ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ফের ভাঙ্গন

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৫ আগস্ট ২০১৫

পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ফের ভাঙ্গন

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আবারও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। রবিবার রাত এগারোটার দিকে আকস্মিক ভাঙ্গনে বিলীন হয় প্রায় ২শ’ মিটার দীর্ঘ এবং প্রায় ৫০ মিটার প্রস্থ এলাকা। এতে ইয়ার্ডের একটি জেটি, জেটিতে ওঠার রাস্তা এবং অস্থাযী কংক্রিট প্ল্যান্ট বিলীন হয়ে গেছে। তবে সোমবার সন্ধ্যায় বাঁশ ও বালুর বস্তাসহ নানাভাবে ভাঙ্গন ঠেকানো হয়েছে। এদিকে এই ভাঙ্গনের খবর শুনে জরুরি সফরে আসছেন পদ্মা সেতুর ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার। তিনি চীন থেকে মাওয়ার উদ্দেশে ইতোমধ্যেই রওনা হয়েছেন। মূল সেতু এলাকা থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার ভাটিতে লৌহজংয়ের কুমার ভোগের পদ্মা সেতুর কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের এই ভাঙ্গন প্রথম দেখা দেয় গত ২৭ জুন। সে সময় ১শ’ মিটার দীর্ঘ ও ৫০ মিটার প্রস্থ এলাকায় বিলীন হয়। এবার সে একই স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয় প্রায় দু’ মাস পর। তবে এবারের ভাঙ্গন আগের চেয়ে বেশি ভয়াবহ। অস্বাভাবিক তীব্র স্রোতের কারণেই এই ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। ভাঙ্গন রোধে বিপুল পরিমাণ বালুর বস্তা ফেলা হয় রাত থেকেই। সোমবার দিনভর বিপুল সংখ্যক দেশী বিদেশীরা এই ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পরে সন্ধ্যায় ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে। তবে নতুনভাবে ভাঙ্গনরোধে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাওয়া, কুমারভোগ ও শিমুলয়া এলাকায় পদ্মায় স্রোতের তীব্রতা এত বেশি যে প্রতি সেকেন্ডে স্রোতের গতি ৫ মিটার। অর্থ্যাৎ একটি কিছু ফেলা হলে এক সেকেন্ড তা ১৫ ফুট দূরে চলে যাচ্ছে। অসমে বন্যা এবং সেই পানি বের হওয়ার একমাত্র নদীপথ এটি। সে কারণেই এখানে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাই আগামী এক সপ্তাহ এই নৌ রুটে চলাচলও নিরাপদ নয়। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল জানান, উত্তাল এই পদ্মা ও অস্বাভাবিক স্রোতের ব্যাপারে যথাযথ নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পদ্মায় ভাঙ্গন রোধে ত্বরিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, মাঝে মাঝে আমাদের প্রাকৃতিক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পদ্মা সেতুর কাজ যথাযথভাবেই এগুচ্ছে। নাব্য সঙ্কট রোধে কাল থেকে ড্রেজিং ॥ এদিকে শিমুলয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটের নাব্য সঙ্কট রোধে কাল বুধবার থেকে পদ্মায় ড্রেজিং শুরু করবে। সোমবার সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম পর্যবেক্ষণ শেষে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১২ সদস্যের এই দলটি দিনভর লৌহজং টার্নিং পয়েন্টসহ নৌরুটটির গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করে। পর্যবেক্ষণ দলে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) আব্দুল মতিন, সিজিপিআইএস প্রতিনিধি মোঃ কামাল হোসেন, বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আইউব আলী, বিআইডব্লিউটিএর প্রকৌশলী (সিভিল) সাইদুর রহমান, বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মোঃ সুলতান উদ্দিন খান ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকেশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদেরসহ ১২ জন অংশ নেন। বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মোঃ সুলতান উদ্দিন খান এই তথ্য দিয়ে জানান, মঙ্গলবার পদ্মা সেতুর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি যৌথ জরিপ হবে। কি পরিমাণ বালু অপসারণ করা হবে তার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এরপরই বুধবার থেকে পদ্মা সেতুর কাজে চাইনীজদের ব্যবহৃত বড় আকারের ড্রেজারটি ব্যবহার করা হবে। তিনি মনে করেন, এই ড্রেজার ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত উক্ত নৌরুটের নাব্য ফিরে আসবে এবং ফেরি সার্ভিস স্বাভাবিক হবে।
×