ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোন সঙ্কট নেই জনবল ও চিকিৎসা উপকরণের;###;রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত এ সেবা;###;অপারেশন, সিসিইউ, ডায়ালাইসিসে কোন টাকাই লাগে না ;###;৩ প্রকার ওষুধ বিনা পয়সায়

রোগীরা জানেনই না সরকারী হাসপাতালে কত সুলভে সব চিকিৎসা সম্ভব ॥ বিনামূল্যে স্

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৫ আগস্ট ২০১৫

রোগীরা জানেনই না সরকারী হাসপাতালে কত সুলভে সব চিকিৎসা সম্ভব ॥ বিনামূল্যে স্

নিখিল মানখিন ॥ জনবল ও চিকিৎসা উপকরণের সঙ্কট নেই সরকারী হাসপাতালে। রয়েছে মজবুত অবকাঠামো। নামমাত্র খরচে পাওয়া যায় উন্নত চিকিৎসাসেবা। কিন্তু সাধারণ মানুষের অনেকেই জানে না সরকারী হাসপাতালে কিভাবে, কি ধরনের চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়। এ নিয়ে অনেক সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, ঘটে যায় অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারী চিকিৎসা সুবিধার বিষয়ে ধারণা না থাকায় প্রাপ্য চিকিৎসাসেবা আদায় করে নিতে পারেন না অনেক রোগী। এ সুযোগে অনভিজ্ঞ রোগীদের কাছ থেকে বিনা টাকার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অর্থ আদায় করেন হাসপাতালের কিছু সংখ্যক অসাধু চক্র। এতে বিনা টাকার সরকারী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ, যা সরকারী ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে। অথচ দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের ব্যাপক উন্নয়ন আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সারাদেশে বিস্তারলাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিনামূল্যের সরকারী চিকিৎসাসেবা নিয়ে কোন ধরনের অবৈধ ব্যবসা, অনিয়ম ও দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারের আন্তরিকতার কমতি নেই। স্বাস্থ্যখাতে যুগান্তকারী সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য বিষয়ক সহস্রাব্দ অর্জনেও এদেশের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। প্রশংসিত হয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে। দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক। এমন মজবুত অবকাঠামোর ওপর দাাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাত্রার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ইত্যাদি উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। দেশের ৯৯ ভাগ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা। অনুর্ধ ৫ শিশুমৃত্যুর হার ১৯৯০ সালের তুলনায় ৭১ ভাগ কমে এমডিজি ৪ অর্জিত হয়েছে। গ্রাম এলাকার প্রতিদিনের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের সব পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সামিউল ইসলাম সাদি জনকণ্ঠকে জানান, দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের অবকাঠামো বিভাগীয় পর্যায় থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। কেন্দ্র থেকে নাড়া দিলে স্বল্প সময়েই সারাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের চিত্র পাওয়া সম্ভব। ইউনিয়ন পর্যায়ে ৩১টি হাসপাতালে মোট ৪৯০টি রোগী শয্যা রয়েছে। এ পর্যায়ে বিনা টাকায় নরমাল ডেলিভারি, মেডিসিন এবং সার্জারির সাধারণ সেবাসমূহ প্রদান করা হয়। উপজেলা পর্যায়ের ৪৬৫টি হাসপাতালে মোট রোগী শয্যার সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার ৩০১টি। এ পর্যায়ে বিনা টাকায় মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও প্রসূতিসেবা এবং বেসিক অর্থোপেডিক, চোখ, নাক-কান-গলা ও হৃদরোগের সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া ১৩২টি উপজেলা হাসপাতালে ২৪/৭ সমন্বিত প্রসূতিসেবা এবং সকল হাসপাতালে নবজাতক ও অপুষ্টিজনিত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। জেলা পর্যায়ের ৬৪টি হাসপাতালে মোট রোগী