ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নানান কৌশলে চলছে ফরমালিন আমদানি

বিধিমালা অনুমোদন না হওয়ায় ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৯ আগস্ট ২০১৫

বিধিমালা অনুমোদন না হওয়ায় ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না

এম শাহজাহান ॥ বিধিমালা অনুমোদন না হওয়ায় ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর হতে পারছে না। আইনটি পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে অসাধু আমদানিকারকরা। সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও চলছে ফরমালিন বাণিজ্য। দেশে ১১ ধরনের জেনেরিক বা রাসায়নিকে ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বিভিন্ন অপকৌশলে এসব রাসায়নিক আনছেন আমদানিকারকরা। ফলে ফলমূল, শাক-সবজি ও খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। ইতোমধ্যে আবারও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফরমালিন আমদানির অনুমতি চেয়ে নতুন করে আবেদন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। তবে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করতে দ্রুত বিধিমালা অনুমোদনের জন্য তাগিদ দিচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন সংসদে পাস হওয়ার পর থেকে দ্রব্যটি কেনাবেচা এবং ব্যবহারে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। কিন্তু আইন অমান্যে যেসব দ- বা শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে তা কার্যকর হতে পারছে না। কারণ আইনটি কার্যকর করতে হলে বিধিমালাটি আগে অনুমোদনের প্রয়োজন। এলক্ষ্যে আইনটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এখন ভেটিং শেষে আইনটি অনুমোদন পাবে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিধিমালাটি অনুমোদন হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনটি কার্যকর হচ্ছে না বিষয়টি সেরকম নয়। ফরমালিন অপব্যবহারকারীদের ধরা হচ্ছে। এ কারণে চলতি বছর ফলমূলসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যে এই দ্রব্যটির ব্যবহার ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। তবে আইনগতভাবে আইনটি কার্যকর করতে হলে রুলস (বিধিমালা) প্রয়োজন। সেই বিধিমালা চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই বিধিমালাটির অনুমোদন দেবে আইন মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজে ফরমালিন ব্যবহার করা যাবে না। তবে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে ফরমালিনের প্রয়োজন। তাই আইন মেনে ফরমালিন আমদানি করতে হবে। ফরমালিন ও এ্যাসিড আমদানির অনুমতি চেয়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি সরকারের নজরে নেয়া হয়েছে। এ্যাসিডের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখে থাকে, তবে আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। আর ফরমালিনের বিষয়টি দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন ফরমালিন বাণিজ্য করতে হলে নতুন আইন মেনে করতে হবে। তাই বিধিমালা অনুমোদন হওয়ার আগে আর কেউ ফরমালিন আমদানি করতে পারবে না। বিধিমালা অনুমোদন পেলে ফরমালিন আইনেই শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে। জানা গেছে, দেশে ১১ ধরনের জেনেরিক বা রাসায়নিকে ফরমালিনের অস্তিত্ব রয়েছে। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এগুলো চিহ্নিত করে তা আমদানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন নামে এগুলো দেশে আনা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ফরমালডিহাইড, ফরমালডিহাইড সলিউশন, মিথানল সলিউশন, মিথাইল এ্যালডিহাইড, মিথাইল এ্যালডিহাইড সলিউশন, প্যারাফরমালডিহাইড, প্যারাফরমালডিহাইড সলিউশন, প্যারাফরম, ফরমাজিন, ফরমল ও মরবিসিড। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের গত ২১ জানুয়ারি সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ লাইসেন্স ছাড়া ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন বা মজুদ করলে যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান রেখে এ বিলটি উত্থাপন করেন। আইনটি বাস্তবায়নে ‘ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৫’ পাসের জন্য সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
×