ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরায় দুই ভূমিহীন নেতাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২৫ আগস্ট ২০১৫

সাতক্ষীরায় দুই ভূমিহীন নেতাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ কালিগঞ্জে দুই ভূমিহীন নেতা আশরাফ মীর (৫৬) ও ইসহাক পাড়কে (৫৫) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। এ সময় আরও কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। সোমবার সকালে চিংড়িখালি ভূমিহীন পল্লীতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আশরাফ মীরের বাড়ি কাশিবাটি গ্রামে এবং ইসহাক পাড়ের বাড়ি বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার এবং উদ্ধার করা হয় একটি পাইপ গান ও তিনটি তাজা বোমা। নিহতদের পরিবারের দাবি, ফেলে আসা জমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গেলে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন ও ভূমিহীন নেতা করিম পাড়ের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। অন্যদিকে আবুল হোসেন গ্রুপের দাবি, আশরাফ মীর ও তার সহযোগীরা অস্ত্র ও বোমা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালালে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। কালিগঞ্জ সার্কেলের এএসপি মনির হোসেন দু’জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে জনকণ্ঠকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। ভূমিহীন সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, ২০০৪ সাল থেকে কালিগঞ্জের বৈরাগীর চক-চিংড়িখালি ভূমিহীন পল্লীতে (৯০০ বিঘা সরকারী খাস জমি) ৪৪৬ ভূমিহীন পরিবার বসবাস করে আসছে। এখানেই বসবাস করত প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত আশরাফ মীর, ইসহাক পাড়সহ তার সহযোগীরা। প্রায় পাঁচ মাস আগে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে আশরাফ মীরসহ তার সঙ্গীরা এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়। এরপর থেকে মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর শেল্টারে জমি দখলের চেষ্টা নিয়ে বিরোধ চলতে থাকে। ভূমিহীন জনপদে বসবাসরত এ সকল ভূমিহীন নেতাকর্মীরা জামায়াতের রাজনীতি থেকে বিএনপি এবং পরে বিএনপি থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ভূমিহীন জনপদ নিয়ন্ত্রণ করছে বলে পরস্পরবিরোধী অভিযোগ রয়েছে। নিহত আশরাফ মীরের বিরুদ্ধে দুই ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। অপরদিকে ভূমিহীন আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেনের বিরুদ্ধেও ২০০৫ সালে বৈরাগীর চকে ভূমিহীন ছবিরন হত্যা ও ২০০৭ সালে কবীর সানা হত্যা মামলা রয়েছে। নিহত ইসহাক পাড়ের ছেলে ইসমাইল হোসেন (২৫) জনকণ্ঠকে বলেন, প্রায় পাঁচ মাস ধরে তারা এলাকা ছাড়া। সোমবার তারা তাদের অধিকার জানাতে এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রতিপক্ষ তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এ সময় তারা কুপিয়ে ও পিটিয়ে দু’জনকে হত্যা করে। নিহত আশরাফ মীরের পুত্রবধূ পারভীন আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আবুল হোসেনের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা তার শ্বশুর আশরাফ মীরসহ কয়েকজনকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। কাজী আলাউদ্দিন কলেজের প্রভাষক, নিহত ইসহাক পাড়ের ভাই নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আবুল হোসেনের নেতৃত্বে তার ভাই ও ভগ্নিপতি আশরাফ মীরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। বৈরাগীর চকে বসবাসরত করিমপাড়, আবুল হোসেন গ্রুপের লোকজন বলেন, সোমবার ভোরে কালিগঞ্জের কাজলা কাশিবাটি গ্রামের আশরাফ মীরের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ভূমিহীনদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে হামলা চালায়। এতে বাধা দিতে গিয়ে তাদের বোমায় আহত হন ভূমিহীন ফিরোজ, গফুর ও মনিসহ বেশ কয়েকজন। হামলাকারীরা সেখানে কমপক্ষে ৪০টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় স্থানীয় ভূমিহীন নেতা করিম পাড় ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেনসহ তাদের দলবল সংঘবদ্ধ হয়ে আশরাফ মীর, ইসহাক আলী ও আবু বকরকে ধরে বেধড়ক মারপিঠ করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশরাফ মীর ও ইসহাক পাড় মারা যায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈরাগীর চকের বাসিন্দা নেছার শেখের ছেলে রেজাউল ইসলাম, আব্দুল পাড়ের ছেলে মনিরুল ইসলাম, বরকতুল্লার ছেলে নূর হোসেন, জোনাব আলীর ছেলে আব্দুর রশীদ ও ভাঙানমারি গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে সেকেন্দার আলীকে পুলিশ আটক করেছে। কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ তৈয়বুর রহমান জানান, আশরাফ মীর ও ইসহাক পাড়কে সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে এলে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়। শারীরিক নির্যাতন ও অধিক রক্তক্ষরণের ফলে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে হাসপাতালে চিবিৎসাধীন আবু বক্কারের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তিনি জানান। সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি হামলায় আহত কলেজ ছাত্র হাবিব মীরের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তার মাথায় ও পায়ে কোপানো হয়েছে। কালিগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মনির হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আশরাফ মীর গ্রুপ ও করিম পাড় গ্রুপের মধ্যে বিরোধ ছিল। দখল পাল্টা দখল নিয়ে সোমবার এই সংঘর্ষ হয়। এতে আশরাফ মীর ও ইসহাক পাড়কে মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তারা হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
×