ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন শতাধিক পরিবার ভুক্তভোগী ॥ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস

অপরিকল্পিত খননে পলি জমে ॥ ভরাট কৃষিজমি

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৯ আগস্ট ২০১৫

অপরিকল্পিত খননে পলি জমে  ॥ ভরাট কৃষিজমি

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের (ড্রেজিং) খনন করা পলিতে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার হুড়কা ও চাড়াখালী গ্রামের বসতভিটা, কৃষিজমি, পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। মানবেতর অবস্থায় রয়েছে দুই গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার। অপরিকল্পিত ড্রেজিং এবং বিআইডব্লিউটিএ নির্দিষ্ট জায়গায় পলি না ফেলায় (ডাম্পিং) এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হুড়কা গ্রামের কয়েক বাসিন্দা বলেন, গত বছর রামপালে কুমারখালী নদ থেকে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খননকাজ শুরু করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এরপর তারা বিভিন্ন জায়গায় পলি ফেলা শুরু করে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে এ চ্যানেলের হুড়কা-চাড়াখালী গ্রামসংলগ্ন স্থানে খনন শুরু করে বসুন্ধরা ড্রেজিং কোম্পানি লিমিটেড। এরপর সঠিকভাবে বাঁধ না দিয়ে নদীর পাড়ে খাসজমি-সংলগ্ন এলাকায় পলি ফেলতে থাকে। এতে হুড়কা ও চাড়াখালী গ্রামের প্রায় ২০০ একর জমি লবণ ও বালুমিশ্রিত পলিতে ভরে যায়। এতে দুই গ্রামের তিন শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, পুকুর-ঘাট, চিংড়ি ঘের ভরাট হয়ে যায়। চরম দুর্ভোগে পড়ে দুই গ্রামের মানুষ। সরেজমিন দেখা যায়, নদীর পাড় থেকে শুরু করে হুড়কা ও চাড়াখালী গ্রামের প্রায় পুরোটাই ড্রেজিংয়ের বালিতে ভরাট হয়ে গেছে। মানুষের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন চিংড়ি ঘের ও ফসলি জমিগুলো এখন ধু ধু বালুচর। লবণ ও বালুর কারণে বাড়ির সামনের সব গাছ মরতে শুরু করেছে। চাড়াখালী গ্রামের দোকানি সুশান্ত ম-ল বলেন, ‘সরকারী জমিতে নির্দিষ্ট করে পলি না ফেলে খননকারীরা আমাদের দুটি গ্রাম পলি দিয়ে ভরাট করে দিয়েছে। এতে প্রত্যক্ষভাবে তিন শতাধিক এবং পরোক্ষভাবে আরও দুই শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারও বাড়িতে পুকুর নেই। গাছপালা সব মরতে শুরু করেছে। চিংড়ি ও কাঁকড়ার ঘেরের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। ফসলি জমিতে বালু ফেলায় তাতে ধান হবে না। আমরা সম্মিলিতভাবে জেলা প্রশাসক, ইউএনও, স্থানীয় সাংসদ, এমনকি বিআইডব্লিউটিএ’র উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে কোন প্রতিকার পাইনি।’ হুড়কা গ্রামের জ্যোৎস্না রানী (৬৪) জানান, তার ২ বিঘা ১০ কাঠা ফসলি জমিতে চিংড়ি ঘের ছিল। কিন্তু পলি ফেলায় তার ঘের এখন বালুতে পরিপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এখন কী করে তিন বেলা খাব? বালি পইড়ে ঘরের খুঁটি নড়বড়ে হইয়ে ভাইঙ্গে পড়তিছে। রাস্তার পাশে ছোট্ট এই ঘরে কী মানুষ থাকতি পারে? সরকার কী আমাগে দিক একটু দ্যাখপে না।’ চাড়াখালী গ্রামের কৃষক মহানন্দ ম-ল (৬১) বলেন, ‘আমার তিন বিঘা ফসলি জমিতে চিংড়ি চাষ করে বছরে ৬০ হাজার ও ধান থেকে ২৫ হাজার টাকা পেতাম। সব শেষ।’ হুড়কা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার পার্থ প্রতীম বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা বাধা দিয়েও পলি ফেলা (ডাম্পিং) ঠেকাতে পারিনি। স্থানীয় সাংসদ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নামের তালিকা দিতে বলেছেন। মাত্র ৩২ জনের নাম পেয়েছি। সরকার ক্ষতিপূরণ দিলে জমিতে আবার পলি ফেলবে বা জমি অধিগ্রহণ করবে এ আশঙ্কায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ক্ষতির কথা চেপে রাখছেন।’ বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ এইচ মো. ফরহাদুজ্জামান বলেন, ‘মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ওই অংশে খননকাজ করেছিল বসুন্ধরা ড্রেজিং। দ্রুত কাজ করায় কিছু ক্ষতি হয়েছে। ডাম্পিং করার আগে আমরা যে সুরক্ষা দেয়াল (গাইড ওয়াল) নির্মাণ করেছিলাম, সেটিও পর্যাপ্ত ছিল না।’ কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করতে বলেছি। তালিকা চূড়ান্ত হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
×