ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মাছ ধরার জাল

নিপুণ হাতে বোনা, চাহিদা বাড়ে বর্ষা এলে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৭ আগস্ট ২০১৫

নিপুণ হাতে বোনা, চাহিদা বাড়ে বর্ষা এলে

মোঃ খলিলুর রহমান ॥ মাছ বাঙালীর খুবই প্রিয়। এক সময় দেশের নদীনালায় পাওয়া যেত প্রচুর মাছ। আর এ কারণেই হয়ত প্রবাদ হয়ে যায় ‘মাছে-ভাতে বাঙালী’। মাছ ধরা অনেকের পেশা, অনেকের আবার নেশাও। মাছ ধরা কিন্তু অতটা সহজ না। এজন্য প্রয়োজন হয় নানা কৌশল। এই কৌশলের অন্যতম হলো জাল ফেলে মাছ ধরা। জালেরও রয়েছে রকমফের। মাছ ধরতে ঝাঁকি জালসহ বিভিন্ন প্রকার জালের ব্যবহার গ্রামীণ জীবনে মিশে আছে সেই অতীত কাল থেকে। নদীনালা ও খালবিলে দিন দিন মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঝাঁকি জালও যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। জাল তৈরি করা একটি নিপুণ কারুকাজ। নাইলন জাতীয় শক্ত সুতো দিয়ে বুনতে হয় জাল। ঝাঁকি জাল, ধর্ম জাল ও ঠেলা জালসহ নানা বাহারি নামের জাল ব্যবহার করা হয় মাছ ধরতে। বর্ষা মৌসুমে জালের চাহিদা বেড়ে যায়। কারণ বর্ষাকালে নদীনালা উপচে খাল-বিল ও পাড়া-মহল্লা পানিতে ভরে যায়। লোকজন বিভিন্ন হাটবাজার থেকে জাল কিনে মাছ শিকারের নেশায় মেতে ওঠে। একটি ঝাঁকি জাল মাত্র আট শ’ টাকায় কেনা যায়। একটু ভাল কিনতে গেলে পয়সা একটু বেশি গুনতে হয়। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন হাটে জালের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। তেমনি একটি হাট নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের কাইকারটেকের হাট। প্রতি রবিবার এই হাটে বিক্রি হয় বিভিন্ন ধরনের জাল। কেনা যায় পছন্দ মতো। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন জাল কিনতে আসেন এই হাটে। নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কল্যাণদি বাসস্ট্যান্ডের এনায়েতনগর গ্রামের জামান মোল্লা (৫৫) এই হাটে ৩৫ বছর ধরে জাল বিক্রি করেন। এ পেশা তার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। কাইকারটেক হাটসহ দেশের অনেক হাটেই তিনি বিক্রি করেন হাত ও মেশিনে বুনানো বিভিন্ন প্রকার জাল। কল্যাণদি বাসস্ট্যান্ডেও একটি জালের দোকান আছে তার। জামান জানান, ঝাঁকি জাল, ধর্ম জাল ও ঠেলা জালসহ নানা ধরনের জাল বিক্রি করেন তিনি। ঝাঁকি জাল সাধারণত হাতেই বুনানো হয়। এজন্য প্রয়োজন হয় নাইলনের সুতো, লোহার কাঠি ও রশি। একটি ঝাঁকি জাল তৈরি করতে এক মাসও লাগে। আবার ৭/৮ দিন একটানা কাজ করলেও একটি ঝাঁকি জাল বুনানো সম্ভব। তবে ইদানীং মেশিনেও ঝাঁকি জাল তৈরি করা হয়। তবে লোহার কাঠিগুলো হাতেই নিপুণভাবে বসাতে হয়। এজন্য দক্ষ কারিগর প্রয়োজন। দিতে হয় ধৈর্যের পরীক্ষা। তিনি জানান, চট্টগ্রামের পাহাড়ী ও বাঙালীরা নিপুণ হাতে জাল তৈরি করে। তাদের বুনানো জাল খুবই নিখুঁত, টেকসই। আর বগুড়ায় মেশিনেও তৈরি হয় জাল। জামান মোল্লা জানান, ৩৫ ছড়িসহ সাত হাত লম্বা একটি ঝাঁকি জাল এক হাজার ছয় শ’ টাকায়, ৪০ ছড়িসহ সাত হাত লম্বা জাল দুই হাজার দুই শ’ টাকায়, ৫০ ছড়িসহ ছয় হাত লম্বা জাল আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হয়। জামানের ছোট ভাই রবিউল ইসলাম (৪৫) ২৩ বছর ধরে জাল বিক্রি করেন। তিনি জানান, বড় আকৃতির একটি ঝাঁকি জাল আট হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। এতে চার কেজি লোহার কাঠি দিতে হয়। সুতা প্রয়োজন হয় প্রায় এক কেজি। আর সাত হাত লম্বা একটি জাল তৈরি করতে তিন কেজি লোহার কাঠি, আধা কেজি সুতা প্রয়োজন হয়। তিনি জানান, মেশিন দিয়েও বিভিন্ন প্রকার জাল তৈরি করা হয়। এতে সময় অনেক কম লাগে। তবে হাতে বুনানো জাল নিখুঁত হয় বেশি, বেশ শক্ত। টেকেও অনেকদিন। দিন দিন হাতে বুনানো জাল উঠে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
×