে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্ত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। গুম ও খুনের সঙ্গে সরকার সরাসরি জড়িত অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই সরকারের কাছে এর তদন্ত বা বিচার দাবি করে লাভ নেই। তবে একদিন না একদিন এই গুম, খুন ও সন্ত্রাসের বিচার হবেই। রবিবার সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক গুম-খুন দিবস উপলক্ষে নিখোঁজ দলীয় নেতাকর্মীর স্বজনদের সহমর্মিতা জানাতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। নিজের গুম হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমি এবং আমরা যে কোন সময় গুম হয়ে যেতে পারি। আমি নিজেই যে গুমের শিকার হব না এ গ্যারান্টি দিতে পারি না। জানি না কতদিন এভাবে বেঁচে থাকতে পারব। আমাদেরও মেরে ফেলা হবে না তা আমরা বলতে পারি না। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকারই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে মানুষ গুম করছে। আর এজন্যই সরকার অনেক আন্তর্জাতিক দিবস পালন করলেও গুম দিবস পালন করে না এবং অন্য কাউকেও তা পালন করতে দেয় না। এ দিবসটি পালন করতে তাদের লজ্জা ও ভয় হয়। দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নেই। তাই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দাবি করেছি। গুম-খুন ও সন্ত্রাসের ঘটনার তদন্ত করতে দেশের একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনেরও দাবি জানান খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া বলেন, গুম দিবসে স্বজনহারারা এই সরকারের কাছে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। কিন্তু আমরা জানি, এ ‘অবৈধ’ সরকার তাদের কথার কোন প্রতিদান দেবে না। তাই আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করছি। যাতে স্বজনহারা মানুষগুলো তাদের স্বজনদের ফিরে পায়। তিনি বলেন, স্বজনহারারা মানবেতর জীবনযাপন করলেও সরকার তাদের স্বজনদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোন আশ্বাস দিচ্ছে না। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি নিখোঁজ দলীয় নেতাকর্মীদের স্বজনদের সঙ্গে খালেদা জিয়া কুশল বিনিময় করেন। এ সময় তারা স্বজনদের নিখোঁজ হওয়ার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে নিখোঁজ বিএনপি নেতাদের স্বজনরা একে একে বক্তব্য দিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে তাদের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। পরে খালেদা জিয়া তাদের সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানিয়ে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, শামসুজ্জামান দুদু, প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে নিখোঁজ বিএনপি নেতাকর্মীর স্বজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা, নোয়াখালীর হাজীরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারকের স্ত্রী পারভিন আক্তার, লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার ও তার ছোট ভাই গোলাম ফারুক, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের মা খাদিজা বেগম, ঢাকার তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া যুবদলের সভাপতি সাজিদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন ও বোন ফেরদৌসী, মোঃ ইয়াকুব আলীর ভাই মোঃ আল আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মুন্নার মা ময়ুরী বেগম ও বাবা মোঃ শামসুদ্দিন, আব্দুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী, আদনান চৌধুরীর মা কানিজ ফাতেমা, কাওসারের মা কমলা খাতুন, বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনের স্ত্রী ফারজানা, গুলশান থানা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক সাইফুর রহমান সজিবের বাবা শফিকুর রহমান, সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহেনা বানুসহ প্রমুখ। খালেদা জিয়া বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আজ কঠিন হুমকির সম্মুখীন। বিশেষ করে ভিন্নমতাবলম্বী রাজনীতিক নেতাকর্মীরা বর্তমান অগণতান্ত্রিক-কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে ব্যাপকভাবে গুমের শিকার হয়েছেন। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে দমন করতে গিয়ে এ সরকারের আমলে আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মী গুম-অপহরণের শিকার হয়েছেন। দেশে গুম-অপহরণ বন্ধে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্রতিষ্ঠা ও সব নাগরিকের নিরাপত্তার দাবি সরকার উপেক্ষা করে চলেছে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশে আজ কারও কোন মৌলিক অধিকার নেই। কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করার অধিকার নেই। শুধু অধিকার যারা ক্ষমতায় আছে তাদের রয়েছে। তারা বড় গলায় মিথ্যা কথা বলতে পারে। তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকারকেও আমরা সজাগ করতে চাই। যারা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি চাই। দেশে আগে কখনও গুমের ঘটনা ঘটেনি। এটা আওয়ামী লীগের সময় শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে মেধাবী ছেলেরা নেতৃত্ব দিতে না পারে এজন্যই তাদের ধরে ধরে গুম করা হচ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, আজকে খবরের কাগজ খুললেই খুন, গুম ও নারী নির্যাতন। এর সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ জড়িত। লীগ ওয়ালারা এসব কাজে ব্যস্ত। আমরা কোন দেশে বাস করছি? তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানি ও নির্যাতন করা হচ্ছে। তারা বলছে, বিএনপির লোকেরা পেট্রোলবোমা মেরেছে, বাসে আগুন দিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। কিন্তু কারা এসব করেছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এসব করেছে সরকারের লোকেরা। আমাদের আন্দোলন বন্ধ করার জন্য, মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা পেট্রোলবোমা মেরেছে, গাড়িতে আগুন দিয়েছে, মানুষকে হত্যা করেছে। পুলিশতো নিজেরাই এসব স্বীকার করেছে। পুলিশ বলেছে, সরকারের নির্দেশে তারা বিরোধীদলের আন্দোলনকে বানচাল করতে গাড়িতে আগুন দিয়েছে, পেট্রোলবোমা মেরেছে। পেট্রোলবোমাসহ আওয়ামী লীগের লোক ধরা খেয়েছে, তাদের বিচার হয়নি। তারা ভাল আছে। খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশকে আজকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে এই আওয়ামী লীগ সরকার। তারা দেশের ইমেজ নষ্ট করে দিয়েছে। তিনি বলেন, জোর করে হলেও এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। আজকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনরা সরকারের কাছে তদন্ত দাবি করেছেন। কিন্তু আমি জানি, এই সরকার সুষ্ঠু তদন্ত করবে না। সেজন্যই আমরা জাতিসংঘের অধীনে সকল গুমের তদন্ত দাবি করছি। তিনি স্বজনহারাদের উদ্দেশে বলেন, আজকে আপনাদের সান্ত¡না দেয়া ছাড়া কিছুই করার নেই।
×