ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এক চুলা ৪ থেকে ৬ টাকা;###;দুই চুলা ৪৫ থেকে ৬৫ টাকা;###;গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুত বৃদ্ধির হার ২.৯৩ ভাগ, তবে এক থেকে ৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়েনি

১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর ॥ গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ল

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৮ আগস্ট ২০১৫

১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর ॥ গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একই সঙ্গে বিদ্যুত এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বৃহস্পতিবার বিকেলে নতুন মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। পুনর্নির্ধারিত দামে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা (ইউনিট) বিদ্যুতের মূল্য গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ১৮ পয়সা অর্থাৎ দুই দশমিক ৯৩ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। একই সঙ্গে গড় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে ২৬ দশমিক ২৯ ভাগ। যদিও গৃহস্থালির রান্নার চুলায় ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী গ্রাহকের এক চুলা গ্যাসে দিতে হবে ৪০০ টাকার বদলে ৬০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৪৫০ টাকার পরিবর্তে গুণতে হবে ৬৫০ টাকা। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুত এবং গ্যাসের মূল্যহার কার্যকর হবে। অর্থাৎ অক্টোবর থেকেই গ্রাহককে বিদ্যুত এবং গ্যাসের বাড়তি বিল পরিশোধ করতে হবে। ঘোষণায় বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার প্রতি ইউনিটে ২৩ পয়সা এবং সঞ্চালন মাসুল (হুইলিং চার্জ) বৃদ্ধি পেয়েছে পাঁচ পয়সা হারে। তবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অর্থাৎ এক থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীর দাম বৃদ্ধি হয়নি। অন্যদিকে বিদ্যুত ও সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়নি। এই প্রথম সারাদেশে একই রকম বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সঙ্গে অন্য বিরতণ কোম্পানির মূল্যহারে যে পার্থক্য ছিল এখন আর তা থাকছে না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ছাড়া সারাদেশের বিদ্যুত ব্যবহারকারীদের একই বিল পরিশোধ করতে হবে। গ্যাস এবং বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধি সংক্রান্ত কমিশনের গণশুনানিতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে বেশিরভাগ কোম্পানি দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়। সরাসরি কোন কোন কোম্পানির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে কমিশন গঠিত কমিটি বলছে এ সব কোম্পানির মূল্যহার বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। কিন্তু তারপরও কেন মূল্যবৃদ্ধি জানতে চাইলে বিইআরসি চেয়ারম্যান এআর খান বলেন, যৌক্তিক দিক বিশ্লেষণ করেই বিদ্যুত এবং গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে বর্ধিত দামের কতটা গ্যাস এবং বিদ্যুত উন্নয়ন তহবিলে জমা হবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই কমিশনের আদেশে। এর আগে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে বিদ্যুত-জ্বালানিখাতের উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। দাম বাড়িয়ে সেই অর্থের কিছুটা হলেও সংস্থান করা হবে। জ্বালানি তেলের নিম্নমুখী বাজার পরিস্থিতিতে দেশে জ্বালানি এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমলেও পৃথিবীর কোন বিমান সংস্থা ভাড়া কমাচ্ছে না। এখন দেশ জ্বালানি তেলের দাম কমলেও সাধারণ মানুষের কোন সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে তিনি মনে করেন। বিইআরসি আইন অনুযায়ী কোন কোম্পানি আয়-ব্যয় সমান (ব্রেক ইভেন পয়েন্টে) পৌঁছানো পর্যন্তই কেবল দাম বৃদ্ধি করতে পারে। গণশুনানির পরেও দাম বৃদ্ধিকে যৌক্তিক করে তুলতে আরও তথ্য চেয়ে বিইআরসি বিতরণ কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয়। কিন্তু এরপরও বিদ্যুত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় ছিল বিইআরসি। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার জন্য বিইআরসিকে অনুরোধ করা হয়। ওই বৈঠকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন এই মূল্যহার ঘোষণা করা হলো। গ্যাসের নতুন মূল্য তালিকাঃ সিএনজির দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় বলা হয়েছে ৩৫ টাকা ফিড গ্যাসের মূল্যের মধ্যে ২৭ টাকা পাবে বিতরণ কোম্পানি। আর অপারেটরের মার্জিন (সিএসজি পাম্পের মালিক) পাবেন ৮ টাকা। এক্ষেত্রে তাদের মার্জেক আগের তুলনায় এক টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত বছর নবেম্বরে আবাসিক গ্রাহক পর্যায় গ্যাসের দাম ১২২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে এক চুলার গ্যাস ৪০০ টাকার স্থলে ৮৫০ টাকা ও দুই চুলা ৪৫০ টাকার স্থলে এক হাজার টাকার প্রস্তাব পাঠায় বিতরণ কোম্পানিগুলো। অন্যদের ক্ষেত্রে শিল্পের জন্য প্রতিহাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১৬৫ দশমিক ৯১ থেকে বাড়িয়ে ২২০ টাকা, বাণিজ্যিকে ২৬৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০৫ টাকা, চা বাগানে ১৬৫ দশমিক ৯১ থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা, শিল্প-কারখানায় স্থাপিত নিজস্ব বিদ্যুত বা ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১১৮ দশমিক ২৬ থেকে ২৪০ টাকা, বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যবহƒত গ্যাস ৭৯ দশমিক ৮২ থেকে ৮৪ টাকা, সিএনজিতে ৬৫১ দশমিক ২৯ থেকে ৯০৫ দশমিক ৯২ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছিলো দর প্রস্তাবে। এছাড়া সার কারখানার গ্যাস ৭২ দশমিক ৯২ থেকে মাত্র ৮০ টাকা করার প্রস্তাব দেয় গ্যাস বিতরণ কম্পানিগুলো। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন শুনানি করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা খুঁজে পায়নি। উপরন্তু দেশীয় কোম্পানিগুলো এখন লাভজনকভাবে চলছে বলে শুনানিতে দেখা যায়। এর আগে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সবশেষ ২০০৯ সালে নির্বাহী আদেশে করা হয়। এরপর সিএনজির মূল্য কয়েক ধাপে সমন্বয় করা হলেও শিল্প, আবাসিক ও অন্যান্য খাতের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। এর আগে ২০০৯ সালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সময় রাজস্ব আয়ের পুরোটা দিয়েই গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়। যা দিয়েই এখন গ্যাসখাতের উন্নয়ন করা হচ্ছে। এখনও গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লাভ করায় এই অর্থ দেশের জ্বালনিখাতের উন্নয়নে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধির তালিকাঃ ক্ষুদ্র শিল্প, বণিজ্যিক ও অফিস, মধ্যম চাপ সাধারণ ১১ কেভি, অতি উচ্চচাপ ১৩২কেভি, অতি উচ্চচাপ ২৩০কেভি এবং উচ্চচাপ ৩৩কেভি শ্রেণীর গ্রাহকের জন্য পিক ও অফপিক আওয়ারে পৃথক মূল্য তালিকা রয়েছে। গত বছর অক্টোবরে বিদ্যুতের পাইকারি এবং খুচরা মূল্যহার বৃদ্ধির সঙ্গে পিজিসিবি সঞ্চালন মাসুল বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। কারিগরি কমিটির সুপারিশে বলা হয় ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ২১ দশমিক ৩১ ভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাবের স্থলে দুই দশমিক ২৮ ভাগ, আরইবির ১৫ দশমিক ৬০ ভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাবের স্থলে দশমিক ২৭ ভাগ এবং পিডিবির ২২ ভাগের স্থলে তিন দশমিক নয় ভাগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এছাড়া ডিপিডিসি-এর ১৭ দশমিক ৮৫ ভাগ এবং ডেসকোর ১৮ দশমিক ৬২ ভাগ বৃদ্ধির দুটি প্রস্তাব নাকোচ করে দিয়েছে কমিশন। পিজিসিবির বিদ্যুতের সঞ্চালন মাসুল ইউনিটে ১৬ দশমিক ৭৪ ভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাবে এক দশমিক ৫৩ ভাগ বৃদ্ধিকে যুক্তিযুক্ত মনে করছে কমিটি। পাইকারি পর্যায়ে সরকারের গত মেয়াদে ছয় দফায় দুই টাকা ৩৭ পয়সা থেকে ৯৮ দশমিক ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি করে চার টাকা ৭০ পয়সা করা হয় বিদ্যুতের দাম। সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে। এর আগে গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে চার টাকা থেকে ৫৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ছয় টাকা ১৫ পয়সা করা হয়। সর্বশেষ বাড়ানো হয় গত বছর মার্চে।
×