ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জজ মিয়া ও ন্যায়বিচার

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৪ আগস্ট ২০১৫

জজ মিয়া ও ন্যায়বিচার

শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না- আপ্তবাক্যটিকে অসত্য প্রমাণ করতেই পারেন অর্বাচীনেরা। কিভাবে! ভাতের থালা নাড়াচাড়া না করে। শাক ও মাছ স্থির থাকবে নিজ নিজ স্থানে। কারণ উদরপূর্তির জন্য ব্যক্তির হাতের আঙ্গুল শাক মাখামাখি করবে না। কে তখন বুঝবে যে শাকের নিচে দিব্যি শুয়ে আছে একটা রান্না করা মাছ? সত্যও তেমনি। সত্যকেও ঢেকে রাখা যায়। সেক্ষেত্রে সেই সত্যের ওপর চাপাতে হবে কিছু একটা। তবে সত্যটা জানা যখন অত্যন্ত জরুরী, তখন অনুসন্ধান করে সত্য বের না করা নিশ্চয়ই অপরাধ। আর সত্যকে চাপা দেয়ার জন্য তার ওপর ধামা বসানোর অপচেষ্টা করা হলে তাকে মহাঅপরাধ না বলে উপায় থাকে কি? সত্য ও মিথ্যা পাশাপাশি অবস্থান করতেই পারে, করেও; একটির নিচে অন্যটি বা একটির কাঁধে আরেকটি। কিন্তু সত্য হলো সত্য, সে একদিন না একদিন সূর্যের মতো স্বচ্ছ আলো নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াবেই। প্রায় এক যুগ আগে এই রাজধানীতে এক ভয়ঙ্কর নৃশংস ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাটি ঘটানোর জন্য কুবুদ্ধি আঁটতে হয়েছিল; ইবলিশের কাছ থেকে মাথা আর মেফিস্টোফেলিসের কাছ থেকে ধড় ধার করে নিজেদের মহাশয়তান করে গড়ে তুলতে হয়েছিল। মানুষ মারা তো আর যেমন তেমন কম্ম নয়, জগতের সবচেয়ে কঠিন কাজ। এই কাজটি যারা হাসতে হাসতে করে তাদের কী আখ্যা দেয়া যায়? একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পেছনে যারা ছিল তারা কি মানুষ? মানুষের গর্ভে জন্ম নিলে আর মানুষের মতো চেহারা পেলেই মানুষ হওয়া যায় না। যাহোক, তৎকালীন সরকারের কর্তব্য ছিল ওই মহাঅন্যায়ের পেছনে কারা কলকাঠি নেড়েছিল, কারা হামলা চালিয়েছিল সব তথ্য খুঁজে বের করা। তারপর অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সে সরকার সেটা করেনি। তার বদলে জজ মিয়া নাটক অভিনীত হলো। এই নাটকের মধ্য দিয়ে সত্যকে শুধু হিমাগারে পাঠানোর বন্দোবস্তই নয়, নির্বাসনে পাঠানোর ছলচাতুরিই করা হলো। পাশাপাশি উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মতো ঘটনা ঘটল; গ্রেনেড হামলার ভিকটিম দলটির পক্ষ থেকেই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছেÑ এমন আজব কথাও বলা হলো। হায়রে কথামালার কথাকার! প্রায় এক যুগ পর সেই কথাকারেরা আজ আবার আজব কথার আওয়াজ তুলছে। এ কী কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে! সরকারে থাকলে একরকম কথা, আর সরকারের বাইরে থাকলে অন্যরকম! এই কি নীতি? একুশে আগস্টের ঘটনাকে ‘জঘন্য ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ হিসেবে অভিহিত করে তারা এখন ন্যায়বিচার দাবি করছে। সত্যি সেলুকাস, বিচিত্র এ দেশ! মহাঅন্যায়ের ন্যায়বিচার তারা সে কালেই করতে পারত। অথচ ওই পথে তারা যায়নি। যখন তদন্তের মধ্য দিয়ে তথ্যপ্রমাণের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের জোর চেষ্টা চলছে, তখন তারা তুলছে ন্যায়বিচারের দাবি। আসলে তাদের মূল বক্তব্য হচ্ছেÑ আমাদের লোকেদের কোন দোষ নেই। ওই মামলায় আমাদের দলের নেতাকে জড়ানো মানে আমাদের ওপর অবিচার। দেশের মানুষ আগে জজ মিয়ার নাটক দেখেছে; এখন শুনছে সেই নাটকের কুশীলবদের সংলাপ ও প্রলাপ। তবে এতে যে মানুষ বিভ্রান্ত হবে না, তা বলাই বাহুল্য। একদিন না একদিন সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। নৃশংস উপায়ে মানুষ মারার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা অবশ্যই দ-িত হবে।
×