ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিক হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৯ আগস্ট ২০১৫

যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিক হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় কর্তব্যরত দুই সাংবাদিকের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে উভয়ের এক সাবেক সহকর্মী। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেই ব্যক্তিও আত্মহত্যা করে। আততায়ী কর্মচ্যুত হয়েছিল সংশ্লিষ্ট সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান থেকে। কৃষ্ণাঙ্গ ও সমকামী হওয়ার কারণে নিজেকে বৈষম্যের শিকার বলে দাবি করে সাবেক ওই হন্তারক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অবশ্য এটিকে বিচ্ছিন্ন কোন সহিংস ঘটনা হিসেবে মূল্যায়নে নারাজ। তিনি বলছেন, সারা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র বিষয়ক যত ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে, ছোট-বড় প্রতিটি ঘটনাই সন্ত্রাসবাদের অন্তর্ভুক্ত। সাংবাদিকতা বিশ্বজুড়েই ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সত্য প্রকাশের ‘অপরাধে’ সাংবাদিকের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনা দেশে দেশে ঘটছে। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সাংবাদিককে শারীরিকভাবে হেনস্থা করার ঘটনাও ঘটে থাকে। তবে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করার বিষয়টি অভিনব ও রোমহর্ষক। কারণ একটি টিভি অনুষ্ঠান সরাসরি প্রচারের সময় দর্শকরাও এ জাতীয় হিংসাত্মক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে পড়েন। ফলে সঙ্গত কারণেই সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু মানুষের মনের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে যা বিপজ্জনক। ম্যাস শূটিং বা ব্যাপক বন্দুক হামলা মার্কিন মুলুকে একটি অতিপরিচিত বুলি হয়ে উঠেছে চলতি বছরে। মাত্র ২৩৮ দিনে ২৪৭টি ম্যাস শূটিং হয়েছে ব্যক্তিস্বাধীনতার ব্যাপারে সোচ্চার এ ভূখণ্ডে। ভার্জিনিয়ায় দুই সাংবাদিক হামলার মাধ্যমে ২৪৭তম ম্যাস শূটিং ক্রিমিনাল রেকর্ড খাতায় স্থান পেয়েছে। বিশ্বজনতার নিরাপত্তায় সব সময় সরব ও সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাই বিপদসঙ্কুল করে তুলেছে নিজের আবাসভূমি। ব্যক্তিগত বন্দুক হামলার ওপর এক জরিপে প্রথম স্থানও লাভ করেছে তারা। পৃথিবীজুড়ে ১৯৬৬-২০১২ সালের মধ্যে ম্যাস শূটিংয়ের ৩১ শতাংশই ঘটেছে এ দেশে। অর্থাৎ মোট ২৯১টি হামলার ৯০টিই সংঘটিত হয়েছে আধুনিকতা ও সভ্যতার তেজে ফেঁপে ওঠা আমেরিকায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিদ্যাবিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞের চালানো গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। আমেরিকায় ম্যাস শূটিং বলতে বোঝায়Ñ কোন ব্যক্তির বন্দুক হামলায় ওই ব্যক্তিসহ অন্তত চারজন আহত হওয়া। অনলাইনভিত্তিক মার্কিন সংবাদ সংস্থা লাইভ সায়েন্স বলছে, আমেরিকায় সার্বিক অপরাধের হার হ্রাস পেলেও ব্যক্তিগত বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে। আর এটাই বড় দুশ্চিন্তা ও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের। ৩৫ কোটি মানুষের দেশটিতে ৩০ কোটি আধুনিক অটোমেটেড আগ্নেয়াস্ত্রের প্রাইভেট লাইসেন্স রয়েছে। আমেরিকানরা স্বাভাবিকভাবেই উচ্চাভিলাষী। সামান্য ব্যর্থতায় মুষড়ে পড়ে অনেকেই। হলিউড এ্যাকশন সিনেমাগুলো এক কাল্পনিক জগতে বাস করতে শেখাচ্ছে তাদের। শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী চেতনা অপরিপক্ব কিশোরদের পরিচালিত করে বন্দুক হামলায়। এসব কারণ বিবেচনায় নিয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে মার্কিন সমাজকে। হোয়াইট হাউস অনুধাবনে সক্ষম হয়েছে যে, বুধবারের ওই হত্যাকাণ্ডের পর ব্যক্তিগত বন্দুকের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বলা বাহুল্য, ভার্জিনিয়ায় দুই টেলিভিশন সাংবাদিককে গুলি করে হত্যার ঘটনা মার্কিন সমাজের মনোজগতের অশান্ত ছবিই তুলে ধরেছে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে সেই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসুকÑ এটাই প্রত্যাশা।
×