ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৩০ আগস্ট ২০১৫

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রায় ১৫ বছর আগেও ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ঢাকা ডুবত না। এখন প্রায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে গোটা শহর খালে পরিণত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাল, জলাশয়, দখলসহ নদী হারিয়ে যাওয়াই এর মূল কারণ। তাছাড়া ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেমের সঙ্গে ১৪টি প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকলেও ২/১টি ছাড়া ড্রেন সংরক্ষণে কেউ কাজ করে না। ৩০ বছরে ঢাকা উন্নয়নের সঙ্গে ড্রেনেজ পদ্ধতিও মানানসই নয়। দিন দিন রাজধানী শহরকে উঁচু বানানো হচ্ছে। নিচু হচ্ছে নদী। ঢাকার চারপাশজুড়ে নদীগুলোতে চার দশমিক পাঁচ মিটার পানি থাকলে বাইরের পানি টানতে পারে না। এজন্য নগরের পানি সরে না। সমাধানের জন্য ড্রেনগুলো আরও গভীর করতে হবে। সকল সংস্থাসমূহের মধ্যে একক নিয়ন্ত্রণ বা নগর সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। গঠন করতে হবে সমন্বিত ড্রেনেজ কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। এর আগে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সমস্যা চিহ্নিত করে টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। এসব কিছুর জন্য প্রয়োজন কঠোর রাজনৈতিক পরিকল্পনা। শনিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ভবনে ‘নগর ঢাকায় জলজট : উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এসব মতামত তুলে ধরেন। ডিএসসিসির আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স, ঢাকা ওয়াসা, স্থপতি ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ। এতে স্থপতি, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগে একটি পৃথক অথরিটি গঠনের প্রস্তাব দেন। রাজধানীর বর্জ্য সম্পদ হিসেবে দেখে তা কাজে লাগাতে বেসরকারী সংস্থার পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনকে এগিয়ে আসলে জলাবদ্ধতা সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বক্তারা বলেন, চলমান ড্রেনগুলো সচল করা হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে এটা হবে আপদকালীন দ্রুত পদক্ষেপ। ফেরত আনতে হবে দখল হওয়া নদী, খাল, বিল ও জলাশয়। বন্ধ করতে হবে ইস্টার্ন বাইপাসের কার্যক্রম। বিশেষজ্ঞরা বলেন, উত্তরা থার্ড ফেজে ৫৩ একর জমি দখল করে বিক্রি করেছে রাজউক। এ কারণে ওখানে জলাবদ্ধতা হবে। মীরপুর ২৭ নম্বর, বাড্ডা, মতিঝিল, নাজিমউদ্দিন রোড, রাপা প্লাজা, ফার্মগেট, মালিবাগ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, বেইলীরোড, মগবাজার, মৌচাসহ আরও কয়েকটি পয়েন্টে জলাবদ্ধতা বেশি হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। সেমিনারে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, জনগণ সঙ্গে থাকলে আদর্শ ঢাকা গড়ে তুলতে পারব। দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকার জলজট, ঢাকার দুঃখ। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এর সমাধান করতে হবে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরুর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে যেন ৫০ ভাগ কাজ শেষ করতে পারি। সাঈদ খোকন বলেন, প্রত্যেক জনগণ নিজেকে মেয়র ভাবলে নগরীর সমস্যা সমাধান হবে। আনিসুল হক আরও বলেন, বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তুলতে সকলের সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই। নগর সরকার বিষয়ে দুই মেয়র বলেন, নগর সরকারের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকারের সুযোগ নেই। তবে এই মুহূর্তে নগর সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। আরও সময় লাগবে। ঢাকার যানজটকে অন্যতম সমস্যা উল্লেখ করে তারা বলেন, এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সকলের মধ্যে ঐক্য থাকলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ঢাকাকে সিঙ্গাপুরের চেয়েও উন্নত করা সম্ভব। নগর সরকার না হওয়া পর্যন্ত মেয়ররা ছায়া হিসেবে কাজ করলে ঢাকা বদলে যাবে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি। গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, ঢাকার উঁচু নিচু কোনটি এখন বোঝা মুশকিল। এখন আমাদের পরিকল্পনা নিতে হবে বৃষ্টির পর কত মিনিটে পানি সরানোর জন্য পরিকল্পনা নেব। এজন্য ১৫ মিনিট থেকে আধাঘণ্টার মধ্যে পরিকল্পনা নেয়ার তাগিদ দেন তিনি। বলেন, ঢাকার নদীগুলো খালের মতোই আক্রান্ত। ১৪টি প্রতিষ্ঠান ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও দু’একটি ছাড়া কেউ কাজ করে না। মোট কথা হল, বিল-খাল-নদী ফেরত আনতে না পারলে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। ধোলাইনখাল-মান্ডা-জিরানী এই তিন খাল এক করে হাতিরঝিলের মতো করার প্রস্তাব দেন এই বিশেষজ্ঞ। পান্থপথের ৮০ ভাগ বক্স কালভার্ট ভরাট থাকার কথাও জানান তিনি। ঢাকার নদী রক্ষায় মেগা প্রকল্প নেয়ার কথা জানান পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক সুলতান আহমেদ। জলাবদ্ধতাসহ নাগরিক সঙ্কট সমাধানে নগর সরকারের প্রস্তাব দিয়ে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে যে কোন মূল্যে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। ড্রেন, পার্ক, বর্জ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি বিষয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে কাজ করলে সঙ্কট কমে আসবে। নগরীকে রক্ষায় জলাশয় ও সবুজায়নের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। ড্রেনের মাস্টার প্ল্যানে কোন অবস্থাতেই ভুল না করার পরামর্শ দিয়ে ওয়াটার এইডের ড. মোহাম্মদ লিয়াকত আলী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি সঙ্কট সমাধানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যেতে পারে। স্থপতি মাকসুদ সিনহা বলেন, নগরীর ৮৫ ভাগ ময়লা রিসোর্স হিসেবে কাজ করে। তাই বর্জ্যরে রিসাইকেল প্রজেক্ট না করলে সঙ্কট কমবে না। স্থপতি আবু সাঈদ আহমেদ বলেন, ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়ার পর নির্মাণকালীন সময়ে শর্ত মানা হচ্ছে কিনা, তা দেখার কেউ নেই। ফলে ইচ্ছামতো ভবন নির্মাণ হচ্ছে। নির্মাণ বিধিমালা না মেনে ভবন নির্মাণ করলে সংস্থাগুলোকে কোন প্রকার সেবা না দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
×