ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এখন থেকে বিনামূল্যে গাজীপুরে সেবা দেবেন

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৪ আগস্ট ২০১৫

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এখন থেকে বিনামূল্যে গাজীপুরে সেবা দেবেন

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাজীপুর, ২৩ আগস্ট ॥ গাজীপুরবাসীকে এখন আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জন্য রাজধানীতে এসে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হবে না। গাজীপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজেই মিলবে এই বিশেষজ্ঞ সেবা। দেশবরেণ্য প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা মিলবে প্রতি সপ্তাহে একদিন করে ২২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেখানে বিনামূল্যে সেবা প্রদান করবেন। বেলা ১১টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত এই সেবা পাওয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিতে সম্মত হয়েছেন। এই উদ্যোগের ফলে গ্রামাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উšে§াচিত হলো। রবিবার এ সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে উপস্থিত হয়ে দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সপ্তাহে একদিন এই হাসপাতালে উপস্থিত থেকে দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে আশ্বস্ত করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। উন্নত বিশে^র বড় বড় হাসপাতালের মতো বিশেষায়িত এ হাসপাতাল থেকে সেবা পাবেন রোগীরা। যে সব চিকিৎসকের সেবা মিলবে তারা হলেনÑ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, জাতীয় অধ্যাপক ও গাইনী ও অবস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ শাহেলা খাতুন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নুরুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও নাক কান গলা (ইএনটি) বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত, সাবেক উপ-উপাচার্য ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ শহীদুল্লাহ, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ, নেফেরোালজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ রফিকুল আলম, হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব, অধ্যাপক ডাঃ ফরিদউদ্দিন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স পরিচালক ও অধ্যাপক ডাঃ কাজী দীন মোহাম্মদ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনী ও অবস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ ইফফাত আরা এবং ইএনটি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ আবু ইউসুফ ফকির, সিএমএইচ’র ইউরোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট মেজর জেনারেল ডাঃ হারুনুর রশীদ, কার্ডিওলজির অধ্যাপক ডাঃ লুৎফর রহমান ও অধ্যাপক ডাঃ আফজালুর রহমান, আর্থো সার্জারী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ আর আর কৈরী, বারডেম হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ মীর নজরুল ইসলাম, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ আলী হোসেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ গোলাম রাব্বানী এবং ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারী এ্যান্ড হসপিটালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ ইয়াকুব আলী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যে সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্বেচ্ছায় এ হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদানে সম্মত হয়েছেন, তারা প্রত্যেকে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান চিকিৎসক। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের সেবা নিতে রোগীরা ঢাকায় ছুটে আসেন। তারা এ হাসপাতালের চিকিৎসা দিবেন। এ হাসপাতাল থেকে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিতে রোগীরা এ হাসপাতালে আসবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মোহাম্মদ নাসিম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন অধ্যাপক ডাঃ শাহেলা খাতুন, অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক, অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নুরুল হক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান প্রমুখ। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের ১৮ নবেম্বর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতোসিরি মোহাম্মদ নজিব বিন তুন আবদুল রাজাক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোটবোন শেখ রেহানা যৌথভাবে এই হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। মালয়েশিয়ার সেবা সংস্থা কামপুলান পেরুতান জহর (কেপিজে) এই আধুনিক হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে। এটি পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, প্রয়োজন ছাড়া দেশের কোন হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কিনলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনের পূর্বে পুরনো মেশিন কেন নষ্ট হলোÑ তা খতিয়ে দেখতে হবে, যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। যন্ত্রপাতি ও এ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে এগুলো চালানোর জনবল আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারী নীতিমালা সম্পূর্ণ মেনে ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন কাজে গতিশীলতা আনতে সবাইকে সচেতন হওয়া আহ্বান জানান তিনি।
×