ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গা শুমারি শুরু, শেষ হবে এক বছরের মধ্যে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৩০ আগস্ট ২০১৫

অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গা শুমারি শুরু, শেষ হবে এক বছরের মধ্যে

তৌহিদুর রহমান ॥ প্রায় তিন যুগ ধরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে এসব রোহিঙ্গা। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। মিয়ানমার সরকার থেকে ইতোমধ্যেই দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক ফেরত নেয়া হলেও এখনও এদেশে তাদের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। বার বার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরেও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে না মিয়ানমার। এদিকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ‘রোহিঙ্গা শুমারি’র উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগও রয়েছে বর্তমান সরকারের। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বিদেশী কূটনীতিকদের পাশে রাখতে চাইছে সরকার। বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা বের করতে ‘রোহিঙ্গা শুমারি’ করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী অক্টোবর থেকে শুরু হবে রোহিঙ্গা শুমারি। আর এক বছরের মধ্যেই রোহিঙ্গা শুমারি শেষ করা হবে। রোহিঙ্গা শুমারি করতে ইতোমধ্যেই প্রায় ২২ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানায়। বাংলাদেশে প্রকৃত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কোন কোন সংস্থার মতে এখন বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্র্থী অবস্থান করছে। তবে কেউ কেউ মনে করেন এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কক্সবাজার সীমান্তে কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে প্রায় ৩৩ হাজার তালিকাভুক্ত শরণার্থী রয়েছে। অবশ্য জাতিসংঘের শরণার্থী পর্যবেক্ষণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা দুই লাখ। রোহিঙ্গা সংক্রান্ত উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। জাতিগত ও রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে প্রায় দুই দশক আগে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ শুরু করে। তবে এখন প্রকৃত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বের করতেই শুমারির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী অক্টোবর মাস থেকে দেশের ছয়টি জেলায় এই শুমারি পরিচালনা করা হবে। আর আগামী এক বছরের মধ্যেই শুমারি শেষ হবে বলে আশা করছে সরকার। শুমারি পরিচালনা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও পটুয়াখালী জেলায় এই শুমারি পরিচালিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য তাদের সঠিক সংখ্যা জানাটা জরুরী। বর্তমানে কতজন রোহিঙ্গা এদেশে রয়েছেন, সেটা না জানলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কঠিন হবে। সে কারণেই এসব রোহিঙ্গা শুমারির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গা শুমারির অর্থ পুনর্বাসন নয়। কেউ যেন না ভাবেন রোহিঙ্গাদের শুমারির পর পুনর্বাসন করা হবে। সে কারণেই রোহিঙ্গা শুমারির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা শুমারিতে কি কি তথ্য গ্রহণ করা হবে ইতোমধ্যেই তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের গণনার পাশাপাশি তাদের ছবিও তোলা হবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের ঠিকানা, আয়, মিয়ানমারের কোন অঞ্চল থেকে এসেছে, এ দেশে কতদিন অবস্থান করছে, তাদের পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা কত ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা হবে। মিয়ানমার থেকে কেন এদেশে এসেছে সে তথ্যও থাকবে শুমারিতে। রোহিঙ্গা শুমারির কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার। শুমারির কাজটি দুই ধাপে সম্পন্ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, স্থানীয় বেসরকারী গবেষণা সংস্থার সহায়তায় রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হবে। এরপর ওই তালিকা ধরে মাঠপর্যায়ে গিয়ে রোহিঙ্গাদের গণনা করা হবে। তবে রোহিঙ্গা শুমারিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া হবে কি-না সে বিষয়ে এখনাও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেছেন, রোহিঙ্গা শুমারিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া হলে অনেক সুবিধা হবে। এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাসপোর্ট অধিদফতরে দেয়া হলে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নেয়া বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা এ দেশে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট নিয়ে থাকে। এ ছাড়া অনেক রোহিঙ্গা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকেন। রোহিঙ্গা নাগরিকদের বিয়ের নিবন্ধন না করার জন্য সরকার থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে রোহিঙ্গা শুমারির ফলে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হলে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট গ্রহণ ও বিয়ের নিবন্ধন ঠেকানো আরও সহজ হবে বলে মনে করছে সরকার। এদিকে জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই গড়ে আট থেকে দশজন রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এসব রোহিঙ্গারা প্রথমে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে থাকেন। কিছুদিন পরেই বাংলাদেশের অন্য স্থানেও রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়েন। তবে বাংলাদেশে মূলত ছয়টি জেলায় রোহিঙ্গাদের বিচরণ বেশি। সে কারণে এই ছয়টি জেলাকেই শুমারির আওতায় আনা হয়েছে। ছয়টি জেলার বাইরে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের কিভাবে শুমারির আওতায় আনা হবে সে বিষয়ে পরিকল্পনা চলছে। কোন রোহিঙ্গা নাগরিক যেন শুমারি থেকে বাদ না পড়ে, সে জন্য বিভিন্ন উদ্যোগও নেয়া হবে। শুমারির আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের সিদ্ধান্তও রয়েছে সরকারের।
×