ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লিবিয়া উপকূলের কাছে নৌকাডুবি

ছয় বাংলাদেশীসহ দু’শ’ অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৯ আগস্ট ২০১৫

ছয় বাংলাদেশীসহ দু’শ’ অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ লিবিয়া উপকূলের কাছে কয়েক শ’ অভিবাসন প্রত্যাশীকে নিয়ে দু’টি নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতদের মধ্যে দুই শিশুসহ ছয় বাংলাদেশী বলে নিশ্চিত করেছেন তিউনিসিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা। নৌকা দুটির অন্তত দু’ শ’ জন অভিবাসন প্রত্যাশী মারা গেছে বলে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বিবিসি জানায়, দেশান্তর প্রত্যাশী প্রায় সাড়ে চার শ’ মানুষকে নিয়ে ইতালি হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টায় লিবিয়ার জুয়ারা শহরের কাছে ভূমধ্যসাগরে বৃহস্পতিবার নৌকা দুটো ডুবে যায়। এর মধ্যে প্রথম যে নৌকাটি থেকে সাহায্য চেয়ে সঙ্কেত পাঠানো হয়, তাতে প্রায় ৫০ জন ছিলেন। আর দ্বিতীয় নৌকায় ছিলেন চার শ’র বেশি আরোহী। লিবিয়ার কোস্টগার্ডের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, উদ্ধারকর্মীরা নৌকা দুটি থেকে ২০১ জনকে উদ্ধার করতে পারলেও অনেকেই নৌকাডুবির সময় ভেতরে আটকে ছিলেন। অন্তত ১০০ মরদেহ উদ্ধার করে জুয়ারা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন। উদ্ধার করা অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ১৪৭ জনকে ত্রিপোলির পশ্চিমে সাবরাথায় একটি ‘ডিটেনশন সেন্টারে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে রয়টার্সের খবরে জানানো হয়েছে। তিউনিসিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের লিবিয়া দূতাবাসের কর্মকর্তা চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স মোজাম্মেল হক বলেছেন, ডুবে যাওয়া নৌকা দুটিতে মোট ৩১ বাংলাদেশী ছিল। নিহতদের মধ্যে দু’জন শিশু বলে জানান দূতাবাসের কর্মকর্তা। লাইফ জ্যাকেট পরে থাকায় বেশিরভাগ বাংলাদেশী অভিবাসন প্রত্যাশীকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে দূতাবাস সূত্র থেকে বলা হয়েছে। মোজাম্মেল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, চারটি পরিবারসহ মোট ৩১ বাংলাদেশি লিবিয়ার জুয়ারা এলাকা দিয়ে ট্রলারে করে ইতালি যাবার চেষ্টা করছিলেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। তবে নৌকার তলদেশ ফুটো থাকায় প্রায় একঘণ্টা যাওয়ার পর নৌকাটি উল্টে যায়। ৬ বছর আর ৬ মাস বয়সী দুটি শিশু সেখানেই মারা যায় বলে মোজাম্মেল হক জানান। আরও দুটি পরিবারের চারজন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। তবে অন্যরা লাইফ জ্যাকেট পরে থাকায় সারারাত ভেসে ছিল। ভোরে তাদের উদ্ধার করা হয়। লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের কাছে উদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই বলে বলা হচ্ছে। একটি পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের। এদের দুটি পরিবার সিরতে থেকে এসেছে, অন্যরা ত্রিপোলিতেই বসবাস করতেন। মোজাম্মেল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবারগুলো লিবিয়াতে রয়েছে। সন্তানদের সবার জন্ম হয়েছে লিবিয়ায়। তবে দেশটির পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ায় তারা সমুদ্র পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলেন, এর আগেও তারা খবর পেয়েছিলেন যে, এই পরিবারগুলো ইতালি যাবার চেষ্টা করছে। তাদের বারবার সতর্ক করার পরেও তারা ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে সেখানে যাবার চেষ্টা করেন। এখন পরিবারগুলোর ইচ্ছা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র উইলিয়াম স্পিন্ডলার বিবিসিকে জানান নৌকা দুটিতে প্রায় পাঁচ শ’ মানুষ ছিল যারা ইউরোপে আসার চেষ্টায় সমুদ্র পাড়ি দিয়েছিল। নৌকা দুটিতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে সিরিয়া, বাংলাদেশ ও সাহারা মরুভূমির দক্ষিণের দেশগুলোর নাগরিকরা ছিলেন। বিবিসির উত্তর আফ্রিকা সংবাদদাতা বলেন, লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের ব্যবহারের জন্য যে উদ্ধারযানগুলো আছে সেগুলোতে উদ্ধারকাজের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। সমুদ্র পাড়ি দেয়ার জন্য অনুপযোগী নৌকায় লিবিয়া থেকে ইতালিতে সাগরপাড়ি দিতে গিয়ে এ বছর এ পর্যন্ত দু’হাজারের মত অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু ঘটেছে। লিবিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন দুজন। এছাড়া সাগর থেকে ৪৩ জন বাংলাদেশীকে উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। লিবিয়া দূতাবাসের উদ্ধৃতি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৃহস্পতিবার লিবিয়া উপকূলে ৪০০ থেকে ৫০০ অভিবাসন প্রত্যাশী নাগরিক বহনকারী নৌকা ডুবে যায়। লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে জুরুয়া উপকূলে এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পরে বাংলাদেশের লিবিয়া দূতাবাসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। তারা বাংলাদেশীদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে সেখানে অবস্থান করছেন। নৌকাডুবিতে ৫ বাংলাদেশী নাগরিক মারা গেছেন। নিখোঁজ রয়েছেন দুজন। এছাড়া ৪৩ জন বাংলাদেশী নাগরিককে সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা নাগরিকদের স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস জরুরী সেবা চালু করেছে। লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তার মোবাইল নম্বর-০০২১-৮৯১৬৯৯৪২০২। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে লিবিয়া উপকূলে দুটি নৌকাডুবে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডুবে যাওয়া নৌকা দুটির আরোহীদের মধ্যে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, পাকিস্তান, সিরিয়া, মরক্কো এবং বাংলাদেশের নাগরিকও ছিলেন। দেশান্তরী প্রায় পাঁচ শ’ মানুষকে নিয়ে ইতালি হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টায় লিবিয়ার উপকূলের কাছে ভূমধ্যসাগরে নৌকা দুটো ডুবে যায়।
×