ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট

পোশাক শিল্পের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৭ আগস্ট ২০১৫

পোশাক শিল্পের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাতের উন্নয়নে সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন দেশটির ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতে রাষ্ট্রদূত তার দেশের এই অঙ্গীকারের কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পরে সাংবাদিকদের জানান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে তার দেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। আলোচনায় ‘জিএসপি’ শব্দটি উচ্চারিত না হলেও বার্নিকাট বলেছেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ‘রাজনৈতিক নয়’। প্রেস সচিব জানান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, শর্ত পূরণের জন্য বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়। বাংলাদেশে কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করে। ওই সুবিধা ফেরত পাওয়ার জন্য পরে বাংলাদেশকে ১৬টি শর্ত দেয়া হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ পূরণ করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনও দেয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ১২২টি দেশের পণ্যে জিএসপি সুবিধা নবায়ন করলেও ওই তালিকায় বাংলাদেশ আসেনি। এর প্রতিক্রিয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, শর্ত পূরণের পরও ‘রাজনৈতিক কারণে’ বাংলাদেশী পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। বৈঠকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ও বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়। প্রেস সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন বার্নিকাট। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ জাহাজ নির্মাণ ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পেও উন্নতি করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত বাংলাদেশীদের এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের প্রশংসা করেন। অন্যদিকে মানবজাতিকে সন্ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অস্ত্র উৎপাদন কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর খুনী রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের কথা হয়েছে বলে প্রেস সচিব জানান। তিনি বলেছেন, এ বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। এটা আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের দায়িত্ব পালনেও সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিরক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের বিভিন্ন দেশে সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি উল্লেখ করেন। বার্নিকাট বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যোগাযোগকে মূল ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে সাম্প্রতিক যোগাযোগ চুক্তির কথা বলেন। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের উপ-প্রধান ডেভিড মিল এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ইউএসএআইডি’র প্রধান ঢাকায় আসছেন ॥ যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) বর্তমান প্রধান আলফন্সো ল্যানহার্ডট চার দিনের সফরে আগামীকাল শুক্রবার ঢাকা আসছেন। বুধবার ঢাকায় আমেরিকান সেন্টার থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ইউএসএআইডি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রাথমিক সংস্থা যা বৈশ্বিক চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সহিষ্ণুতা এবং গণতান্ত্রিক সমাজে দেশগুলোর সম্ভাবনা অনুধাবন করতে বিশ্বব্যাপী একশ’রও বেশি দেশে কাজ করছে। ঢাকা সফরকালে ল্যানহার্ডট বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান অংশীদারিত্ব ও ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নয়নের লক্ষ্যে সহায়তা প্রসঙ্গে কথা বলতে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়াও তিনি কৃষি, পুষ্টি, বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ এবং শ্রমিক খাতে ইউএসএআইডি’র গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। ১৯৭১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে বাংলাদেশকে ছয়শ’ কোটি ডলারেরও বেশি উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করেছে। ২০১৪ সালে ইউএসএআইডি বাংলাদেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে বিশ কোটি ডলার প্রদান করেছে। ইউএসএআইডি বাংলাদেশে যে সকল কর্মসূচীতে সহায়তা প্রদান করে। সেসবের মধ্যে রয়েছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অনুশীলনের প্রসার, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুবিধাদির সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবার উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতি মোকাবেলা।
×