ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বেড়ে গেছে গুলিবিনিময়

পাক-ভারত বৈঠক বাতিলে কাশ্মীরীরা হতাশ

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৭ আগস্ট ২০১৫

পাক-ভারত বৈঠক বাতিলে কাশ্মীরীরা হতাশ

পারস্পরিক দোষারোপের সন্দিগ্ধ পটভূমিতে চলতি সপ্তাহে কাশ্মীরের তিক্ত সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দুর্লভ আলোচনা পণ্ড হয়ে গেছে। ওদিকে রণাঙ্গনের কাছাকাছি থাকা গ্রামবাসীরা তাদের মাটির ঘরে দু’পক্ষের গোলাগুলিতে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কবে স্থায়ী শান্তি দেখতে পাবেন সে ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছেন। খবর এএফপির। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ আলোচ্যসূচী নিয়ে বাকবিত-ার মধ্যে শেষ মুহূর্তে তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ অর্জিত দোভালের সঙ্গে রবিবার ‘সম্পর্ক স্বাভাবিক’ করার পরিকল্পিত বৈঠকের জন্য নয়াদিল্লী সফর বাতিল করে দেন। বৈঠক বাতিলের মধ্য দিয়ে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী দুই প্রতিবেশী দেশের দীর্ঘ বৈরী সম্পর্কে সহসা কোন বড় ধরনের সাফল্যের প্রত্যাশা মুখ থুবড়ে পড়ল। বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরের লাইন অব কন্ট্রোল বলে পরিচিত কার্যত সীমান্তের দু’ধারে এ মাসে গোলাগুলির ঘটনা বেড়ে গেছে এবং এতে কয়েকজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। ১৯৪৭ সালে দুই দেশ ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর হিমালয়ের এই অঞ্চলটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায় এবং উভয়ই এর পূর্ণ অধিকার দাবি করে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের নাহরা হলো ভারতীয় সেনা অবস্থান থেকে মাত্র ৪শ’ মিটার দূরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর একটি। স্থানীয়রা বলেন, গত সপ্তাহে তারা প্রায় প্রতিদিনই গোলায় আক্রান্ত হয়েছেন। মর্টারের গোলা থেকে বাঁচতে তাদের কোন উপযুক্ত বাংকার না থাকায় বাসিন্দারা তাদের মাটির ঘরেই লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। গ্রামবাসী মোহাম্মদ নজর (৫৩) গত সপ্তাহে অব্যাহত ভারতীয় গোলাবর্ষণে তার বাড়ি কিভাবে ধ্বংস হয়েছে তা বর্ণনা করেন। এই বার্তা সংস্থাকে তিনি বলেন, ‘আমি সবে আমার সন্তানদের বিছানায় শুইয়ে দিয়েছি, তারা ঘুমাতে ভয় পাচ্ছিল। তারপরই শুরু হয় ভারতীয়দের গোলাগুলি আর আমার বাড়ির দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে। আমার বাচ্চারা ভয়ে চিৎকার করছিল। আমি আমার হাত দিয়ে ওদের ঢেকে রেখেছিলাম। আমরা দেয়ালের যেটুকু অবশিষ্ট আছে তার পিছনে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ভোরের দিকে গোলাগুলি থেমে গেলে আমি আমার পরিবারকে নিয়ে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিই। এখনও সেখানেই আমরা আছি। আমাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ছয়টি ছোট গ্রামসমষ্টির নাকিয়াল সেক্টরে নাহরার অবস্থান। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত কিন্তু কয়েক দশকের সংঘাতে বিদীর্ণ অঞ্চল কাশ্মীরের বৈশিষ্ট্যম-িত সবুজে মোড়া উপত্যকার মধ্যে গেঁথে আছে গ্রামটি। নাকিয়ালের স্থানীয়দের দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতীয় ও পাকিস্তানী সৈন্যরা উপত্যকার দুইপাশের পার্বত্য উচ্চতায় অবস্থান নিয়ে থাকায় বেসামরিক মানুষ অরক্ষিত অবস্থায় বিপদের মধ্যে আটকা পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, একশ’টির মতো পরিবার তাদের গ্রাম থেকে পালিয়ে কাছাকাছি পাহাড়ি ঢলের গাছপালা আবৃত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। দুই দেশের লড়াইয়ে ক্ষেতের ফসল ধ্বংস হয়েছে, স্কুলগুলো কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্ধ থেকেছে এবং শুধু নিত্যব্যবহার্য পণ্য কেনার সংক্ষিপ্ত সময়ে দোকান পাটগুলোকে খোলা রাখা হয়েছে।
×