ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নবীন-প্রবীণ শিল্পীর রাগাশ্রয়ী বাংলা গানে মুগ্ধ শ্রোতা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩০ আগস্ট ২০১৫

নবীন-প্রবীণ শিল্পীর রাগাশ্রয়ী বাংলা গানে মুগ্ধ শ্রোতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শনিবার শরতের সন্ধ্যায় ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে অনুষ্ঠিত হলো সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রাণের খেলা। বেঙ্গলের নিয়মিত এই গানের অনুষ্ঠানে এদিন পরিবেশিত হলো সুরের মায়াজাল বোনা রাগাশ্রয়ী বাংলা গান। রাগপ্রধান সুরের খেলায় উন্মুক্ত সঙ্গীতাসরটিতে শ্রোতাদের মোহাচ্ছন করে রাখলেন দুই শিল্পী। কণ্ঠের মাধুর্যে সুরের ভুবনে সঙ্গীতানুরাগীদের অন্তরে প্রশান্তি ছড়ালেন খ্যাতিমান শিল্পী সুবীর নন্দী। আর তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের সবটুকু উজাড় করে গাইলেন বেঙ্গল প্রতিভা বিকাশ থেকে উঠে আসা নবীন শিল্পী ফারহানা কান্তা। নবীন ও প্রবীণ শিল্পীর অনবদ্য গায়কী আর মুগ্ধ শ্রোতার অভিব্যক্তিতে এশ্বর্যময়তায় রূপ নেয় অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। ধ্রুপদী আঙ্গিক আশ্রিত বাংলা গানের আযোজনটির সূচনা হয় ফারহানা কান্তার পরিবেশনা দিয়ে। শুরুতেই শিল্পী গেয়ে শোনান বাসুদেব ঘোষালের কথা ও সুরের গানÑ যামিনী হবে কি ভোর..। প্রথম গানেই শ্রোতার মনোসংযোগ টেনে নেন শিল্পী। পরের গানে মুগ্ধতার গানপ্রেমীর অন্তরে মুগ্ধ রেশ বুনে দেন শিল্পী। বেগম আখতারের রচনা থেকে গেয়ে শোনানÑ জোছনা করেছে আড়ি/আসে না আমার বাড়ি/গলি দিয়ে চলে যায়/লুটিয়ে রূপোলি শাড়ি...। কান্তার গাওয়া অন্য তিনটি গানের শিরোনাম ছিলÑ বিনি সুতোয় গাঁথা মালা, যমুনা কি বলতে পারে ও দোলে দোদুল দোলে দোলনা। জাতীয় কবির প্রয়াণবার্ষিকীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে কাজী নজরুল ইসলামের গান দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন সুবীর নন্দী। গেয়ে শোনানÑ কথা কও, কও কথা, থাকিও না চুপ ক’রে...। দ্বিতীয় গানেও নজরুলকে আশ্রয় করেন শিল্পী। গেয়ে শোনান ভরিয়া পরাণ শুনিতেছি গান...। এর পর পরিবেশন করেন পঞ্চকবির আরেক কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে...। মিলনায়তনভর্তি শ্রোতাকে সুরের বৈভবে নিমজ্জিত করে তাঁর কণ্ঠে গীত অন্য গানগুলোর শিরোনাম ছিলÑ তুমি তো আমার আপনও না পরও না, কি যে ব্যথা বাজে, পাহাড়ের কান্না দেখে ও তুমি নেই কাছে। সঙ্গীতনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। আইজিসিসিতে যুগলবন্দী পরিবেশনা ॥ ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (আইজিসিসি) আমন্ত্রণে শনিবার সন্ধ্যায় যুগলবন্দী পরিবেশনায় রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন লিলি ইসলাম। গানের সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠ করেন মুজিবুর রহমান দিলু। আইজিসিসির গুলশানের লাইব্রেরি ভবন মিলনায়তনে এই আয়োজনের শুরুতেই লিলি ইসাল গাইলেন ‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়’। এর পর তিনি একে একে পরিবেশন করেন ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’, ‘তোমারই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’, ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ’, ‘মোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো’, ‘মম মন উপবনে চলে অভিসারে’, ‘শিউলি ফুল শিউলি ফুল’ ও ‘বাংলা মাটি বাংলার জল’সহ ১৫টি গান। যুগলবন্দী সন্ধ্যার সমাপ্তি হয় ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’ এই গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। সুপ্রিয় সেনের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ॥ খ্যাতিমান ভারতীয় পরিচালক সুপ্রিয় সেন। শনিবার বিকেলে প্রদর্শিত হলো এই নির্মাতার প্রামাণ্যচিত্র ‘হোপ ডাইস লাস্ট ইন ওয়ার’। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের অডিটরিয়ামে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদ। প্রদর্শনীর পর পরিচালক সুপ্রিয় সেন দর্শকদের মুখোমুখি হন এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব ও আলাপচারিতায় অংশ নেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া ৫৪ ভারতীয় যুদ্ধবন্দীর জীবনকথা উপস্থাপিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রে। স্বদেশে না ফেরা এই যুদ্ধবন্দীদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে একসময় তাদের অনেকের বাবা-মা মারা গেছেন, অনেকের স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করেছেন, সন্তানদের কেউ হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে পরিবারের সদস্যরা এখনও আশা হারাননি। ৪ যুগ ধরে এই পরিবারের মানুষের অপেক্ষা, আশা-হতাশার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রটি। দৃকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সমাপ্তি ॥ দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও শিল্পের দৃশ্যপট নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে দৃক গ্যালারিতে শুরু হয় আলোকচিত্র প্রদর্শনী। রেইনড্রপ মিডি কমিউনিকেশন আয়োজিত রেইনড্রপ ফটো এক্সিবিশন শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর শেষ দিন ছিল শনিবার। এদিন সকালে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া সেরা দশজন আলোকচিত্রীকে পুরস্কার দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব) তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন এ্যান্ড ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া। সা’দত হুসাইনের বইয়ের প্রকাশনা ॥ প্রকাশিত হলো সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইনের ‘স্মৃতি-প্রীতির সজীব পাতা’ শীর্ষক গ্রন্থ। শনিবার বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর ফার্মগেটের বাংলাদেশ প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন সমিতির সেমিনার কক্ষে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাবেক মন্ত্রী ও সিডিআরবি’র চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান শেলী। বইটির ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোশারফ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার হোসেন, এওয়াইএম মোশাররফ হোসাইন এবং প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে বইটির উদ্ধৃতাংশ পঠনে অংশগ্রহণ করেন ইঞ্জিনিয়ার মুসবাহ আলিম, রাহাত সাইফুল হক, খায়রুল কবির ও শিরিন আক্তার। লেখক এই বইটি তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। বইটি নিয়ে বলতে গিয়ে ড. মিজানুর রহমান শেলী বলেন, আসলে বইটি নিয়ে বলতে গেলে আগে মানুষটিকে নিয়ে বলতে হয়, তার সার্বিক কর্ম নিয়ে বলতে হয়। সা’দত হোসেন তার সততা, কর্মনিষ্ঠা, সক্ষমতার ছাপ রেখেছেন সব জায়গাতেই। অনেকেই মনে করেন সরকারী কর্মকর্তারা শুধু বুঝি নোট লিখতে পারদর্শী। কিন্তু সা’দত দেখিয়েছেন সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রেও তিনি অনন্য। নিবন্ধসমূহে সমাজ সম্পর্কে, দেশ সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার আলোকে সহজ-সরল-অনাড়ম্বরভাবে লিখেছেন। ড. সা’দত হুসাইন তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, গত প্রায় পৌনে চার বছর ধরে আমি দৈনিক কালের কণ্ঠে কলাম লিখছি। পত্রিকার একটি নির্দিষ্ট সার্কুলেশন আছে। এর আগে গত বছরের নবেম্বরে ৩৭টি প্রবন্ধ নিয়ে ‘রুক্ষ সুক্ষ হীরের মুক্তো’ নামে একটি বই প্রকাশ হয়েছিল। এবারের বইটিতে ৪১টি লেখা রয়েছে। আমার সামাজিক জীবন ও ব্যক্তিজীবনের অনেক কিছুই এই বইতে স্থান পেয়েছে। আলোচকরা বইটি নিয়ে আলোচনায় বলেন, বইটির নানা নিবন্ধে সরাসরি রাজনীতির কথা না বলা হলেও রাজনীতি অন্যভাবে চলে এসেছে। কিছু স্যাটায়ারিক ভাষাও এসেছে, বুদ্ধিভিত্তিক হিউমার করেছেন। অনেক লেখা পড়ে মনে হয়েছে লেখক আমাদের সমাজ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি এমন এমন বিষয় নিয়ে লিখেছেন যা অন্য কেউ লেখেনি। বইটি সংগ্রহের গুরুত্ব এখানেই যে, এটি পাঠের মধ্য দিয়ে ১০০ বছর পরেও বোঝা যাবে বাংলাদেশের অবস্থা কেমন ছিল। ‘স্মৃতি-প্রীতির সজীব পাতা’ বইটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৪১টি নিবন্ধ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নিবন্ধের শিরোনাম এরূপ- ‘এক সন্ত্রাসীর মৃত্যু ও রাজনৈতিরক ধারায় ওলটপালট’, ‘সংঘাতময় রাজনীতি: ক্রিয়া পাশর্^ প্রতিক্রিয়া’, ‘ভেজাল নেতা, ভেজাল রাজনীতি’, ‘জবাবদিহিতার বিচিত্র রঙ্গ’, ‘বাজেট বিচিত্রার প্রথাগত ধারায় একই ফলোদয়’, ‘মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বলা মহাপাপ’, ‘সরকারী কর্মকর্তার গাড়ি বিলাস: একটি মারাত্মক রুচি বিকৃতি’, ‘একচল্লিশ বছর পর কলকাতা পুনঃদর্শন’, ‘হাওরের গান: রূপালি জ্যোৎ¯œায় সোনালি ¯œান’, ‘বেপরোয়া দুর্বৃত্তের উল্লম্ফনে কাঁদছে অসহায় বাংলাদেশ’, ‘দুর্নীতির করালগ্রাসে সবদিক অন্ধকার’, ‘কোথায় বিচার, কোথায় শাস্তি?’, ‘একটি বিনষ্ট নগরী হিসেবে ঢাকা কি অবশেষে পরিত্যক্ত হবে’। ২০৩ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করেছে বিশ^সাহিত্য ভবন। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোমিন উদ্দীন খালেদ।
×