ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিংবদন্তি আর্থার মরিস আর নেই

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৩ আগস্ট ২০১৫

কিংবদন্তি আর্থার মরিস আর নেই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমালেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার আর্থার মরিস। স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বে খেলা দেশটির ইতিহাসের অন্যতমসেরা ওপেনার তিনি। একই সঙ্গে এতদিন মরিসই ছিলেন বেশি বয়সী অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট ক্রিকেটার। শনিবার মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর ২১৫ দিন। মরিস চলে যাওয়ায় ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে খেলা একমাত্র জীবিত ক্রিকেটার এখন নিল হার্ভে (৮৬ বছর ৩১৮ দিন)। ১৯৪৭ সালের এ্যাশেজ সিরিজে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ তিন সেঞ্চুরির পথে এ্যাডিলেডে ১২৪ রানে অপরাজিত থাকায় অসিরা তাকে ‘ইনভিঞ্চিবল’ বা ‘অপরাজেয় মরিস’ বলে ডাকতে শুরু করেন। পরের বছর জানুয়ারিতে মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ১০০ রান করে একাই টেস্ট ড্র করার কৃতিত্ব দেখান। ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ড এ্যাশেজে ব্যাট হাতে মরিস ছিলেন আরও দুর্বার। অসাধারণ সাফল্যে ভাস্বর ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে ব্র্যাডম্যানের সেই গোটা অস্ট্রেলিয়া দল পেয়েছিল ‘অপরাজেয়’ স্বীকৃতি। যেখানে কেবল ওপেনার হিসেবে নয়, ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে মরিসের নাম উচ্চারিত হয়। ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংলিশদের গুঁড়িয়ে দিয়ে পাঁচ টেস্টের এ্যাশেজ ৪-০তে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। ৬৯৬ রান করে সেই সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় তুলে নিয়েছিলেন মরিস। সিরিজে তার স্কোর ছিল ৩১, ৯, ১০৫, ৬২, ৫১, ৫৪*, ৬, ১৮২, ১৯৬ ও ০! ডনের অপরাজেয় দলের সেরা সদস্য অমোঘ সত্য মৃত্যুর কাছে পরাজয় বরণ করলেন, চলে গেলেন জীবন-নদীর ওপারে। ইতিহাসের অন্যতমসেরা ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে শোকাভিভূত অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনিং ব্যাটসম্যানের তালিকা করতে গেলে সবার আগেই চলে আসবেন আর্থার মরিস। মরিসকে নিজেদের বর্ণিল অতীতের সঙ্গে বর্তমান সময়ের দারুণ এক যোগসূত্র হিসেবে অভিহিত করে তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন সিএ’র পরিচালনা পর্ষদের প্রধান ওয়ালি এডওয়ার্ডস। অভিজাত ও পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ছিলেন সুপরিচিত। ১৯৪৬ সালের ২৯ নবেম্বর ব্রিসবেনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষিক্ত মরিস ১৯৫৫ সালের জুন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৪৬টি টেস্ট খেলেছে ৪৬.৪৮ গড়ে করেছেন ৩৫৩৩ রান। রয়েছে ১২টি সেঞ্চুরি ও সমানসংখ্যক হাফ সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ২০৬। মজার ব্যাপার, সমৃদ্ধ প্রথমশ্রেণীর ক্যারিয়ারেও তার সেঞ্চুরি এবং হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা সমান ৪৬টি! ১৬২ ম্যাচে ৫৩.৬৭ গড়ে রান ১২৬১৪, সর্বোচ্চ ২৯০। টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেলেন ১৯৫০-৫১-এ, এ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফরে কিংস্টনে ১৯৫৫ সালে ৩৪ বছর বয়সে শেষ টেস্টটি খেলে অবসর নেন মরিস। ইয়ান জনসনের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ও ৮২ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পাওয়া সেই ম্যাচে জীবনের শেষ ইনিংসে ৭ রান (প্রথম ইনিংস) করে আউট হয়েছিলেন। কিংবদন্তিতুল্য মরিসের ক্রিকেট জীবনের সেরা সময়টা অবশ্য আড়াল হয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে। ব্র্যাডম্যান-মরিসের সেই দলের একমাত্র জীবিত সদস্য হার্ভে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া সত্যিকারের এক কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে হারাল। আমার সৌভাগ্য যে ব্র্যাডম্যান ও মরিসের সঙ্গে খেলেছি। ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছিলাম।’
×