ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় নাগরিক সমাবেশে মুনতাসীর মামুন

হাইকোর্টের রায়ের পরও সবুর খানের নামে রাস্তা থাকা দুঃখজনক

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৮ আগস্ট ২০১৫

হাইকোর্টের রায়ের পরও সবুর খানের নামে রাস্তা থাকা দুঃখজনক

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর সভাপতি ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, গবেষক, লেখক অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেছেন, হাইকোর্টের রায়ের পরও স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী খান এ সবুরের নাম খুলনার প্রধান সড়কে থাকা খুবই দুঃখজনক। তিনি হাইকোর্টের রায় মেনে ওই রাস্তাটির নাম যশোর রোড লেখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী খান এ সবুরের নামে খুলনা-যশোর সড়কের নাম পরিবর্তন করে খান এ সবুর করা হলো। অথচ খুলনার মানুষ এর কোন প্রতিবাদ করল না। খুলনার মানুষের নিষ্ক্রিয়তায় দুঃখ পেয়ে তিনি আদালতে গিয়েছেন। ২০১২ সালে স্বাধীনতাবিরোধী খান এ সবুরের নাম খুলনার প্রধান সড়ক থেকে প্রত্যাহারের জন্য হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত সবুরের নাম স্থগিতের নির্দেশ প্রদান করেন। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৎকালীন সিটি মেয়র কোন উদ্যোগ নেননি। বর্তমান মেয়রও কোন পদক্ষেপ নেননি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য কথা বলেন। অথচ তাঁর দলের লোকজন এটা চান কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের পর বহুবার খুলনার বিভিন্ন সভায় স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার সবুর খানের নাম মুছে ফেলার দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোন ফল হয়নি। তিনি প্রশ্ন তোলেনÑ আওয়ামী লীগের নেতারা আসলে কি চান? অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ২০১২ সালে করা রিটের হাইকোর্টের রায় কার্যকর না হওয়ায় সম্প্রতি তিনি ও লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির স্বাধীনতাবিরোধী খান এ সবুর ও শাহ আজিজুর রহমানের নাম স্থাপনা থেকে প্রত্যাহারের জন্য হাই কোর্টে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালতের দেয়া রায়ে খুলনা মহানগরীর ‘খান-এ-সবুর’ সড়কের নাম প্রত্যাহার করে আগের ‘যশোর রোড’ নামটি ব্যবহার করতে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাহ আজিজুর রহমান’ হলের নামও প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। তিনি রাস্তার পাশের সাইনবোর্ড ও বাড়ির ঠিকানা থেকে সবুর খানের নাম স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুছে ফেলে যশোর রোড লেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। ড. মুনতাসীর মামুন বৃহস্পতিবার বিকেলে খুলনা মহানগরীর বিএমএ ভবন মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, খুলনা আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি ড. শেখ বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি খুলনার সহ-সভাপতি শ্যামল সিংহ রায়, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি মকবুল হোসেন মিন্টু, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা মহানগর শাখার কমান্ডার অধ্যাপক আলমগীর কবির, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট খুলনার আহ্বায়ক হুমাযূন কবির ববি প্রমুখ। সমাবেশে চিত্রশিল্পী হাশেম খান বলেন, নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনছে এটা ভাল লক্ষণ। তিনি নতুন প্রজন্মের বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, সত্যের জন্য লড়াই করতে হবে। রাজাকার আলবদর ও তাদের দোসরদের চিহ্নিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উর্ধে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, দেশে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি রয়েছে। বিপক্ষের মানুষদের এ দেশে থাকার কোন অধিকার নেই। এর আগে বেলা ১১টায় বিএমএ ভবন মিলনায়তনে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। আর্কাইভ জাদুঘরকে নগরীর ২৬, সাউথ সেন্ট্রাল রোডে জমিসহ দ্বিতল একটি বাড়ি বরাদ্দ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বক্তব্য রাখেন। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টের সহ-সভাপতি চিত্রশিল্পী হাশেম খান, ট্রাস্টি সম্পাদক ডাঃ শেখ বাহারুল আলম, ট্রাস্টি সদস্য চৌধুরী শহীদ কাদির প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে মুনতাসীর মামুন বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের এদেশে বিচার হবে, তাদের ফাঁসি হবে এমনটা এদেশের মানুষ ভাবতেও পারেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দুঃসাধ্য কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন। এদেশে যতক্ষণ একজন যুদ্ধাপরাধী থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির মুক্তিযুদ্ধ চলবে। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে খুলনায় দেশে প্রথম ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা ও স্মৃতি সংরক্ষণে রাজধানীর বাইরে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি বাড়ি চেয়েছিলাম। তিনি জমিসহ বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছেন। আমি মনে করি এটা শুধু আর্কাইভ ও জাদুঘরকে নয়, এটি খুলনাবাসীকেই উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আমাদের প্রতি আস্থা রেখেছেন, আশা করি আমরা তাঁর আস্থার প্রতিদান দিতে সক্ষম হব। প্রধানমন্ত্রী এভাবে তাঁর সহযোগিতা দিয়ে যাবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। তনি জমিসহ বাড়ি বরাদ্দ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী, বর্তমান প্রশাসনসহ যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ড. মামুন আরও বলেন, সরকারী পর্যায়ে দেশে কোন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হয়নি। বেসকারী পর্যায়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর। তিনি সকলকে সহযাগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠানের কুপন ছাপা আছে। যে যতটুকু পারেন অর্থিক সহায়তা করুন।
×