ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিজের সামর্থ্য জানা ছিল, কখনও আত্মবিশ্বাস হারাইনি

সবচেয়ে আনন্দের কঠিন জয় ॥ বোল্ট

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২৫ আগস্ট ২০১৫

সবচেয়ে আনন্দের কঠিন জয় ॥ বোল্ট

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বের দ্রুততম মানব হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব ধরেই রাখলেন জ্যামাইকার উসাইন বোল্ট। এবার সর্বকালের সবচেয়ে গতিধর এ স্প্রিন্টারের শীর্ষস্থান ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন অনেকেই। এর কারণ বোল্টের বর্তমান অবস্থান। চিতার ন্যায় ক্ষিপ্রতা এখন অনেকখানি কমে গেছে। ৭ বছর আগে বেজিংয়ের বিখ্যাত বার্ডস নেস্ট স্টেডিয়ামে ৯.৬৯ সেকেন্ড টাইমিং গড়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন। শুরুটা সেখান থেকেই, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনেকে ভেবেছিলেন শেষটাও হয়তো এখানেই হবে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল ফাইনালে ওঠার আগে সমস্যা আক্রান্ত হিট এবং সেমিফাইনালে অতি কষ্টে জয় পাওয়া দেখে। তবে নিজের মৌসুম সেরা টাইমিং গড়ে ৯.৭৯ সেকেন্ডে ১০ সেকেন্ডের ১০০ মিটার দূরত্বের ক্লাইম্যাক্স জিতে গেছেন আবার। ধরে রেখেছেন বিশ্বসেরার খেতাব। এর আগে অলিম্পিক ও বিশ্বএ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপসের মোট ৫ ফাইনালে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ব্যবধান ০.০১ সেকেন্ড এগিয়ে জিতেছেন। তাই ক্যারিয়ারের কঠিণতম জয় হিসেবে এটাকে নিজেই ঘোষণা দিলেন বোল্ট। ইনজুরির জন্য ৬ সপ্তাহ ছিলেন ট্র্যাকের বাইরে। তাই কমই দৌড়েছেন বোল্ট। ১০ সেকেন্ডের নিচে দৌড়েছেন মাত্র দুইবার। তার মৌসুম সেরা টাইমিং ছিল ৯.৮৭ সেকেন্ড। ফাইনালের মাত্র ২ ঘণ্টা আগে হওয়া সেমিতেও ৯.৯৬ সেকেন্ড টাইমিং নিয়ে উতরে যান। তবে জাস্টিন গ্যাটলিনের গেছে স্বর্ণ সময়। টানা ২৮ রেস জিতেছেন এবং সেমিতে ৯.৭৭ সেকেন্ড টাইমিং। মৌসুম সেরা ৯.৭৪ সেকেন্ড ছাড়াও এ বছর দুইবার তিনি ৯.৭৫ সেকেন্ড নিয়ে শেষ করেছেন ১০০ মিটার। কিন্তু ফাইনাল তো অন্য এক স্নায়ুচাপ। এ কারণে নিজের ওপর বিশ্বাস হারাননি বোল্ট। জয়ের পর তিনি বলেন, ‘যে কোন শীর্ষ এ্যাথলেটকে প্রশ্ন করে দেখুন তিনি যদি নিজেকে নিয়েই সন্দিহান থাকেন সেক্ষেত্রে আগেভাগেই পরাজিত হয়ে যান। আমি কখনও নিজেকে নিয়ে সন্দিহান ছিলাম না এবং নিজের সামর্থ্য আমি জানি। আমার যেটা প্রয়োজন ছিল সেটা হচ্ছে সবকিছু একত্রে করে ভালভাবে দৌড়ানো। আমি নিখুঁত ছিলাম না, কিন্তু যা চেয়েছিলাম তাই করতে পেরেছি।’ ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই নিষ্পত্তি হয়ে যায় বলে মুহূর্তের মধ্যেই যে কেউ উত্তেজনাকর এ ইভেন্টের আকর্ষণীয় অংশটা মিস করে ফেলতে পারেন। সেটাই হয়েছে রবিবার বোল্টের জয়ে। গ্যাটলিনের বিরুদ্ধে তার পরিসংখ্যান দাঁড়াল ৭-১। তবে এবারই সবচেয়ে কম ব্যবধানে হেরেছেন গ্যাটলিন। জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আগেই বোঝা যাচ্ছিল। একটা পলক মাত্র। বার্ডস নেস্টে রবিবার ১০০ মিটার স্প্রিন্টের ফাইনালে যে দর্শকরা একটা পলক ফেলেছেন তারাই বঞ্চিত হয়েছেন বোল্টের ০.০১ সেকেন্ড এগিয়ে থেকে শেষ লাইন ছোঁয়ার সময়টাকে। এত কম ব্যবধানে আগের কোন ফাইনালে জেতেননি এ জ্যামাইকান। এ বিষয়ে বোল্ট বলেন, ‘এটা অবশ্যই আমার ক্যারিয়ারের কঠিনতম রেস। আমি এ বছর অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে গেছি এবং জাস্টিন খুব ভাল দৌড়াচ্ছিলেন পুরো মৌসুমে। নিজের দ্রুততম টাইমিংটাও করেছিলেন। আমি অনেক বছর আগেই শিখেছি যে জাস্টিন যখন কোন চ্যাম্পিয়নশিপসে আসেন তখনই নতুন কিছু করে দেখান। এ কারণে আমি নিশ্চিত ছিলাম জিততে হলে আমার জীবনের সেরা দৌড়টাই দিতে হবে।’ শুধু এদিন জিতেছেন তাই নয়। তিনি বিশ্ব এ্যাথলেটিক্সে ব্যক্তিগতভাবে সর্বাধিক পাঁচটি সোনাজয়ী এ্যাথলেট এখন তিনি। ছাড়িয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কার্ল লুইস, মাইকেল জনসন ও এ্যালিসন ফেলিক্সকে। বিশ্ব আসরে সবমিলিয়ে পদক জয়েও পুরুষ এ্যাথলেটদের মধ্যে বোল্ট এখন সবার ওপরে। তিনি ৯ স্বর্ণ ও ২ রৌপ্যসহ ১১ পদক জিতেছেন, আর লুইস জিতেছিলেন ১০টি পদক। তবে এবার বিশ্ব আসরে জেতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সংগ্রাম করেছি অনেক এবং নিজের নৈপুণ্য পড়ে গিয়েছিল। সুতরাং ফাইনালে এভাবে নিজেকে ফিরে পাওয়া এবং জেতাটা অবশ্যই অনেক বড় বিষয়। কিন্তু যখন প্রতিযোগিতায় নামা হয় তখনই সেটা এক নম্বর আকাক্সিক্ষত লড়াই হয়ে ওঠে। আমি এখানে নিজের কিংবদন্তি মর্যাদাটা আরেকটু শাণিয়ে নিতে এসেছিলাম এবং সে জন্য দেশের হয়ে জিততে চেয়েছিলাম। চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নিজের উচ্চতা আরও বাড়াতে চেয়েছিলাম। সেটাই পেরেছি বলে খুশি।’
×