ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রদূত হওয়ার প্রস্তাব শ্রীলঙ্কা সরকারের, লঙ্কান রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সাবেক তারকা ক্রিকেটার ভক্তদের শুভেচ্ছা

লঙ্কান ক্রিকেটে সাঙ্গাকারা অধ্যায়ের সমাপ্তি

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২৫ আগস্ট ২০১৫

লঙ্কান ক্রিকেটে সাঙ্গাকারা অধ্যায়ের সমাপ্তি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কলম্বো টেস্ট খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন কুমার সাঙ্গাকারা। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হলো লঙ্কান ক্রিকেটের গৌরবজ্জ্বল এক অধ্যায়ের। দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে করেছেন রানের পর রান, হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি, দ্বীপদেশকে ভাসিয়েছেন আনন্দো বন্যায়, অনুজ্জ্বল বিদায় হলো সেই গ্রেটের। দল হারল বড় ব্যবধানে। নিজে করলেন মোটে ৩২ ও ১৮ রান। তাতে কি অনন্য সব অর্জন ম্লান হয়ে যায়? তাই তো পি সারা ওভালে প্রতিপক্ষ ভারত, স্থানীয় ভক্ত, লঙ্কান বোর্ড কর্তা, এমন কি দেশটির প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অকৃত্রিম শুভেচ্ছা পেলেন ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটিং-জিনিয়াস। উপস্থিত ছিলেন প্রিয় বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান। মাইক্রোফোনে শেষবারের মতো ‘বিদায়’ বলতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি আধুনিক ক্রিকেটে ভদ্রলোকের প্রতিমূর্ত সাঙ্গাকারা। ‘আজ আমাকে বিদায় জানাতে এখানে যারা হাজির হয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ আমার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, সম্মানীয় প্রেসিডেন্ট, সতীর্থ ক্রিকেটার এবং অবশ্যই লঙ্কান সমর্থকদের, যারা এই দীর্ঘ ভ্রমণে আমার সঙ্গে ছিলেন। যাদের ভালবাসায় আমি সাঙ্গাকারা হতে পেরেছি। ধন্যবাদ প্রতিপক্ষ ভারতীয় খেলোয়াড়দেরও।’ বলেন সাঙ্গাকারা। সুবক্তা হিসেবে পরিচিত সাঙ্গা তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে স্কুল জীবনের সহপাঠী-শিক্ষক থেকে শুরু করে মাঠের গ্রাউন্ডসম্যান, এমনকি সাধারণ শ্রমিককেও ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেননি। তিনি সত্যিকারার্থে কিংবদন্তি। আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতমসেরা ব্যাটসম্যান। কিন্তু জ্যাক ক্যালিস, স্টিভ ওয়াহ বা শচীন টেন্ডুলকরের মতো বর্ণাঢ্য বিদায় হলো না। দলের হার ও ব্যক্তিগত ব্যর্থতায় বিদায়টা রূপকথার হলো না দ্বীপদেশটির জনপ্রিয়তম ক্রিকেটারের। ক্যারিয়ারের শুরুটা যেমন অনাড়ম্বর, তেমনি শেষটাও থাকল মেঘে ঢাকা। দুটি ইনিংস বা একটি ম্যাচ দিয়ে সাঙ্গাকে বিচার করা যায় না। তাই তো বিদায়টা রূপকথার না হলেও রূপকথার ক্রিকেটজীবন তাতে ঢেকে যায়নি। পরিসংখ্যানেই তার অমরত্ব। গড়, সঙ্গে টেস্ট রানÑ দুটোতেই সর্বকালীন তালিকায় শেষ করলেন পাঁচ নম্বরে। ১৩৪ টেস্টে মোট রান ১২,৪০০। যে তালিকায় তার সামনে কেবল শচীন টেন্ডুলকর, রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস ও রাহুল দ্রাবিড়। জীবনের শেষ আট ইনিংসের ব্যর্থতা সত্ত্বেও গড় ৫৩.৭৮! আধুনিক সময়ে যে কোন ব্যাটসম্যানের চেয়ে এগিয়ে। এমনকি ৫৩.৭৮, ৫২.৮৮, ৫২.৩১ ও ৫১.৮৫ গড় নিয়ে তার পেছনে গ্রেট শচীন, রাহুল, লারা, পন্টিংরা! অন্তত ২০ টেস্ট ম্যাচ খেলা ব্যাটসম্যানের মাপকাঠি ধরা হলে সাঙ্গার চেয়ে বেশি গড় মাত্র তিনজনের। ৯৯.৯৪ গড় নিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে ডন ব্র্যাডম্যান। বাকিরা খুব কাছেÑ কেন ব্যারিংটন (৫৮.৬৭), ওয়ালি হ্যামন্ড (৫৮.৪৬), গ্যারি সোবার্স (৫৭.৭৮)। কুমার সাঙ্গাকারার এটাই আসল রেকর্ড। এমনকি উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হয়েও এমন কৃতিত্ব বিরল। বাংলাদেশে টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের মধ্য দিযে বন্ধু মাহেলা জয়াবর্ধনের সঙ্গে টি২০ থেকে এবং গত বিশ্বকাপে একইভাবে ওয়ানডে থেকে অবসর নেন সাঙ্গাকারা। টেস্ট ছাড়তে চেয়েছিলেন আগেই। কিন্তু লঙ্কান বোর্ড ও সতীর্থদের অনুরোধে কয়েকটা ম্যাচ খেলে গেলেন। আধুনিক সময়ে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের আইকন সাঙ্গাকে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। বিদায় বেলায় স্বশরীরে উপস্থিতি হয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান দেশটির সরকার প্রধান, ১৯৯৬Ñএর একমাত্র বিশ্বজয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গাসহ অনেকে। শ্রদ্ধা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিও। ‘সাঙ্গাকারা সত্যিকারের গ্রেট। তিনি ক্রিকেটের পাশাপাশি একজন দূত হিসেবেও অসাধারণ। আনিন্দসুন্দর ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কিপিংয়েও অসাধারণ। সাঙ্গা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবেন।’ বিবৃতিতে উল্লেখ করেন আইসিসির প্রদান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসন। ওদিকে অবসর জীবনে সাঙ্গাকারাকে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি মাইথ্রিপলা সিরিসেনা! তিনি বলেছেন, ইউকেতে সঙ্গার অনেক ভক্ত রয়েছেন, চাইলে তাকে সেখানে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার করা হবে।
×