শয্যার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ৩০০টি। এ পর্যায়ে বিনা টাকায় মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও প্রসূতিসেবা এবং অর্থোপেডিক, চোখ, নাক-কান-গলা, হৃদরোগসেবা প্রদান করা হয়। বর্তমানে দেশে ২০টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চালু রয়েছে। বাকিগুলো নির্মাণাধীন। পর্যায়ে মোট রোগী শয্যার সংখ্যা ১২ হাজার ৫৭৩টি। এখানে সকল বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা, সিসিইউ ও আইসিইউ সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। ১৫টি বিশেষায়িত হাসপাতালে রোগীশয্যার সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৮৮৪টি। এসব হাসপাতালে সকল বিশেষায়িত সেবা প্রদান করা হয়। যক্ষ্মা ও ফুসফুসের রোগের চিকিৎসা দিতে সারাদেশের ১৩ হাসপাতালে রয়েছে প্রায় ৮১৬টি রোগীশয্যা এবং সংক্রামক ব্যাধি, কুষ্ঠ ও অন্যান্য রোগের জন্য ১৪টি হাসপাতালে ৬১৫টি রোগী শয্যা রয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে সারাদেশে রয়েছে ১২ হাজার ৫৮৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ১ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন সাব সেন্টার এবং রয়েছে ৮৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। দেশের সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সকল বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং ৭টি জেলা হাসপাতালে মোট ২০৯টি আইসিইউ বেড রয়েছে। সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহ এবং ১২টি জেলা হাসপাতালে সিসিইউ চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। ক্যান্সার রোগীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে । সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, নামমাত্র খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় সরকারী হাসপাতালে। অপারেশন, সিসিইউ, আইসিসিইউ ও ডায়ালাইসিস সেবার ক্ষেত্রে কোন টাকা নেয়া যাবে না। তবে বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে স্বল্প ফি নেয়া হয়। এক্ষেত্রেও সরকারী ফি বেসরকারী হাসপাতালের ফির তুলনায় অনেক গুণ কম। সরকারী হাসপাতালে করোনারি এনজিওগ্রামে ২ হাজার টাকা, সিটি স্ক্যানে ২ হাজার টাকা, এমআরআই ৩ হাজার টাকা, ইসিজি ৮০ টাকা, ইকোকার্ডিওগ্রাম ২০০ টাকা, এক্সরে ২০০ টাকা, আল্ট্রাসনোগ্রাম ৩০০ টাকা, কার্ডিয়াক ক্যাথ ২ হাজার টাকা, ইউরিন ৩০ টাকা এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন, টোটাল কাউন্ট করাতে লাগে মাত্র ১০০ টাকা। সকল হাসপাতালে ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। এই মুহূর্তে কোন ঘাটতি নেই। সরকারী ওষুধ ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সামিউল ইসলাম সাদি জনকণ্ঠকে জানান, জীবনরক্ষাকারী সব ধরনের ওষুধ সরকারীভাবে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহের ওষুধের চাহিদা এবং সেই অনুযায়ী ওষুধের সরবরাহ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর বরাবর ওষুধের তালিকা ও বাজেট পেশ করেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহের কর্মকর্তরা। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ওষুধসমূহ ক্রয় করে থাকেন। জীবনরক্ষাকারী কোন ওষুধ যাতে বাদ না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হয়। কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে কত প্রকারের ওষুধ লাগবে তা মূলত সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার পরিধির ওপর নির্ভর করে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের প্রয়োজন ও আবেদন অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে ৩০ প্রকারের ওষুধ। সেগুলো হলো-পেনিসিলিন ট্যাবলেট, ডক্সিসাইক্লিন ক্যাপসুল, এমোক্সিলিন ক্যাপসুল, এমোক্সিলিন সিরাপ ও এমোক্সিলিন পেডিয়াটিক ড্রপ, কোট্রাইমোক্সাজল ট্যাবলেট, মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট, এলবেনডাজল