শংকর কুমার দে ॥ বিশ্বের সন্ত্রাস ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় নাম উঠে এসেছে বাংলাদেশের বিএনপি-জামায়াত জোটের পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাস। যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে চলমান সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনায় নাম উঠেছে বিএনপি-জামায়াত জোটেরও। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড পিস-এর (জিটিআই) ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচক’ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এই ধরনের তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বের ১২৪টি দেশের মধ্যে সন্ত্রাস ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অবস্থান ২৩ নম্বরে এবং ১৩টি দেশের ঝুঁকির তালিকার মধ্যে বাংলাদেশের নামটির স্থান করে দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড পিস-এর (জিডিআই) বার্ষিক প্রতিবেদনটির তথ্য উপাত্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করছে গোয়েন্দা সংস্থা।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড পিস (জিটিআই) তাদের প্রতিবদনে উল্লেখ করেছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩ সালের প্রায় পুরোটা সময় ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতা ও হানাহানি চলে। জামায়াত কর্মীরা একদিকে দেশজুড়ে নাশকতা চালায় এবং অন্যদিকে নির্বাচন ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি জোটের হরতাল অবরোধে সহিংসতায় বহু মানুষ হতাহত হয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাসে বহু নিরীহ নিরপরাধ মানুষের জীবন্ত দ্বগ্ধ হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড পিস মনে করছে, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা-নিপীড়নের পাশাপাশি নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, দলগত সমঝোতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব রয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর ২০১৩ সালের প্রথম দিক থেকে বড় ধরনের নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বিএনপি-জামায়াত জোট। আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের রায় ঘোষণার পর রায়ের বিরুদ্ধে তাদের হাতে পুলিশ, বিডিআরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৮ জন নিহত হয় এবং আহত হয় বহু সংখ্যক। বিএনপি-জামায়াত জোটের সশস্ত্র ক্যাডাররা থানায় হামলা, পুলিশের অস্ত্র লুট, কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা, গাছ কেটে রাস্তায় অবরোধ দিয়ে সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানোর ঘটনায় দেশ-বিদেশে সন্ত্রাসের তালিকায় বাংলাদেশের নাম উঠিয়ে ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণের চেষ্টা চালায়। বিএনপি-জামায়াত জোটের পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসের ঘটনা দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও ছড়িয়ে পড়ে।
জিটিআই-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৩ সালে ৫ দশমিক ২৫ স্কোর নিয়ে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১২৪টি দেশের তালিকার মধ্যে বাংলাদেশ ২৩ নম্বরে। ১০ স্কোর নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইরাক। যেখানে গতবছর জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের হাতে ৬ হাজার ৩৬২ জন নিহত হয়েছেন। ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড পিস (জিটিআই) বলছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কারণে গত বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরাকই।
জিটিআই-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, গতবছর বিশ্বে কেবল সন্ত্রাসের প্রাধান্যই বাড়েনি, এর বিস্তারও বেড়েছে। ২০১৩ সালে বিশ্বে সন্ত্রাসের বলি হয়েছে ১৮ হাজার মানুষ, যা আগের বছরের তুলনায় ৬১ শতাংশ বেশি। এই এক বছরে প্রায় ১০ হাজার সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে প্রাণহানি বেড়েছে ৬১%। জিটিআই সংস্থাটি মনে করছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটার অন্যতম কারণ হচ্ছে, দলগত ক্ষোভ ও ক্ষমতাধরদের দুর্নীতি সন্ত্রাস বৃদ্ধি। দারিদ্র্য, শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার হার কিংবা অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকের সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকা- বৃদ্ধির কোন যোগাযোগ খুঁজে পায়নি জিটিআই সংস্থাটি।
জিট্আিই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ বা সংঘাতে জড়িয়ে নেই এমন ১৩ দেশও রাজনৈতিক সহিংসতা ও দলগত বিদ্বেষের কারণে সন্ত্রাসী কর্মকা- বৃদ্ধির ঝুঁকিতে আছে। এই দেশগুলো হচ্ছে, অ্যাঙ্গোলা, বাংলাদেশ, বুরু-ি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, আইভরি কোস্ট, ইথিওপিয়া, ইরান, ইসরাইল, মালি, মেক্সিকো, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও উগা-া। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড পিস (জিডিআই) প্রতিবছরই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।