ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইএসের ধ্বংসযজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২৭ আগস্ট ২০১৫

আইএসের ধ্বংসযজ্ঞ

হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের পাশাপাশি ইতিহাস-ঐতিহ্য ধ্বংসে নেমেছে আইএস? গত কয়েক মাসে তারা ইরাকে তিন হাজার বছরের পুরনো শিল্পকর্ম ধ্বংস করেছে? কিছু শিল্পকর্ম বিক্রি করার অভিযোগও উঠেছে জঙ্গী এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে জঙ্গী মৌলবাদীরা একের পর এক প্রাচীন প্রতœতত্ত্ব, মহামূল্যবান নিদর্শন, সংগ্রহশালা ধ্বংস ও লুটপাট করে বিশ্ব ঐতিহ্যকে নিশ্চিহ্ন করে যাচ্ছে। জঙ্গীরা প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন এসব প্রতœসামগ্রী ধ্বংসই শুধু নয়; প্রচার করছে এসব মূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শন অনৈসলামিক। তারা ধর্মের দোহাই দিয়েই এই ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। গণমাধ্যমে এসব ধ্বংসলীলা প্রচার হওয়ায় বিশ্ববাসী উদ্বিগ্ন। ইরাকের মসুল এখন আইএসের মূল ঘাঁটি। গত মার্চ মাসে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গীরা ইরাকের নিমরুদ শহরে প্রাচীন আসিরীয় সভ্যতার নিদর্শন ধ্বংস করে। এই ঘটনার এক সপ্তাহ আগে জঙ্গীরা মসুল জাদুঘর গুঁড়িয়ে দেয়। জাদুঘরে খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকের পুরাকীর্তি ছিল। আসিরীয় সভ্যতার এক অনন্য রতœ এই শহর। প্রাচীনকালে ইরাক, সিরিয়া ও তুরস্কের অংশজুড়ে ছিল আসিরীয় সভ্যতার বিস্তার। ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে দজলা নদীর তীরে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার অন্যতম নিদর্শনের এই শহর। নিমরুদ হত্যাযজ্ঞের এক সপ্তাহ পর বিশ্ব ঐতিহ্য ইরাকের হাত্রা নগরীতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় আইএস জঙ্গীরা। এই নগরীটি ২ হাজার বছর আগে সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। ইরাকের আরেক প্রাচীন নগরী নিনেভেহও ধ্বংস করে দিয়েছে আইএস? অনেক বিখ্যাত প্রতœতাত্ত্বিকের মতে, এই নগরীটি ছিল ‘সভ্যতার অন্যতম সূতিকাগার’। এমন একটি নগরীকে ধ্বংস করায় জাতিসংঘও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে? জাতিসংঘের মতে, নিনেভেহ ধ্বংস করা যুদ্ধাপরাধের শামিল। নানা নামে পরিচিত জঙ্গীদের হাতে এর আগেও অনেক শিল্পকর্ম ধ্বংস হয়েছে? ২০০১ সালে আফগানিস্তানে অনেক বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করেছিল তালেবানরা? উল্লেখ্য, সে সময় আফগানিস্তানের তালেবান জঙ্গীরা দেশটির কাবুল জাদুঘরে রক্ষিত ৬০০০ প্রত্মসম্পদসহ বামিয়ানের বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি থেকে শুরু করে প্রাচীন ঐতিহ্য, নিদর্শন ধ্বংস করে। একইভাবে আইএসের জঙ্গীরাও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে। আইএসের ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে তালেবানের ধ্বংসযজ্ঞের তুলনা করছেন অনেকে? কারও কারও মতে আইএসের ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপকতা অনেক বেশি? আইএসের এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক মহলের কঠোর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে আসছে ইরাক? আইএস জঙ্গীরা মুছে দিচ্ছে প্রাচীন সভ্যতার চিহ্ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এডলফ হিটলারও হাজার হাজার বই-পুস্তক পুড়িয়ে দিয়েছিল। আসলে প্রাচীন সভ্যতা নিদর্শন ও তার ঐতিহ্য মানুষকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। যারা পশ্চাৎপদ তারা সামনে অগ্রসর হতে ভয় পায়, তাই তারা প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন ও সম্পদগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসী এসব ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা করে। বিশ্ব সভ্যতার স্বার্থে, বিশ্বশান্তির স্বার্থে বিশ্ববাসীকে দাঁড়াতে হবে এদের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে।
×