ট্যাবলেট, ক্লোরফেনারামিন ট্যাবলেট ও ক্লোরফেনারামিন সিরাপ, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও প্যারাসিটামল সিরাপ, এন্টাসিড ট্যাবলেট, হায়োসসিন এন বিউটাইল ব্রোমাইড ট্যাবলেট, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ট্যাবলেট, ফেরাস ফিউমারেট ও ফলিক এসিড ট্যাবলেট, ক্যালসিয়াম ল্যাকটেট ট্যাবলেট, জিঙ্ক ডিসপারসেবল ট্যাবলেট, সলবিউটামল সিরাপ. ক্লোরামফেনিকল আই অয়েন্টমেন্ট, নিওমাইসিন ও ব্যাসিট্রাসিন স্কিন অয়েন্টমেন্ট, বেনজয়েক ও স্যালিসাইলিক এ্যাসিড অয়েন্টমেন্ট, বেনজাইল বেনজয়েট এপ্লিকেশন, জেনশন ভালোলেট. ক্লোরহেক্সিডিন ও সেট্রিমাইড সলিউশন, ও.আর.এস এবং ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল। আরও রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি উপকরণ। বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ ॥ বেসরকারী হাসপাতালসমূহের চিকিৎসাসেবার খরচ অনেকটা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। প্রতিটি অপারেশনে ১০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা লাগে। প্রতিদিন সিসিইউ সেবা পেতে ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং আইসিইউ সেবা পেতে লাগে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। প্রতি সেশনে ডায়ালাইসিস করাতে খরচ হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। এভাবে করোনারি এনজিওগ্রামে ১৫ হাজার টাকা, সিটি স্ক্যানে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা, এমআরআই ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা, ইসিজি ৩০০ টাকা, ইকোকার্ডিওগ্রাম ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, এক্সরে ৫০০ টাকা, আল্ট্রাসনোগ্রাম ১ থেকে ৩ হাজার টাকা, কার্ডিয়াক ক্যাথ ১৫ হাজার টাকা, ইউরিন ২০০ টাকা এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন, টোটাল কাউন্ট করাতে লাগে মাত্র ৪৫০ টাকা। হাসপাতাল ভেদে সরকারী চিকিৎসাসেবা ॥ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা ফ্রি আর কম মূল্যে খোদ রাজধানীতেই পাওয়া যায়। সরকারী হাসপাতালগুলোতে ১০ টাকার টিকিট নিয়ে জরুরি এবং বহির্বিভাগের চিকিৎসকের সেবা নিতে পারেন যে কেউ। তবে বহির্বিভাগের ক্ষেত্রে দেয়া হয় ১০ টাকার টিকিটের সঙ্গে ফ্রি ওষুধ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে হতদরিদ্রদের সেবা দেয়া হয় বিনামূল্যে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা বিভিন্ন শ্রেণীভেদে হয়ে থাকে। হাসপাতালে অজ্ঞাত কোন রোগী ভর্তি হলে তারা সিটি স্ক্যানসহ যে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ওষুধ-পথ্য সবই ফ্রিতে পেয়ে থাকেন। এছাড়া হাসপাতালে সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ রয়েছে, যা বিনামূল্যে দেয়া হয়ে থাকে। খুব কম রোগীরই দু-একটি ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। প্রতি মাসে রেডিওলজি বিভাগে এক্সরের প্রায় ৫০ ভাগই ফ্রি করা হয়। আর সিটি স্ক্যানে ফ্রি হয় ১০ থেকে ২০ ভাগ। তবে হাসপাতালে কিছু অসাধু কর্মচারী রয়েছে, যারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফ্রি লিখিয়ে এনে রোগীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগেও গরিব রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যে হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। ক্যান্সার হাসপাতাল ॥ ক্যান্সার নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট এ্যান্ড হসপিটাল। এখানে চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি ক্যানসার বিষয়ে গবেষণা এবং উচ্চপর্যায়ের পাঠদান করা হয়। ৩০০ শয্যার এই হাসপাতালে রোগীদের ক্যান্সারের প্রায় সব ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়। বর্তমানে হাসপাতালটি ৩শ’ শয্যাবিশিষ্ট। এ বছরের মার্চ মাসে এটি ৩০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ক্যানসারের চিকিৎসা প্রধানত তিন ভাগে করা হয়- সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি। মস্তিষ্ক এবং ফুসফুস ছাড়া সব ধরনের সার্জারি করা হয়। ইনডোর এবং আউটডোর মিলিয়ে প্রায় ৫০০ জন রোগী প্রতিদিন সেবা নিতে পারেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রায় ৪০০ রোগীকে প্রতিদিন রেডিয়েশন দেয়া হয়। কেমোথেরাপির ক্ষেত্রে ১৫০ জন রোগীকে ডে-কেয়ার ভিত্তিতে আউটডোরে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ হাসপাতালের চারটি বিভাগ রয়েছে : ইনডোর, আউটডোর, পোস্ট অপারেটিভ ও ইমার্জেন্সি। আউটডোরে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসা দেয়া হয়। রোগী যদি দরিদ্র হন এবং জনপ্রতিনিধির সার্টিফিকেট দেখান, তখন বিশেষ বিবেচনায় যেকোন চিকিৎসা ফ্রি করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের স্ত্রী-সন্তানদের জন্য চারটি বেডসহ ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া সরকারী ও সামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসাও ফ্রি। ক্যান্সার হাসপাতালে শুরুতে ১০ টাকা দিয়ে প্রথমে টিকিট কাটতে হয়। শয্যা ভাড়া ২৮৫ টাকা। কেবিন ৭৫০ টাকা। এখানকার ৬০ শতাংশ শয্যা ভাড়া দেয়া হয়। বাকি ৪০ শতাংশ শয্যা বিনামূল্যে দরিদ্র রোগীদের জন্য রাখা হয়েছে। বিনামূল্যে চিকিৎসা করতে হলে পরিচালকের অনুমতি নিতে হয়। রেডিওথেরাপির মেশিন আছে দুটি। প্রদানের ক্ষেত্রে হাসপাতালটি অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে। ব্রেইন স্ট্রোক রোগীদের উন্নত চিকিৎসাদানে দেশের প্রথম অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে সরকার। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল’। নামমাত্র ফি দিয়ে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় এই প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে হাসপাতালে চালু আছে এক শ’ বেড। বহিঃবিভাগে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২.৩০ পর্যন্ত রোগী দেখা হচ্ছে। প্রত্যেক দিন ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী সেবা নিচ্ছে বহিঃবিভাগে। এ হাসপাতালে রোগীদের আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে এম. আর মেশিন, সিটি স্ক্যান, এনসিভিইএমজি মেশিন, নিউরো-ইনটার ভেনসনসহ আরও আধুনিক যন্ত্রপাতি। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ এম এস জহিরুল হক চৌধুরী জানান, ব্রেন এং মেরুদ-ে অপারেশনের গাইড লাইন, রোগী হাসপাতালের আসার সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোকজনিত রোগ নির্ণয় জন্য এম.আর মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে রোগী খরচ পড়বে তিন হাজার টাকা। এই এম.আর মেশিন উপমহাদেশে আছে মাত্র দুইটি। একটা বাংলাদেশে আর একটা ভারতে। অল্প খরচে সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে। খরচ পড়বে দুই হাজার টাকা। প্রাইভেট হাসপাতালে খরচ পড়ে সাত হাজার টাকা। নার্ভ এবং মাংসের রোগ নির্ণয় জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এনসিভিইএমজি মেশিন। যা খরচ পড়ছে সাত শ’ টাকা। ব্রেন স্ট্রোক, ব্রেইন টিউমার, মৃগী রোগ, মাথা ব্যথা, মাংস শুকিয়ে যাওয়া, মাথা আঘাত প্রভূতি চিকিৎসা হচ্ছে এই হাসপাতালে। জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ॥ জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেও ব্যবস্থা রয়েছে অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবার। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মোঃ রাশিদুল হাসান জনকণ্ঠকে জানান, বিনামূল্যে চিকিৎসার মাত্রাই বেশি। সরকারীভাবে নির্ধারিত কিছু সংখ্যক পরীক্ষায় নামমাত্র টাকা নেয়া হয়। এ হাসপাতালে বর্তমানে ৯৭ প্রকারের উন্নতমানের সরকারী ওষুধ বিনা টাকায় প্রদান করা হয়ে থাকে বলে জানান পরিচালক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নেয়া যায় মাত্র ২০০ টাকায়। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগীরা বিশেষজ্ঞ সেবা নিচ্ছেন। বিএসএমএমইউ হাসপাতালের রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচও অন্যান্য বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তুলনায় অনেক কম বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বিএসএমএমইউ হাসপাতালে বহির্বিভাগে মাত্র সাতটি বিভাগের চিকিৎসা দিয়ে শুরু হয় বৈকালিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা। রোগীর চাপ বাড়ার কারণে বাড়ানো হয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিভাগের সংখ্যাও। বর্তমানে ২১ বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ রোগী আসেন সেবা নিতে। মাত্র ২০০ টাকায় রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। এক মাস পর্যন্ত এক রোগী ২০০ টাকার টিকেট দিয়েই দেখাতে পারবেন। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ॥ পুরোদমে এগিয়ে চলছে স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম। সাধারণ মানুষকে এই সেবা প্রদান করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছে মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। গ্রাম এলাকার প্রতিদিনের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের সব পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হবে। দেশের ৬৪টি জেলা এবং ৪১৮টি উপজেলা হাসপাতালে ইতোমধ্যে একটি করে মোবাইল ফোন দেয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৮শ’টি স্বাস্থ্য প্রতিস্থান কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং জেলা সিভিল সার্জনের অফিসে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে চালু করা হয়েছে টেলিমেডিসিন সুবিধা। স্বাস্থ্যসেবায় থাকছে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম এবং কম্পিউটারাইজড অটোমেশন ব্যবস্থা। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে পারবে সাধারণ মানুষ। মোবাইল ফোনের নম্বর স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েব সাইটেও() নম্বরগুলো দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কোন না কোন চিকিৎসক এই মোবাইল ফোনের কল রিসিভ করবেন। একটি মাত্র কল করেই ব্যস্ত মানুষেরাও রোগের শুরুতেই পরামর্শ নিতে পারেন চিকিৎসকের। এতে রোগ জটিল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কমে যায়। এভাবে ঘরে বসেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া সম্ভব হবে। প্রতিটি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং জেলা সিভিল সার্জনের অফিসে ওয়েব ক্যামেরা প্রদান করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠান বা মতবিনিময় করাই এর মূল উদ্দেশ্য। এখন একটি বিশেষ সফটওয়্যার সংগ্রহ করা হয়েছে যা দিয়ে একই সঙ্গে ২৫ জন ভিডিও কনফারেন্সিং করা যাবে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে দেশে থ্রি জি টেলিফোন সেবা চালু হবে। ইতোমধ্যে ভিডিও ফোন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে চালু করা হয়েছে টেলিমেডিসিন সুবিধা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের ৮টি হাসপাতালে উন্নত ভিডিও কোয়ালিটির টেলিমেডিসিন সুবিধা স্থাপন করা হয়েছে। এর সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা আধুনিক মানের টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারবেন। ফলে নিম্ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীদের জন্য উচ্চ পর্যায়ের হাসপাতালসমূহে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়া সহজ হবে। রোগীদের ভ্রমণের প্রয়োজন ও ভোগান্তি কমবে বহুগুণ। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর ॥ পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পাশাপাশি মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমও বেশ সফলতা পেয়েছে। এ অধিদফতরের সেবা গ্রহণ করতে কোন ধরনের অর্থ ব্যয় করতে হয় না। ক্লিনিক্যাল পদ্ধতির বন্ধ্যাকরণ (টিউবেকটমি ও ভ্যাসেকটমি), আইইউডি ও ইমপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের জন্য অর্থ বৃদ্ধি করেছে সরকার। ক্লিনিক্যাল পদ্ধতির বন্ধ্যাকরণ (টিউবেকটমি ও ভ্যাসেকটমি) সেবা গ্রহীতার জন্য মজুরি ক্ষতিপূরণ ভাড়া ২৫০ টাকা থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা, খাদ্য ভাতা ১২৫ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ১২৫ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ সেবাগ্রহীতার ভাতা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বন্ধ্যাকরণ সেবাকেন্দ্রে বন্ধ্যাকরণ সেবা গ্রহণে ইচ্ছুক ক্লায়েন্ট নিয়ে উপস্থিত হলে গ্রহীতা প্রতি ক্লায়েন্ট আনয়নকারীর যাতায়াত ভাতা ১২৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২শ’ টাকা। গ্রহীতা প্রতি আনুষঙ্গিক খরচ (কেরোসিন, সাবান, স্টোভের সলতে, তোয়ালে ও লিনেন ধৌতকরণ) ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা। গ্রহীতা প্রতি অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসকের ফি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এভাবে গ্রহীতা প্রতি সার্জিক্যাল সহকারীর ফি ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, আয়ার ফি ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা, সুইপার ফি ১০ টাকা ১৫ টাকা, তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন তৈরিকারীর ফি ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা করা হয়েছে। এভাবে বাড়ানো হয়েছে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সহকারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সহকারী পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের ফি। একইভাবে আইইইডি কার্যক্রমের জন্যও অর্থ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। আইইউডি গ্রহীতার যাতায়াত খরচ ৫০ টাকা থেকে ১শ’ টাকা, ইনসারশন ফি ২০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, ক্লায়েন্ট আনয়নকারীর যাতায়াত ভাতা ২৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা, গ্রহীতা প্রতি আনুষঙ্গিক খরচ ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করা হয়েছে। আইইউডি ইনসারশনের পরবর্তী সময়ে আইইউডি গ্রহীতাকে ফলোআপ সেবা প্রদানের জন্য সেবাকেন্দ্রে আগমনের জন্য তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে ১৫০ টাকা। ইমপ্ল্যান্ট কার্যক্রমেও গ্রহীতা প্রতি ৩১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৪০ টাকা করা হয়েছে। প্রতি মাসে স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ কেন্দ্র ব্যতীত অপারেশন করার মতো উপযুক্ত পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দু’ বা ততোধিক বিশেষ বন্ধ্যাকরণ কার্যক্রমের আয়োজন করা যাবে। প্রতি কার্যক্রমে মালামাল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা করা হয়েছে। পদ্ধতি গ্রহণ পরবর্তী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া/জটিলতাজনিত কারণে মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন/সৎকার বাবদ আইনগত উত্তরাধিকারীকে এককালীন তাৎক্ষণিকভাবে ১০ হাজার টাকা দেয়া হবে। রিক্যানালাইজেশন কার্যক্রমের অর্থ ব্যয়ও দ্বিগুণ করা হয়েছে। রিক্যানালাইজেশন গ্রহীতার খাদ্য, মজুরি, ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি বাবদ ব্যয় ১৫শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার, সিট ভাড়া বাবদ ৩ হাজার টাকা, রিক্যানালাইজেশন সার্জন ফি ৪ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা, এনেসথেসিওলজিষ্ট ফি ২ হাজার টাকা, রিক্যানালাইজেশন সাহায্যকারী ফি ২ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা, ওটি চার্জ ২ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা, ড্রাগস এ্যান্ড এমএসআর ফি ২ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে।
×