ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ছিন্নমূল, বখাটে ও মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল-বাপার প্রতিবেদন

অযত্ন অবহেলায় ওসমানী উদ্যান যেন ময়লা আবর্জনার ভাগাড়

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৩ আগস্ট ২০১৫

অযত্ন অবহেলায় ওসমানী উদ্যান যেন ময়লা আবর্জনার ভাগাড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অযত্ন-অবহেলায় দিন দিন জীর্ণ ও শ্রীহীন হয়ে পড়ছে রাজধানীর অন্যতম ওসমানী উদ্যান। বর্তমানে এ উদ্যানের অবস্থা এতই নাজুক যে উদ্যানের কোন বৈশিষ্ট্য এতে অবশিষ্ট নেই। কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। উদ্যানটি পরিণত হয়েছে ছিন্নমূল, ভবঘুরে, বখাটে ও মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে। যথাযথ তদারকির অভাবে উদ্যানটির সৌন্দর্য দিন দিন নষ্ট হয়ে পড়ছে। প্রাতঃভ্রমণকারীদের জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ একটি স্থানে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উদ্যানকে জনগণের উপযোগী রাখতে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। শনিবার পরিবেশ সংগঠন বাপা ওসমানী উদ্যান পরিদর্শন শেষে তাদের উপস্থাপিত প্রতিবেদনে উদ্যানের করুন চিত্র তুলে ধরে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয় ওসমানী উদ্যানটি চরম অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। উদ্যানের চারপাশ থেকে প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা এর ভেতরে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। উদ্যানের ভেতরে মস্তান চেহারার লোকজনের আধিপত্য অনেক বেশি। ভেতরে মহিলা, শিশু কর্ণার ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ভিত্তিক ১০টি চত্বর থাকলেও সম্পূর্ণ অবহেলিত, পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে এগুলো। এসব চত্বরে মস্তান চেহারার লোকজন সব সময় আড্ডা দেয়। নেশাগ্রস্ত ও ভবঘুরে মানুষদের চত্বরে সারাদিন ঘুমাতে বা ঝিমাতে দেখা যায়। অথচ এসব স্থানে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও বীরত্ব সূচক তথ্য লেখা ছিল। এখন তা অযতœ-অবহেলায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন। সরেজমিন পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে উদ্যানের ভেতরে একটি লেক থাকলেও এর পানি ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত অপরিষ্কার। পানিতে শেওলা জমে গেছে। লেকের পাড় হাঁস-মুরগির বিষ্ঠায় পরিপূর্ণ। যা থেকে সব সময় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। উদ্যানের ভেতরে একশ্রেণীর লোকজন হাঁস-মুরগি, ছাগলসহ পশুপালনের কাজ করছে। কিছু ক্ষমতাসীন ও মস্তান টাইপের লোকজন এ কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এতে বলা হয় উদ্যানের চারপাশ থেকে এর ভেতরে ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের সুইপাররা থাকলেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে না। তারা শুধু ফুটপাথ পরিষ্কার রাখছে। আগাছা বা ঘাস কাটার কোন কাজ উদ্যানের ভেতরে করা হচ্ছে না। অথচ উদ্যানের পরিচ্ছন্নতার জন্য রয়েছেন ৯ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী। সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় রয়েছেন ১২ জন নিরাপত্তা কর্মী। নগরীর ব্যস্ততম এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলিস্তানে একটু স্বস্তির জায়গা এই ওসমানী উদ্যান। এর ভেতরে রয়েছে সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রধান সেনাপতি মীর জুমলার কামানটি যা উদ্যানের শোভা বর্ধন করছে। এছাড়াও রয়েছে একটি লেক, মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারের বিভিন্ন ইতিহাস ঐতিহ্য সংবলিত ফলক এবং ব্যায়াম করার নানা আসবাবপত্র। সবকিছু সত্ত্বেও বর্তমানে কেউ এসে স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। চারদিক থেকে আসছে মাদকসহ বিভিন্ন নেশার দুর্গন্ধ। সরেজমিনে দেখা গেছে উদ্যানের প্রবেশ পথে বসানো ঐতিহাসিক কামানটির কোন পরিচিতি নেই। এর ভেতরে ঘাস নষ্ট হয়ে মাটি বের হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন ধরনের হকারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র রাখা আছে এর ভেতরে। উদ্যানের বাইরের ফুটপাথের দেয়াল ঘেঁষে আখ ব্যবসায়ীসহ অন্য ব্যবসায়ীরা মালামাল রাখার স্থানে পরিণত করেছে। সব স্থানেই অসংখ্য ময়লা ও আবর্জনায় ভরপুর।
×